আইয়ামে বীজের রোজা: নিয়ম ও ফজিলত

রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুমিনের তাকওয়া বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজাগুলোর মধ্যে আইয়ামে বীজের রোজা (আরবিতে আইয়ামুল বীজ) বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। আইয়ামে বীজ বলতে হিজরি মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে রাখা নফল রোজাকে বোঝায়। এই দিনগুলোতে চাঁদ উজ্জ্বল ও প্রায় পূর্ণ থাকে, তাই এটি ‘উজ্জ্বল দিনের রোজা’ নামে পরিচিত। রাসুল (সা.) এই রোজার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন এবং এর অপরিসীম ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত

আইয়ামে বীজের রোজা একটি সুন্নাহ আমল, যা রাসুল (সা.) নিয়মিত পালন করতেন এবং সাহাবিদের তা পালন করতে উৎসাহ দিয়েছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে…যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করো” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)। আইয়ামে বীজের রোজা নফল হলেও এটি তাকওয়া বৃদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।

রাসুল (সা.) এই রোজাকে সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখে, তার জন্য তা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৭৯)

অন্য একটি হাদিসে আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “তুমি যদি প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতে চাও, তবে ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে রোজা রাখো।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৭৬১)

আইয়ামে বীজের রোজার সময়

আইয়ামে বীজের রোজা প্রতি হিজরি মাসের নির্দিষ্ট তিন দিনে রাখা হয়:

  • ১৩ তারিখ: প্রথম দিন।

  • ১৪ তারিখ: দ্বিতীয় দিন।

  • ১৫ তারিখ: তৃতীয় দিন।

যদি কোনো কারণে এই দিনগুলোতে রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তবে অন্য দিনে কাজা করা যায়। তবে হাদিসে নির্দিষ্টভাবে এই তিন দিনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (সুনান নাসাঈ, হাদিস: ২৪২০)

হিজরি তারিখ নির্ধারণের জন্য হিজরি ক্যালেন্ডার বা মসজিদের ঘোষণা অনুসরণ করা উচিত। বর্তমানে ‘Muslim Pro’ বা ‘Al-Adhan’ কিংবা এ–জাতীয় কিছু অ্যাপ আছে, যার মাধ্যমে হিজরি তারিখ সহজে জানা যায়।

রোজার নিয়ম

আইয়ামে বীজের রোজা একটি নফল রোজা, তবে এর নিয়ম ফরজ রোজার মতোই।

১. নিয়ত করা: রোজার জন্য নিয়ত অপরিহার্য। নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট। উদাহরণ: “আমি আইয়ামে বীজের নফল রোজা আল্লাহর জন্য রাখছি।”
নিয়ত রাতে বা ফজরের আগে করা উত্তম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৫১)

২. রোজার সময়: শুরু ফজরের (সুবহে সাদিক) সময় থেকে। শেষ মাগরিবের আজানের সময় হলে। রোজার সময় খাওয়া-দাওয়া, পান করা, স্ত্রী-সম্পর্ক এবং অন্যান্য রোজা ভঙ্গকারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. ইফতার ও সেহরি: সেহরি করা সুন্নাহ, তবে নফল রোজার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। মাগরিবের সময় হলে ইফতার করুন।

সতর্কতা

  • নিষিদ্ধ দিন এড়ানো: আইয়ামে বীজের রোজা যদি ঈদের দিন বা তাশরিকের দিনের (১১, ১২, ১৩ জিলহজ) সঙ্গে মিলে যায়, তবে রোজা রাখা যাবে না।

  • শারীরিক সামর্থ্য: শারীরিকভাবে সক্ষম না হলে রোজা না রাখা। রাসুল (সা.) বলেছেন, “দিনে রোজা রাখো, তবে নিজেকে ধ্বংস করো না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৭৬)

  • আন্তরিকতা: রোজা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখা এবং লোকদেখানো থেকে বিরত থাকা।

রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে এই রোজা মুমিনের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাকওয়া বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ইবাদতের কোনো বিকল্প নেই।