
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে কোনো বাধা দেখছেন না তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার পর রোববার রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মাহফুজ আলম।
তারেক রহমানের দেশে ফিরতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তো বেসিক (নিয়মিত) কাজ রাষ্ট্রের; রাষ্ট্র এটা কেন করবে না?’
তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে কোনো ধরনের বাধা আছে কি না—এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমাদের সরকারের দিক থেকে আমরা মনে করি না কোনো কিছু আছে। বরং আমরা তো চাই যে বাংলাদেশে এই যে ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনটা (গণতান্ত্রিক উত্তরণ), এটা যাতে খুবই স্মুথ (সহজভাবে) হয়। কারণ, এত মানুষ রক্ত দিয়েছে। শুধু জুলাইতে নয়, এর আগে ১৫ বছর ধরে কয়েক হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। ফলে আমাদের এখন একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন দরকার এবং এ ক্ষেত্রে যত রকমের চেষ্টা সরকার করবে।’
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন ওনার (খালেদা জিয়ার) ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে যেটা মনে হচ্ছে, একটু স্থিতিশীল। সামনে আরও ভালো হওয়ার ওনারা আশা রাখতেছেন।’
সবাইকে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করার আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা যাতে এই নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেটা ঘটতেছে বাংলাদেশে, এই সময়টাতে ওনাকে (খালেদা জিয়া) পাই। উনি (খালেদা জিয়া) যাতে থাকেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশে একটা স্মুথ ট্রানজিশন (সহজ উত্তরণ) হবে এবং উনি এটা দেখে যেতে পারবেন। ওনার যে স্যাক্রিফাইস (ত্যাগ), সেটার ফসল উনি দেখে যেতে পারবেন।’
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে হাসপাতালে আসেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই–সংগ্রাম করেছি। সেই নেত্রী গুরুতর অসুস্থ থাকায় আমরা ওনাকে দেখতে আজকে উপস্থিত হয়েছিলাম।’ এ সময় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।
এদিকে রাত আটটার দিকে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ ও শহিদুল ইসলাম ফাহিম, সহসভাপতি মুহাম্মদ জাহিদুর রহমান, সৈয়দ মো. ইব্রাহিম রওনক প্রমুখ।
এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে হাসপাতালে যান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আসলে আমি আজকে এখানে এসেছি ওনার (খালেদা জিয়া) খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। অল্প করে ডক্টরের (চিকিৎসক) সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমার একটা মেসেজই (বার্তা) থাকবে সবার কাছে—এই বিষয়টাকে কেউই পলিটিক্যালি (রাজনৈতিকভাবে) যেন না দেখেন। সবাই ওনার জন্য দোয়া করুন, যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।’
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত রোববার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি এখন হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে। গত শুক্রবার রাতে তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বিএনপির নেতারা।