রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। সোমবার, ২২ ডিসেম্বর
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। সোমবার, ২২ ডিসেম্বর

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের জন্য বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন অপরিহার্য: জোনায়েদ সাকি

গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের দিকে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, যারাই একে বানচাল করতে চেষ্টা করবে, তাদেরকে জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাইয়ের আদর্শে প্রতিহত করবে।

সোমবার শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, ময়মনসিংহে শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে লাশ পুড়িয়ে ফেলা ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দিয়ে শিশু আয়েশা আক্তারকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। এক বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ওসমান হাদিকে যারা হত্যা করেছে, তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে। পুরো জুলাইয়ে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার সব কটির বিচার করতে হবে।

নির্বাচন বানচালের তৎপরতা চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারকে এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কিংবা অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্নজনের ওপর হামলা করছে, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার, যারা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা আজকে অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী নেতৃত্বের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজটি করতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্টরা দিনের পর দিন পরিকল্পনা করছে, হামলা করছে, তারপর পালিয়েও যেতে পারছে। আমাদের রাষ্ট্র, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এখন পর্যন্ত জানে না হত্যাকারীরা দেশে আছে না বিদেশে আছে।

সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছিল? সরকারের কোন উপদেষ্টা ওখানে গিয়েছেন, কী দায়িত্ব পালন করেছেন—সেই জবাবদিহি সরকারকে করতে হবে। নাকি পতিত ফ্যাসিস্টরা যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছিল, আজকে তার বিপরীতে আরেক দল নতুন করে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে চায় এবং সেটাকে কি সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে? এক ফ্যাসিবাদের পরিবর্তে আরেক ফ্যাসিবাদের ধারা সেখানে জন্ম কিংবা তাদের উত্থানে সহায়তা করছে? আজকে এই প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষকে করতে হবে এবং আমাদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানে আমাদের শত-হাজারো ছাত্র যুব–তরুণ ভাইবোনেরা যারা রাজপথে রক্ত দিয়েছে, সেই রক্তের ঋণ আমাদের শরীরে আছে। আমরা গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে এই ন্যায়বিচার ও ইনসাফের রাজনৈতিক মতাদর্শকে বুঝেছিলাম।’

গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ওসমান হাদি হত্যা, দীপু চন্দ্র দাস হত্যা, আয়েশা আক্তার হত্যা—এসব হত্যার মাধ্যমে একটা গোষ্ঠী আমাদের সার্বভৌমত্বকে গ্রাস করতে চায়। পতিত ফ্যাসিস্টরা আবার পুনর্বাসিত হতে চায়। যারা পতিত ফ্যাসিস্টকে পুনর্বাসন করতে চায়, তারাই আমাদের নির্বাচনকে বারবার পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। আমাদের এটা পরিষ্কার হতে হবে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।  

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, দীপক কুমার রায়, আমজাদ হোসেন, অঞ্জন দাস, লুৎফুন্নাহার সুমনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আলিফ দেওয়ান, কেন্দ্রীয় পরামর্শক পরিষদের সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মো. খালেদ হোসাইন, বাংলাদেশ যুব ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক জাহিদ সুজন।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা, সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুমন, আবু রায়হান খান, কেন্দ্রীয় পরামর্শক পরিষদের সদস্য সৈকত মল্লিক, ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগঠক রতন তালুকদার, ইয়াসিন ব্যাপারী, দক্ষিণখান থানার সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান, রূপনগর থানার সদস্যসচিব নাজমুল ইসলাম তুরাবসহ জিএসএর কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের নেতারা।