মায়ের কবরে মাটি দিচ্ছেন তারেক রহমান
মায়ের কবরে মাটি দিচ্ছেন তারেক রহমান

দাফন সম্পন্ন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত খালেদা জিয়া

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার পর রাজধানীর জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
দাফনের সময় খালেদা জিয়ার কবরে নামেন বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নিজেই মাকে কবরে শায়িত করেন।

জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জানাজা শেষে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকাশোভিত মরদেহবাহী একটি গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার কফিন জিয়া উদ্যানের সামনে নেওয়া হয়। জিয়া উদ্যানের প্রবেশপথে খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী গাড়ি থামে। এরপর খালেদা জিয়ার কফিন কাঁধে করে সমাধিস্থলে নিয়ে যান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তখন তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা কফিনের ঠিক পেছনেই ছিলেন। কফিন জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ছিল।

জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে খালেদা জিয়াকে দাফন করার সময় তাঁর পরিবারের সদস্যরা। গতকাল জিয়া উদ্যানে

মরদেহ কবরে শায়িত করার পর প্রথম মাটি দেন তারেক রহমান। তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান। আরও ছিলেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জুবাইদা রহমানের বোন শাহিনা জামানসহ স্বজনেরা। খালেদা জিয়ার কবরের কিছু মাটি তাঁদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা সেই মাটি ছুঁয়ে দেন। পরে সেই মাটি কবরে দেওয়া হয়।

এরপর কবরে মাটি দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

তিন বাহিনীর প্রধানদের পর খালেদা জিয়ার কবরে মাটি দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। মাঝে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও কবরে মাটি দেন।

এর আগে খালেদা জিয়ার জানাজা জনতার মহাসমুদ্রে রূপ নেয়। জানাজায় অংশ নিতে গতকাল সকাল থেকেই দলে দলে মানুষ আসতে থাকেন জাতীয় সংসদ ভবন ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায়। দুপুরের আগেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

গার্ড অব অনার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দাফন শেষে সশস্ত্র বাহিনীর চৌকস সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করেন

দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

তারেক রহমানের পর খালেদা জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তিন বাহিনীর প্রধানদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সশস্ত্র বাহিনীর চৌকস সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।

গার্ড অব অনার দেওয়ার সময় খালেদা জিয়ার কবরের একটু দূরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারেক রহমান। তাঁদের পাশে ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অনেকে।

গার্ড অব অনার শেষে মোনাজাত করা হয়। এরপর তারেক রহমানের কাছে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।