ইতিহাস

আসাদিয়া মাদরাসা: আইয়ুবি যুগে শিক্ষা বিপ্লবের ঠিকানা

দামেস্ক ছিল মধ্যযুগীয় ইসলামি সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু। সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবির উত্থানের পর দামেস্কে একটি বড় আকারের শিক্ষা বিপ্লব ঘটে, যেখানে অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই মাদরাসাগুলির মধ্যে ‘আসাদিয়া মাদরাসা’ ছিল অন্যতম, যা কেবল একটি শিক্ষালয় নয়, বরং হানাফি ও শাফেয়ি—দুই প্রধান মাজহাবের আইন ও ধর্মতত্ত্ব চর্চার এক মিলনক্ষেত্র হিসেবে কাজ করেছিল।

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠার পটভূমি

আসাদিয়া মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন আসাদ উদ্দিন শিরকুহ ইবন সাজি। তিনি ছিলেন মুসলিম ইতিহাসের এক কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব, যিনি মিশর বিজয়ে এবং সালাহুদ্দিন আইয়ুবির উত্থানে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন সালাহুদ্দিন আইয়ুবির মামা এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা।

ইবনুল ওয়ায্যানের মতো শিক্ষকের দীর্ঘ শিক্ষকতা এবং ইবনে শায়েরের আগমন থেকে বোঝা যায় যে, মাদরাসাটি ষষ্ঠ হিজরি শতকের মাঝামাঝি (প্রায় ১১৬৪ খ্রিষ্টাব্দের আশেপাশে) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আসাদ উদ্দিনের মৃত্যুর পরই মাদরাসাটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এটি দামেস্কের পুরাতন শহরের শারফ আল-কিবলী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।

আসাদ উদ্দিন শিরকুহের মূল উদ্দেশ্য ছিল সুন্নি ইসলামি আদর্শকে শক্তিশালী করা। বিশেষ করে তিনি হানাফি মাজহাবের প্রচার ও প্রসারের জন্য এই মাদরাসাটি নির্মাণ শুরু করেন।

প্রতিষ্ঠাতার উদ্দেশ্য

আসাদ উদ্দিন শিরকুহের মূল উদ্দেশ্য ছিল সুন্নি ইসলামি আদর্শকে শক্তিশালী করা। বিশেষ করে তিনি হানাফি মাজহাবের প্রচার ও প্রসারের জন্য এই মাদরাসাটি নির্মাণ শুরু করেন, যদিও এটি পরে শাফেয়ি মাজহাবের জন্যও ব্যবহৃত হয়। (সালাহুদ্দিন আইয়ুবি এবং তাঁর পূর্বসূরি নুর উদ্দিন জানকি উভয়ে শিয়া (ফাতেমি) প্রভাবকে প্রতিহত করতে সুন্নি মাদরাসা নির্মাণে জোর দিয়েছিলেন)।

তাঁর ইচ্ছা ছিল ধর্মীয় জ্ঞান ও ফিক্‌হ শাস্ত্রের সঠিক চর্চা নিশ্চিত করা, যা সমাজের জন্য পথনির্দেশক হবে। ওয়াকফভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে, এর স্থায়িত্ব ও পরিচালনা নিশ্চিত হতো সেই সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় দ্বারা, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্থিরতা থেকে রক্ষা করত।

“জ্ঞানীগণ হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীরা স্বর্ণ-রৌপ্য উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যান না, বরং তাঁরা জ্ঞানের উত্তরাধিকারী রেখে যান।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩১২) জ্ঞান অর্জনের এই গুরুত্বের ভিত্তিতেই আসাদ উদ্দিন মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়।

শিক্ষাব্যবস্থা ও মাজহাবি সমন্বয়

মাদরাসার সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল এর দ্বৈত শিক্ষাব্যবস্থা।

পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু: ফিকহ ছিল প্রধান বিষয়। হানাফি ফিকহ এবং শাফেয়ি ফিকহ উভয়ই পৃথকভাবে পড়ানো হতো। এছাড়া, হাদিস, কোরআনের তাফসির, আরবি ভাষা (ব্যকরণ ও সাহিত্য), এবং উসুল আল-ফিকহ (আইনের মূলনীতি) শিক্ষা দেওয়া হতো।

সহাবস্থান ও বিতর্ক: একই প্রতিষ্ঠানে দুই মাজহাবের পণ্ডিতদের সহাবস্থান শিক্ষার্থীদেরকে তুলনামূলক ফিকহ (আল-ফিকহ আল-মুকারান) শেখার সুযোগ দিত। দরস বা বক্তৃতার পাশাপাশি মুনাযারা (পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিতর্ক) ছিল শিক্ষাপদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ছাত্রদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা তৈরি করত। (ইবনে শাদ্দাদ, আল-আ'লাক আল-খাতিরাহ, ১/২১০, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০৪)

ফলে এখানে একজন শিক্ষার্থী কেবল নিজের মাজহাবের গভীর জ্ঞান অর্জন করত না, বরং অন্য মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিতর্ক সম্পর্কেও অবগত হতো। এটি পণ্ডিতদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং ব্যাপক ফিকহি অন্তর্দৃষ্টি তৈরি করতে সহায়ক ছিল।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর প্রচারিত মাজহাব যুক্তি ও কিয়াসকে (তুলনামূলক বিশ্লেষণ) গুরুত্ব দেওয়ায়, এখানকার শিক্ষকরাও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন।

মাদরাসার এই পরিবেশ জ্ঞানের এক বহুমাত্রিক কেন্দ্র তৈরি করেছিল, যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উভয়েই সমৃদ্ধ হতো। শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল মূলত দরস বা বক্তৃতানির্ভর, যেখানে শিক্ষক একটি নির্দিষ্ট গ্রন্থ থেকে পাঠদান করতেন এবং ছাত্ররা প্রশ্ন-উত্তর ও আলোচনার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করত। এই আলোচনা সভাগুলো প্রায়শই জ্ঞানগত বিতর্কে রূপ নিত, যা ছাত্রদের বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে শাণিত করত। (আবু শামাহ, কিতাবুর রওদাতাইন, ২/৪১, দারুল জিল, বৈরুত, ১৯৯৭)

শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল মূলত দরস বা বক্তৃতানির্ভর, যেখানে শিক্ষক একটি নির্দিষ্ট গ্রন্থ থেকে পাঠদান করতেন এবং ছাত্ররা প্রশ্ন-উত্তর ও আলোচনার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করত।

খ্যাতিমান শিক্ষক ও শিক্ষাপরম্পরা

আসাদিয়া মাদরাসা বহু প্রথিতযশা শিক্ষক তৈরি করেছে।

শেখ তাজ উদ্দিন ইবনুল ওয়ায্যান: তিনি ছিলেন মাদরাসার প্রথম দিককার হানাফি মাজহাবের শিক্ষকদের একজন। তিনি অত্যন্ত দীর্ঘজীবী ছিলেন এবং নব্বই বছরেরও বেশি বয়স পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করেন। তাঁর জ্ঞান ও দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবন এই মাদরাসার শিক্ষাপরম্পরাকে দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছিল। ইবনুল ওয়ায্যান ৬৪৫ হিজরিতে (খ্রিষ্টাব্দ ১২৪৭/১২৪৮) ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাজ উদ্দিন ইবনুন নাজ্জার।

সাদির উদ্দিন আহমদ ইবনুল কাসি: একজন প্রভাবশালী শিক্ষক; তাঁর ছেলে নজম উদ্দিন আইয়ুব তাঁর পরে শিক্ষকতা চালিয়ে যান, যা শিক্ষাপরম্পরার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল।

নজম উদ্দিন আইয়ুব: সাদির উদ্দিন ইবনুল কাসির সুযোগ্য পুত্র নজম উদ্দিন আইয়ুব তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। ইবন শাদ্দাদের বিবরণ লেখার সময় পর্যন্ত তিনি শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। এটি একটি পারিবারিক ঐতিহ্য তৈরি করেছিল, যেখানে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জ্ঞানের মশাল বহন করে চলত।

আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সা’দিল্লাহ: বাগদাদের পণ্ডিত, কায়রোর বাসিন্দা। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবন সা’দিল্লাহ যিনি আবু মুহাম্মদ আল-বাজালি আল-হারিরি আল-বাগদাদি নামে পরিচিত। তাকে ‘ইবন শায়ের’ ডাকা হত। তিনি বাগদাদ থেকে দামেস্কে আসেন এবং আসাদিয়াতে শিক্ষকতা করেন।

তিনি হাদিস ও ফিকহ উভয় শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন এবং সমাজে ব্যাপক সম্মান লাভ করেন। তিনি বহু প্রবীণ আলেমদের কাছ থেকে হাদিস শ্রবণ করেছিলেন, যেমন: ইবনুল হুসাইন, আবুল মাওয়াহিব ইবনে মুলুক এবং কাজি আবু বকর। (আল-আসাদি, তারিখু দিমাশক, ২৯/২৪২, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ১৯৯৯)

তিনি দামেস্কে আবুল মাকারিম ইবনে হিলাল ও হাফেজ ইবনে আসাকিরের কাছ থেকেও হাদিস শুনেছিলেন। হাদিসশাস্ত্রের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি মাদরাসার কিবলার দিকের অংশে শিক্ষকতা করতেন। তিনি হানাফি মাজহাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ৭২ বছর বয়সে কায়রোতে তাঁর ইন্তেকাল হয়।

মাদরাসার প্রশাসন 

মাদরাসার প্রভাব সমাজে সুদূরপ্রসারী ছিল। মাদরাসাটি শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত থাকায়, সমাজের উচ্চ ও নিম্ন সকল স্তরের মানুষ সহজেই এর থেকে জ্ঞান আহরণের সুযোগ পেত। যা এটিকে জনশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র করে তুলেছিল। (সালাহুদ্দিন আল-সাফাদি, আল-ওয়াফি বিল ওয়াফিয়াত, ৭/৩৮, দার ইহয়াউ তুরাসিল আরাবি, বৈরুত, ২০০)

মাদরাসার সুষ্ঠু পরিচালনার পেছনে ওয়াকফ ব্যবস্থার ভূমিকা ছিল কেন্দ্রীয়। ওয়াকফের আয় থেকে শিক্ষকদের বেতন, ছাত্রদের বৃত্তি এবং প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করা হতো। এই ব্যবস্থা মাদরাসার দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করত।

ওয়াকফ শুধুমাত্র আর্থিক নিশ্চয়তা দিত না, বরং মাদরাসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করত। ওয়াকফ দলিলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বইপত্র সংগ্রহ এবং প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণের বিস্তারিত নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ থাকত।

আসাদিয়ার আলেমগণ প্রায়শই প্রধান বিচারপতি (কাজি), মুফতি এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত হতেন। এই কারণে মাদরাসাটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখত।

সামাজিক প্রভাব

ভিন্ন মাজহাবের ফিকহ একত্রে শেখানো ও চর্চা করার সংস্কৃতি সমাজে ধর্মীয় উদারতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করত, যা আইয়ুবি আমলের সংহতি রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।

দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর দামেস্ক ছিল মুসলিম বিশ্বের অন্যতম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এই সময়ে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি শুধু জ্ঞানের কেন্দ্র ছিল না, বরং ছিল সামাজিক এবং রাজনৈতিক আলোচনার মঞ্চ।

আসাদিয়ার আলেমগণ কেবল মাদরাসায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তাঁরা প্রায়শই প্রধান বিচারপতি (কাজি), মুফতি এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত হতেন। এই কারণে মাদরাসাটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখত। যেমন, ইবনে শায়েরের মতো শিক্ষকগণ অর্থাৎ সামাজিক মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে মাদরাসার পণ্ডিতদের সমাজে ব্যাপক প্রভাব ছিল।

এই মাদরাসাটি মুসলিম সমাজে আইনগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং শরীয়াহর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছিল। বিভিন্ন মাজহাবের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে এটি একটি শিক্ষা দিয়েছিল যে, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করা সম্ভব।

মাদরাসার সমাপ্তি ও ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান

ঐতিহাসিক ইবন শাদ্দাদের বিবরণ ছাড়া মাদরাসাটির পরবর্তী শতকগুলির বিস্তারিত ইতিহাস তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া যায়। তবে এর সমাপ্তি ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।

দামেস্কের এই ঐতিহাসিক মাদরাসাটি সম্ভবত অষ্টম হিজরি শতকের পরে তার গুরুত্ব হারায় বা বিলীন হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ হতে পারে, মঙ্গোল আক্রমণ (১২৬০ খ্রিষ্টাব্দ)। হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলদের দামেস্ক আক্রমণ শহরের বহু স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। মাদরাসাটিও এ–সময় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অথবা হতে পারে মামলুক বা উসমানীয় শাসনের অধীনে নতুন বড় মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরনো মাদরাসাগুলি বিলীন হয়ে যায়।

আসাদিয়া মাদরাসা ছিল আসাদ উদ্দিন শিরকুহের জ্ঞান এবং সুন্নি পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতির এক স্থায়ী প্রতীক। দুই মাজহাবের সমন্বয়ে এটি শুধু জ্ঞান বিতরণ করেনি, বরং ইসলামি আইন ও নৈতিক নেতৃত্বের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র তৈরি করেছিল।

কালের গর্ভে এর মূল কাঠামো বিলীন হলেও এর পণ্ডিতদের মাধ্যমে রচিত জ্ঞান ও এর উদার শিক্ষানীতি ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে।