Thank you for trying Sticky AMP!!

ইসলাম ও বিশ্বদর্শন নিয়ে কবি ইকবাল

আধুনিক উর্দু ও ফারসি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে খ্যাতির পাশাপাশি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের পরিচিতি উপমহাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিক হিসেবে। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বাত্যন্ত্র ধরে রাখা ও বিকশিত করার তাগিদে তাদের নিজস্ব স্বাধীন আবাসভূমি পাকিস্তান গঠনের তাত্ত্বিক পুরুষ হিসেবে তিনি সুপরিচিতি। তবে এর চেয়েও বেশি জোরালো হলো দার্শনিক হিসেবে তাঁর সুনাম। আর তাঁর দর্শনচিন্তায় ইসলাম প্রবলভাবে উপস্থিত। ইসলাম তাঁর কাছে ছিল গতিশীল এক জীবনদর্শন। সেই উপলব্ধির ফসল রিকনস্ট্রাকশন অব রিলিজিয়াস থটস ইন ইসলাম (ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন)।

মূলত ১৯২৮ সালে অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ, হায়দারবাদ, আলিগড়সহ কয়েকটি স্থানে তিনি বিশ্বদর্শন ও ইসলাম বিষয়ে সাতটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেগুলো ছিল ইংরেজিতে। সে বক্তৃতাগুলো সংকলিত হয়ে ১৯৩০ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর চার বছর পর অক্সফোর্ড থেকে বইটির আরেকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় যেখানে ‘ধর্ম কি সম্ভব?’ নামে আরেকটি নিবন্ধ যুক্ত হয়।

Also Read: ইসলামী সভ্যতার পনেরোটি নগরের কাহিনী

বইটি র্জামান ভাষায় অনূদিত হওয়ার পর সেখানকার দার্শনিক ও পণ্ডিত মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। তাঁরা অনেকেই ইকবালকে তখন ’ইসলামের নবজাগরণের চিন্তাবিদ’ হিসেবে অভিহিত করেন। উল্লেখ্য, ইকবাল জার্মানির মিউনিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।

বইটিতে জ্ঞান ও ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, দর্শনের দৃষ্টিতে প্রত্যাদেশমূলক ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা ও প্রার্থনার মর্ম, মানুষের খুদি বা আত্মার স্বাধীনতা ও অমরত্ব, মুসলিম সংস্কৃতির মর্মকথা এবং ইসলামি জীবন ব্যবস্থার গতিময়তার ওপর গভীরভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

ইকবাল বলতে চেয়েছেন, ইসলামভিত্তিক সমাজজীবন কোনো একটি কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, নয় স্থবির। সে কারণেই ইসলামি দুনিয়ায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন দেখা দিয়েছে, মতবাদ এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় মুসলমানদের মানসদিগন্তে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে স্বকীয় জ্ঞানের আলোকে নানা রকম ধারণা তৈরির স্বাধীনতা এসেছে।

Also Read: বিশ্ব–পটভূমিতে মহানবী (সা.)-এর জীবন

ইকবাল এটাও ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন যে মানুষের জীবনে ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে এবং মানুষ তাঁর কাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে অমরত্ব লাভ করতে পারে। মানে, তাকে সাধনা করে অমরত্ব অর্জন করতে হয়।

আল্লামা ইকবালে এই বইয়ের মাধ্যমে এও জানাতে চেয়েছেন যে ইসলামের বিধিবিধানগুলোর ভিত্তিতে এবং ইজতিহাদের (আলেমদের গবেষণা) আলোকে মানবজীবনে কালে কালে চিন্তায় ও চর্চায় নানা বিন্যাস ও পুনর্বিন্যাস দেখা দেয়, ভবিষ্যতেও দেবে। তবে এই পুনর্বিন্যাসে কোনো সংকীর্ণ মনোভাবকে স্থান দেওয়া যাবে না। 

Also Read: ইউরোপের নির্মাণে ইসলামের অবদান

প্রথম প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ৯৩ বছর ধরে নানা ভাষায় বইটির অনেক অনুবাদ ও পুনর্মুদ্রণ হয়েছে। বাংলাভাষাতেও এটি সুন্দরভাবে অনূদিত হয়েছে। ১৯৮১ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এটি বের করেছিল। এখন প্রথমা প্রকাশনীর অনুবাদে এটি বাজারে আছে।

রিকনস্ট্রাকশন অভ রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম; আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল; প্রথম প্রকাশ ১৯৩০

Also Read: শিয়া-সুন্নি বিভাজনের নেপথ্যে