‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে
‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে

নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতেই হবে, কোনো বিকল্প নেই: জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন যদি না হয়, আবার আমাদের সবাইকে আগের চেয়ে ভয়ংকর অবস্থায় যেতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে মতিউর রহমান আকন্দ এ কথাগুলো বলেন।

‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শিরোনামে এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।

বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন মতিউর রহমান আকন্দ। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা দলীয় পরিচয় নিয়ে জিতেছেন কি না, জানি না। তবে যাঁরা হেরে গেছেন, তাঁরা দলীয় পরিচয় নিয়ে নির্বাচন করেছেন। জাকসু নির্বাচনেও ২৫টি পদের মধ্যে ২১টিতে বিজয় লাভ করল একটি সংগঠন। এখানে প্রায় ৬০ হাজার ছাত্রের মতামতের প্রতিফলন হয়েছে। সুতরাং আমরা কি এখনো বসে থাকব? প্রতিটি জরিপে তিন মাস আগে এক রকম ছিল, এখন আরেক রকম। ঐকমত্য কমিশনের বক্তব্য যখন জনগণের কাছে যাবে, আরেকটু হবে। এ জন্য আমি বলছি, মেহেরবানি করে “প্লিজ কাম, আমরা একটা পয়েন্টে আসি।”’

সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোকে গো ধরে না থাকার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের অতীতের সব গো ধরা কিছুকে বাদ দিয়ে সাংবিধানিক বৈধতা দিয়ে, অবশ্যই রেফারেন্ডমের আয়োজন করার অতীত রেফারেন্স আছে, সেটার ভিত্তিতে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক এবং আইনি ভিত্তি দিয়ে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তাহলে দেশ বাঁচবে, রাজনীতি বাঁচবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা বাঁচবেন।’

রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া অতীতে কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি উল্লেখ করে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘১৯৯১ সালে আমরা সবাই রাজনৈতিকভাবে একমত হয়েছিলাম। কিন্তু যে ব্যবস্থার ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম, সেটা আমরা ইন্ট্রোডিউস করতে পারিনি। ওই সময় জনগণের ঐকমত্যের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যদি সেটা প্রথমেই ইন্ট্রোডিউস করে নেওয়া যেত, তাহলে আর এই সংকট আসত না। আমি মনে করি, আমরা রাজনীতিবিদেরা জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছি। কারণ, রাজনীতিবদেরা যা বলেন, তা করেন না। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তাঁরা এক বক্তব্য দেন আর ক্ষমতায় যাওয়ার পর আরেক। আজকে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। এই জোর করে থাকার প্রবণতা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, তার ভুক্তভোগী বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক নেতা ও দল।’

‘সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে’

রাজনৈতিক নেতাদের সচেতন থাকতে হবে উল্লেখ করে প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে জামায়াতের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘জনগণের প্রতিশোধ কিন্তু নির্মম, ২০২৪ সালে জনগণ নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছে। যিনি গর্ব করতেন “আই এম ডটার অব দ্য ফাদার অব দ্য নেশন”, এই দেশ তিনি ছাড়বেন না, তিনি চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৫, ৫৬, ৫৮, ৫৮, ৫৯ এবং ৬৫ থেকে ৯২ পর্যন্ত সব ধারা অকার্যকর হয়ে গেছে। সুতরাং সংবিধান তো অকার্যকর হয়েই গেছে। এই অবস্থায় ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি ও জনগণের অভিব্যক্তি হিসেবেই অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।’

এই নেতা বলেন, ‘এখন আমরা একটা নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছি যে কী পদ্ধতিতে সংস্কার বাস্তবায়ন হবে। এই পদ্ধতির বহু দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে আছে। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতারা যদি দলীয় স্বার্থে অথবা আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে কোন কোন ধারা অবলম্বন করব, সেটাকে বিবেচনায় রাখি, সমস্যার কোনো দিন সমাধান হবে না। জাতির জন্য প্রয়োজন কোনটি, সেটাকে আমাদের সামনে রাখতে হবে। স্বৈরাচার তৈরি করে বিদ্যমান ব্যবস্থা। তাই এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমি মনে করি, যাদের ওপর ক্ষমা অর্পিত হয় তাদের জাতির ক্রান্তিলগ্নে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়।’

মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে হতেই হবে। কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন যদি না হয়, আবার আমাদের সবাইকে আগের চেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থায় যেতে হবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই দেশ আমাদের। এই দেশের জনগণ আমাদের ম্যান্ডেট দিয়ে আন্দোলন–সংগ্রাম করে দায়িত্ব দিয়েছে। হেজিটেশন কিসের? যদি বারবার আমাদের সংবিধান সংশোধন করতে হয়, বারবার করতে থাকব। কিন্তু একটি ছিদ্রপথের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার অভিপ্রায় যেন আমাদের এই দেশের সবকিছুকে ধ্বংস কারণ না হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সব রাজনৈতিক দলকে জনগণের সেন্টিমেন্ট দেখা উচিত।’

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন উপস্থিত বৈঠকে বক্তব্য দেন। আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি সংস্থা পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।