Thank you for trying Sticky AMP!!

মহানবী (সা.)-র হাঁটাচলার ধরন

যেকোনো মানুষের দৈহিক গঠনের সঙ্গে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রকাশভঙ্গি না জানলে দৈহিক সৌন্দর্য আসলে অস্পষ্ট থেকে যায়। চলাফেরা ও কাজেকর্মের মধ্য দিয়েই ব্যক্তিকে চেনা যায় সবচেয়ে বেশি। কেউ কীভাবে হাঁটেন, খাবার খান, কথা বলেন, কাঁদেন কিংবা হাসেন ইত্যকার বিষয়াদি জানলেই মূলত কল্পনায় ব্যক্তির পূর্ণছবি দাঁড় করানো সম্ভব হয়। হাদিসের বর্ণনাকে মাধ্যম করে আমরা চেষ্টা করব নবীজি(সা.)র ব্যক্তিত্ব ও অঙ্গ-সৌষ্ঠবের প্রকাশভঙ্গি একটি যথার্থ চিত্র তুলে ধরতে। এই নিবন্ধে আমরা নবীজি (সা.) র হাঁটা-চলার ধরন সম্পর্কে আলোচনা করব।

রাসুল (সা.)-এর হাঁটাচলা ছিল একজন প্রাণবন্ত ও উদ্যমী পুরুষের মতো। তার হাঁটার গতি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুত। আনাস (রা.) বলেন, তিনি একটু ঝুঁকে হাঁটতেন। কোথাও গেলে পথে ছড়িয়ে পড়া সুগন্ধির সূত্র ধরে বোঝা যেতো যে, তিনি এই পথ ধরে গেছেন। (মুসলিম, হাদিস: ২,৩৩০)

Also Read: দুই নারীর বিবাদ, এক ছেলেকে নিয়ে

লাকিত ইবনে সাবুরা (রা.) একবার নবীজি (সা.)কে খুঁজতে আয়েশার কাছে এলেন। সেখানে তাকে পেলেন না। ইতোমধ্যে নবীজি(সা.) সেখানে এলেন পৌরুষভরে একটু ঝুঁকে হেঁটে হেঁটে। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৩)

আলী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হাঁটার সময় একটু ঝুঁকে হাঁটতেন, যেন কোনো উঁচু ভূমি থেকে অবতরণ করছেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৬৩৭)

এ ছাড়াও অন্যান্য বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, হাঁটার সময় তিনি শক্তি ও উদ্যম রাখতেন এবং দ্রুত হাঁটতেন। ‘মনে হয় যেন উঁচু ভূমি থেকে নীচে নামছেন’–এর অর্থ এটাই। হাঁটার এই ভঙ্গিটি তাঁর পৌরুষেরও প্রকাশ।

হাঁটাচলার ধরনে তিনি মধ্যম মান বজায় রাখতেন। প্রাণহীন হাঁটা বা অস্থির চলন যেমন নয়, তেমনই অহঙ্কারী ও দাম্ভিক চলনও নয়। আল্লাহ–তায়ালাও কুরআনে তার পছন্দের বান্দাদের হাঁটার বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘দয়াময়ের বান্দা তারা, যারা জমিনের বুকে চলাফেরা করে নম্রভাবে।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৩)

Also Read: সাহাবির মেহমানদারিতে আল্লাহ্‌র হাসি

দয়াময়ের এই প্রিয় বান্দাদের মধ্যে নবীজি(সা.)র স্থান যে সবার ওপরে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তাফসিরের তাকালে দেখা যাবে, বিশেষভাবে নবীজির(সা.) হাঁটার প্রশংসাতেই এই আয়াত বর্ণনা করা হয়েছে বলে অনেকে অভিমতও ব্যক্ত করেছেন।

সাইয়েদ কুতুব (র.) বলেন, তারা সহজ ও নরম পদচলনে হাঁটেন। তাতে কৃত্রিমতা ও লৌকিকতা থাকে না। গৌরব বা দর্পও থাকে না। ভাব দেখিয়ে মুখ বিকৃত করে চলেন না। থপথপ করে পা ফেলেন না। তাদের হাঁটাচলায় ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। আত্মিক প্রশান্তির ছবি দেখা যায়। তারা স্থির কদমে হাঁটেন। তাতে গাম্ভীর্য ও স্থৈর্য এবং শক্তিমত্তা ও একাগ্রতা ফুটে ওঠে। ‘তারা জমিনে চলাফেরা করে নম্রভাবে’-এর অর্থ এই নয় যে, তারা মাথানত ব্যক্তির ন্যায় নিজেকে গুটিয়ে হাঁটেন, যেনো পা জমিনে পড়েই না এবং নীচের ভিত মোটেই টের পায় না তাদের চলনের শক্তি। যেমন অনেককে দেখা যায়, খোদাভীতি ও ভালোমানুষী দেখাতে গিয়ে বিগলিত হয়ে হাঁটেন। (ফী যিলালিল কুরআন, বর্ণিত আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য)

Also Read: কিয়ামতের দিন প্রথম বিচার হবে কার

ইবনে কাসীর (র.) লিখেছেন, নম্রভাবে হাঁটা, অর্থাৎ প্রশান্তচিত্ততা ও গাম্ভীর্য নিয়ে হাঁটা; দম্ভ ও দর্পভরে নয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তুমি জমিনে দম্ভভরে হেঁটো না।’ (সুরা ইসরা, আয়াত ৩৭)

নবীজি (সা.)যখন হাঁটতেন, মনে হতো উঁচু ভূমি থেকে অবতরণ করছেন, আর জমিন তার সামনে সংকুচিত হয়ে আসছে। পূর্ববর্তী অনেক বুযুর্গ দুর্বল মানুষের মতো হাঁটা অপছন্দ করতেন। ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি এক যুবককে ধীরগতিতে হাঁটতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার, তুমি কি অসুস্থ? সে বলল, না, হে আমীরুল মুমিনিন। ওমর (রা.) তাকে চাবুক দিয়ে তাড়া করলেন এবং দৃঢ়পদে হাঁটার নির্দেশ দিলেন।

ইমাম ইবনুল কাইয়িম (র.) হাঁটার দশটি পদ্ধতি উল্লেখ করে বলেছেন। এগুলো মধ্যে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ হাঁটা হলো নম্রভাবে এবং ঈষৎ ঝুঁকে হাঁটা। অর্থাৎ, যেভাবে রাসুল (সা.) হাঁটতেন। (যাদুল মায়াদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬৯)

এসব বর্ণনা থেকে প্রমাণ হয়, মহানবী (সা.)-এর হাঁটা কেবল তার স্বভাবভঙ্গি ছিল না, ছিল সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। হাঁটার পুরুষালি পন্থাও এটা হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সকলকে হাঁটা-চলায়ও নবীজির সার্বিক অনুসরণের তাওফিক দান করুন।

Also Read: তাকওয়া অর্জনের সঙ্গে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে