৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ
৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ

বোলারদের লড়াই, ব্যাটসম্যানদের সামনে দীর্ঘ পথ

প্রথম ইনিংসে এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিল ৬ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে সেখানে ‘মাত্র’ ২টি। অন্তত প্রথম ইনিংসের তুলনায় ব্যাটিংয়ে উন্নতি হয়েছে, বলতেই হবে সেটি। তবে ২ উইকেটে ৫০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করার পরও আদতে বাংলাদেশের সামনে দীর্ঘ পথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবার ব্যাটিং করাতে প্রয়োজন আরও ১১২ রান। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের উইকেটে বোলারদের জন্য সহায়তা আছে এখনো, অসম বাউন্সও অসুবিধায় ফেলছে ব্যাটসম্যানদের।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ হারিয়েছে তামিম ইকবাল ও তিনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজকে। দুটি উইকেটই নিয়েছেন আলজারি জোসেফ। আবার ইতিবাচক শুরুর পর ফিরেছেন তামিম—গুড লেংথ বলে ধন্দে পড়ে গিয়ে বেসামাল হয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে, উইকেটকিপার জশুয়া ডা সিলভা ছিলেন দুর্দান্ত। ৩১ বলে চার চারে তামিম করেন ২২ রান। ওপরে উঠে আসা মিরাজ টিকেছেন ৬ বল, আঁটসাঁট লাইনের বলে পাঞ্চ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ‘গোল্ডেন ডাক’ পাওয়া মাহমুদুল এখন পর্যন্ত ইতিবাচকই, ৬০ বল খেলে ১৮ রানে অপরাজিত। তাঁর সঙ্গী নাজমুল হোসেন ২৩ বল খেলে করেছেন ৮ রান। নাজমুল অবশ্য শেষ দিকে হাঁটুর চোটে অস্বস্তিতে ছিলেন, ফিজিওর দ্বারস্থও হতে হয় তাঁকে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ব্যাটসম্যানরা?

এ টেস্টে এখনো নিয়ন্ত্রণ স্বাগতিকদের হাতেই। তবে বাংলাদেশ একটু লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে মূলত বোলারদের পারফরম্যান্সে, যার নেতৃত্বে ছিলেন ৪ উইকেট নেওয়া মিরাজ। দিনটা অবশ্য বাংলাদেশের আরও ভালো হতে পারত। তবে আগের দিনের মতো এবারও কয়েকটি সুযোগ হারিয়েছে তারা—কখনো ক্যাচ মিস করে, কখনো রিভিউ না নিয়ে।

প্রথম সেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল ১ উইকেট, তবে আক্ষেপ ছিল আরও বেশি। পেসাররা দ্বিতীয় দিন সকালে টেনে আনেন আগের দিনের পারফরম্যান্সই, তৈরি করেন সুযোগও। ইনিংসের ৫৩তম ওভারে ইবাদতের দারুণ ডেলিভারিতে এনক্রুমা বোনারের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপার নুরুলের হাতে যায় বল। তবে সেভাবে আবেদনই করেননি কেউ, অথচ রিপ্লেতে দেখায়, আউট ছিলেন বোনার। ইবাদতের পরের ওভারে দিনের প্রথম বাউন্ডারি মারেন ব্রাফেট, ওই চারেই প্রথম ইনিংসে লিডের দেখা পায় স্বাগতিকেরা।

দিনে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান

বোনার দ্বিতীয় জীবন পান নাজমুলের সৌজন্যে। খালেদের বলে ক্যাচ তুললেও প্রথম স্লিপে থাকা নাজমুল সেটি খেয়ালই করেননি, যেন প্রস্তুতই ছিলেন না ক্যাচের জন্য! পানি-পানের বিরতির পরই অবশ্য বাংলাদেশকে উদ্‌যাপনের উপলক্ষ্য এনে দেন সাকিব। অবশেষে বোনার হার মানেন সাকিবের আর্ম বলে। দারুণ সেট-আপে তাঁকে বোল্ড করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ঠিক আগের বলটি কাছাকাছি জায়গায় পড়ে বেরিয়ে গেলেও এ ডেলিভারি ঢোকে ভেতরের দিকে। বোনার ৯৬ বলে করেন ৩৩ রান। এরপর ব্রাফেট শর্ট লেগে ক্যাচ তুললেও মাহমুদুল হাত নামাতে পারেননি সময়মতো।

প্রথম সেশনের আক্ষেপ ভুলে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ পায় ৩টি উইকেট, অবশ্য রিভিউ নিলে পেতে পারত আরেকটি। দ্বিতীয় নতুন বল পুরোনো হওয়ার আগেই প্রথম আঘাত করেন খালেদ আহমেদ। তাঁর নিচু হওয়া বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট। ২৬৮ বল খেলে ৯৪ রান করা ব্রাফেট এ নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ষষ্ঠ বার নড়বড়ে নব্বইয়ে কাটা পড়লেন।

ওই সেশনের পরের দুটি উইকেট মিরাজের। ব্রাফেটের বিদায়ে ক্রিজে আসা বাঁহাতি কাইল মেয়ার্সকে দেখেই মিরাজকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। মেয়ার্সকে এলবিডব্লু করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁকে চতুর্থ বারের মতো আউট করলেন মিরাজ। দারুণ বোলিং করতে থাকা মিরাজের পরের শিকার জশুয়া ডা সিলভা। ৯ বলে ১ রান করে কট-বিহাইন্ড হন তিনি।

চা-বিরতির পর তৃতীয় ওভারে মিরাজ পান তাঁর তৃতীয় উইকেট—১৫ বল খেলে কোনো রান না করেই আউটসাইড-এজড হন আলজারি জোসেফ। উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানের ক্যাচটিও ছিল বেশ ভালো। পরের ওভারে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে কেমার রোচকে ড্রাইভের প্রলোভনে ফেলেন ইবাদত, স্লিপে ভুল করেননি লিটন দাস।

৬ রানের জন্য শতক পাননি ব্রাফেট

গুড়াকেশ মোতিকে নিয়ে এরপর এগোচ্ছিলেন ব্ল্যাকউড। তাঁর উইকেটেও আছে মিরাজের অবদান, খালেদের বলে কাভারে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ-অধিনায়ক ফেরেন ১৩৯ বলে ৬৩ রান করে। ব্ল্যাকউড তাঁর ইনিংসে ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন ভালোই। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে মিরাজের বলে এলবিডব্লু হতে পারতেন। এর বাইরে দুবার ক্যাচ তুললেও ফিল্ডারের নাগালের বাইরে দিয়ে যায়। জেইডেন সিলসকে এলবিডব্লু করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেট নেন মিরাজ।