
জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি। হাতে দুই মাসের কম সময়। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনের বাস্তব চিত্র বুঝে নিতে চান নতুন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ বিকেলে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসেন।
এনএসসি টাওয়ারের পঞ্চম তলার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নিতে ১৭টি ফেডারেশনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে ১৫-১৬টি ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আসিফ নজরুল। তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিলেও নিজের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আজ বিভিন্ন ফেডারেশনের সঙ্গে বসে বোঝার চেষ্টা করলাম, মূল ইস্যুগুলো কী। আমার মনে হয়েছে, অতীতে সব ফেডারেশনের দিকে সমানভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়নি।’
আসিফ নজরুলের মতে, আন্তর্জাতিক সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেটিই একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘হয়তো কোনো খেলায় আমাদের আন্তর্জাতিক সাফল্য কম, কিন্তু খেলাটি খুব জনপ্রিয়। সেই খেলাগুলোকে সামনে আনতে হবে। খেলাধুলায় যদি এলিটিসিজম নিয়ে আসি, তাহলে হবে না। আমাদের গণমানুষের কথা ভাবতে হবে।’
হাতে থাকা অল্প সময়ের মধ্যে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন উপদেষ্টা। এর মধ্যে আছে বিকেএসপিকেন্দ্রিক দুটি পরিকল্পনা। এর একটি হলো বিকেএসপিতে উচ্চতর ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্সের’ সম্ভাব্যতা যাচাই, অন্যটি প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ধরে রাখতে ক্লাবের সঙ্গে বিকেএসপির কার্যকর সেতুবন্ধ তৈরি করা। এ ছাড়া পার্বত্য জেলা থেকে উঠে আসা ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় প্রতিভাবান ছেলেমেয়েদের জন্য অবকাঠামো বাড়ানোর কথাও বলেছেন আসিফ নজরুল।
নিজেকে খেলাধুলার ‘মহা ভক্ত এবং উপদেষ্টা হওয়ার আগপর্যন্ত নিয়মিত খেলতেন জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘যত বেশি আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খেলাধুলা ছড়িয়ে দিতে পারব, তত বেশি শিশু-কিশোর ও তরুণদের ডিভাইস আসক্তি, মাদক বা গেম আসক্তি থেকে বের করে আনা সম্ভব হবে।’ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘আমি ক্ষমতাশালী মানুষ, আমি বড়লোক, আমার প্রিয় খেলাটাই পৃষ্ঠপোষকতা করব—এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে। দুই মাস অল্প সময়, কিন্তু কিছু কাজ করার জন্য যথেষ্ট।’
সভায় ফেডারেশন কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এসএ গেমসের প্রস্তুতির জন্য পুরো অর্থ না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ চেয়েছেন বিদেশি কোচ। হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান আর্থিক সংকটের পাশাপাশি মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে টার্ফ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ দাবি জানান চার বিভাগে চারটি মাঠ করার।
ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল ঘোষ ভলিবল মাঠ আন্তর্জাতিক মানের করার দাবি তুললে উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে জানতে চান, কত টাকা লাগবে এবং কোনো প্রকল্প করা হয়েছে কি না। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম তৃণমূল পর্যায়ে খেলা আয়োজনের জন্য তহবিল চেয়েছেন।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন দেশের ফুটবল উন্নয়ন ও পরিচালনায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্যে ক্রীড়া উপদেষ্টা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হননি বলে জানা গেছে। বাফুফে সম্প্রতি ৬৪টি জেলা নিয়ে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করেছে। উপদেষ্টার চাওয়া, জেলা পর্যায়ের ১৬টি দল নিয়ে একটি সুপার লিগ হোক। এ বিষয়ে ইমরান এনএসসির কাছে দ্রুত প্রস্তাব জমা দেবেন বললে উপদেষ্টা তিন দিনের মধ্যে তা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বিকেএসপি থেকে মানসম্মত ফুটবলার না পাওয়ার প্রশ্নও তোলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। মতবিনিময় সভায় বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম উন্নত প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বিকেএসপিতে সেন্টার অব এক্সিলেন্স তৈরির জন্য উপস্থাপনা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। উপদেষ্টা জানান, কয়েক দিনের মধ্যে তিনি বিকেএসপি পরিদর্শনে যাবেন। তখন বিসিবি ও বাফুফের সভাপতিকে সফরসঙ্গী করবেন।