ঘুমের সমস্যা এমন একটি কষ্টকর সমস্যা। বিভিন্ন রকম মানসিক চাপ, উদ্বেগ, স্ক্রিন আসক্তি, ঘুমের ঘাটতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শারীরিক ক্লান্তি বা অসুস্থতার কারণেও দেখা যায়, রাতের গভীরে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুম আসে না।
কেউ কেউ এই অবস্থায় অস্থির হয়ে পড়েন, বিছানায় শুয়ে নানারকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে এপাশ ওপাশ করেন। অনেকে মোবাইলে হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে বারবার ঘড়ির দিকে তাকান আর ভাবেন, ঘুম কেন আসছে না।
কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। যেমন: ঘুমের সময় মোবাইল দূরে সরিয়ে রাখা। ঘুম ভেঙে গেলে বা অস্থির লাগলে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে পারেন। আবার বারবার সময় দেখলেও সেটা মস্তিষ্কে চাপ তৈরি করে। তাই এ সময়ে শান্ত থাকুন।
ঘুম ভাঙা মানেই ঘুমের সমস্যা নয়। অনেক সময় শরীরের স্বাভাবিক ঘুমচক্রেও এমন ঘটে। তাছাড়া ক্যাফেইন গ্রহণ এবং সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে। চা-কফি সন্ধ্যার পর না খাওয়াই ভালো।
ঘুম ভাঙা মানেই ঘুমের সমস্যা নয়। অনেক সময় শরীরের স্বাভাবিক ঘুমচক্রেও এমন ঘটে। তাছাড়া ক্যাফেইন গ্রহণ এবং সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে।
তবে ঘুম না আসার সময়গুলো আপনার জন্য বরকতময় হতে পারে। গভীর রাতের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। তাই রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে কয়েকটা আমল করতে পারেন:
১. তসবিহ পাঠ করুন: ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’—এমন ছোট ছোট তসবিহ পাঠ করতে থাকুন। এ ছাড়া ‘আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ’ এ ধরনের ছোট দরুদ পড়তে পারেন। এতে মন আপনার মন শান্ত হবে। কারণ আল্লাহ স্মরণ করলে হৃদয় শান্ত হয়ে আসে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।” (সুরা রাদ, আয়াত: ২৮)
২. দোয়া পড়ুন: হাদিসে একটি দোয়া বর্ণিত আছে। যেখানে বলা হয়েছে, যদি রাতে কারো ঘুম ভেঙে যায়, আর সে দোয়াটি পাঠ করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় বা কোনো প্রার্থনা করে, তবে তার প্রার্থনা কবুল করা হবে। যদি সে উঠে অজু করে (তাহাজ্জুদের) নামাজ আদায় করে, তবে তার নামাজও কবুল হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১০৩)
দোয়ার উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু, ও লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর। সুবহানাল্লাহি, ওয়ালহামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম। রব্বিগফির লি।
জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।সুরা রাদ, আয়াত: ২৮
অর্থ: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁরই, এবং তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। আল্লাহ পবিত্র মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইবাদত-যোগ্য নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। মহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে দূরে থাকার বা সৎকাজ করার কোনো শক্তি কারো নেই। হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন।
৩. তাহাজ্জুদ পড়ুন: উপরের হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লেও এ-সময় কবুল হবে বলে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং যদি একেবারে ঘুম না-ই আসে, তাহলে তা আপনার তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের একটি সুযোগ হতে পারে। অজু করে করে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নিন।
রাতের শেষ প্রহর হল দোয়া কবুলের সময়, যখন আল্লাহ বান্দাদের ডেকে বলেন,“কে আছে যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব?” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৪৫)
৪. কোরআন পাঠ করুন: এ-সময়ে কোরআন তিলাওয়াত শুরু করতে পারেন। যদি শরীরে শক্তি না থাকে, দুর্বল লাগে, সেক্ষেত্রে ঘুম ভাঙলে মোবাইল বা স্পিকারে নিচু ভলিউমে আপনার পছন্দমতো বিভিন্ন তিলাওয়াত শুনতে পারেন।
যদি ভয় বা দুশ্চিন্তা অনুভব করেন, তবে কোরআন তিলাওয়াত শোনা ভয় দূর করবে, প্রশান্তি আনবে। দেখবেন তিলাওয়াত শুনতে শুনতে একটা সময় আপনি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাবেন।
অতএব, যারা মাঝে মাঝে রাতে জেগে যান বা হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, তারা মন খারাপ না করে, হতাশ না হয়ে বরং এই সময়টিকে বরকতময় করে তুলুন। মোবাইলে অহেতুক সময় না কাটিয়ে বরং আল্লাহর স্মরণে কিছু সময় কাটান। এটিই হতে পারে আপনার জীবনের এক বিশেষ রহমত।
writerismat@gmail.com
ইসমত আরা : শিক্ষক, লেখক