বাংলাদেশ সফরে এসে মোটেও ভালো খেলতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশ সফরে এসে মোটেও ভালো খেলতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কাঠামোয় গলদ দেখছেন টেলর

পতনের শুরুটা গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর। সাউদাম্পটনে সেদিন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত সিরিজও হারতে হয় ২-১ ব্যবধানে।

এরপর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হার একই ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের এই বৃত্ত থেকে বেরোতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হেরেছে ৩-২ ব্যবধানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও সিরিজ হার; এবার ব্যবধান আরও বেশি (৪-১)।

টানা চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে বাংলাদেশ সফরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে পঞ্চম দলটির বিপক্ষে দশম হয়ে বাংলাদেশ সিরিজ জিতবে—তা খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছিলেন। কিন্তু ক্রিকেট মজার খেলা, সব হিসাব উল্টে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম তিন ম্যাচেই হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। হাতে রয়েছে আরও দুই ম্যাচ। হিসাবটা এখন বাংলাদেশ কত ব্যবধানে সিরিজ জিতবে? ৩-২, ৪-১ নাকি ৫-০?

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেলর

ওদিকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটেও চলছে হিসাব-নিকাশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাকি আর দুই মাস। তার আগে এই সংস্করণে টানা পাঁচটি সিরিজ হারল অস্ট্রেলিয়া। ভ্রুকুটি তো উঠবেই। মার্ক টেলর যেমন মনে করছেন, দেশের ক্রিকেট কাঠামোয় গলদ আছে বলেই এমন পারফরম্যান্স করছে জাতীয় দল। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট কাঠামোর মান পড়ে গেছে বলে মনে করেন সাবেক এ অধিনায়ক।

অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে এবার সফরে আসেননি স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো তারকারা। বাংলাদেশ দলও নিয়মিত তিন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমকে পায়নি। তবে টেলর অবাক হয়েছেন ম্যাথু ওয়েডের দলের পারফরম্যান্সে। নিয়মিত কিছু খেলোয়াড় নেই, তবু বাংলাদেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথম তিন ম্যাচ হেরে বসবে টেলর তা ভাবতে পারেননি। এক মিচেল মার্শ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ে কেউ দাঁড়াতে পারছেন না।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাথায় রেখে টেলর বলেন, ‘হতাশার ব্যাপার হলো (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের জন্য) হাত তুলতে পেরেছেন শুধু একজন খেলোয়াড়—মিচেল মার্শ। হ্যাঁ, স্মিথ, ওয়ার্নার, ফিঞ্চ, লাবুশেন ও ম্যাক্সওয়েল নেই। এটা অনেকটাই অস্ট্রেলিয়া “এ” দল। কিন্তু এ দলের কাছে কী প্রত্যাশা থাকে, দু-একজন খেলোয়াড় ৫০ বলে ৭০ কিংবা ২৫ বলে ৫০ করবে আর আমরাও ভেবে নেব, ওকেই আমরা খুঁজছি! দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা বাংলাদেশে তা ঘটেনি। এটা হতাশার।’

বাংলাদেশ সফরে প্রথম তিন ম্যাচে ব্যাটিংয়ে এক মিচেল মার্শ ছাড়া কেউ সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি

সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া দলের কেউ ফিফটির দেখাও পাননি। দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন মার্শ। কাল তৃতীয় ম্যাচে খেলেছেন ৫১ রানের ইনিংস—এই তিন ম্যাচে এটাই অস্ট্রেলিয়ার কোনো খেলোয়াড়ের প্রথম ফিফটি।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের সংকট দেখছেন টেলর। নির্বাচকেরা এ বছরের শুরুতেই এ নিয়ে কথা বলেছিলেন যখন ১৭ ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করার সময় টেস্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে শুধু স্মিথ, ওয়ার্নার ও লাবুশেনকে বেছে নেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সাদা বলের বিশেষজ্ঞ অ্যারন ফিঞ্চ ও ম্যাক্সওয়েল এবং তরুণ অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন।

টেলরের মতে, ‘এটাই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা। এই যুগ কিংবা তিন সংস্করণ, কোভিডের সময়, জৈব সুরক্ষাবলয়ের ধকল—যা কিছুই কারণ হোক না কেন, দুশ্চিন্তার বিষয় হলো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ব্যাটিং গভীরতা নেই। আমাদের সময়ে ফিরে তাকালে কী দেখতে পাই—তখন আমরা প্রাধান্য বিস্তার করেছি বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। প্রচুর খেলোয়াড় টেস্ট দলে ঢোকার অপেক্ষায় ছিল।’

টেলর দুটি উদাহরণ দেন—স্টুয়ার্ট ল ও মার্টিন লাভ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র একটি টেস্ট ও ৫৪টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ স্টুয়ার্ট ল। অথচ প্রতিভা কম ছিল না। মার্টিন লাভের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ২০০২ থেকে ২০০৩—এ সময়ের মধ্যে মাত্র ৫টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন ব্যাটিংয়ে সে সময় আলোচনার জন্ম দেওয়া লাভ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ

তখন প্রচুর খেলোয়াড় থাকায় তাদের ছিটকে পড়ার কারণও ব্যাখ্যা করলেন অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে অন্যতম সেরা এ অধিনায়ক, ‘স্টুয়ার্ট ল ও মার্টিন লাভের কথাই ধরুন। তখন নতুনদের ওপর পারফরম্যান্স করার চাপ ছিল। তাদের পেছনে যারা ছিল, তারাও চাপে রাখত। মার্টিন, হেইডেন, ল্যাঙ্গাররা শিল্ড ক্রিকেটে ৪০ থেকে ৫০–এর মধ্যে গড় রেখেও একটি ম্যাচ পেত না। যখন পেল তখন ওরা ভালো করতে শুরু করল, কারণ ওরা প্রস্তুত ছিল।’