
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে একে একে চলে এলেন মেহেদী, মেহেদী ও মেহেদী! আরেক মেহেদী অবশ্য তখনো এসে পৌঁছাননি। ধন্দে পড়ে গেলেন? ডাকনামটা ব্যবহার করা অপরিহার্যই হয়ে গেল। এই চারের মধ্যে শুধু একজন পরিচিত তাঁর মূল নামে—মেহেদী হাসান। বাকি তিনজনকে সবাই চেনে মূলত তাঁদের ডাকনামে—মিরাজ, রানা ও মারুফ।
জিমনেসিয়ামে তিনজনকে দেখেই মারুফের মুখে খেলে গেল একপ্রস্থ হাসি, ‘আরে তিন মিতা দেখি!’ মেহেদী হাসান সিদ্দিক মারুফ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মেহেদী হাসান রানা, মেহেদী হাসান—চার ‘মেহেদী’কে একসঙ্গে মেলানোর সুযোগটা মিলল ১৬ জুলাই দুপুরে। ওই দিনই শুরু হয়েছে বিসিবির হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের কার্যক্রম। এইচপিতে আছেন চারজনই।
জিমনেসিয়ামে গল্প জমবে না। চারজন চললেন বিসিবি একাডেমি মাঠের এক ছাউনিতে। কখনো তাঁদের একদলে খেলা হয়নি, এভাবে আড্ডা দেওয়া তো নয়ই। তো কে রেখেছেন ‘মেহেদী’ নামটা? মারুফ একটু সময় নিলেন। ততক্ষণে নামের ইতিবৃত্ত জানাতে শুরু করলেন বাকি তিনজন। মিরাজের নাম রেখেছেন তাঁর ছোট খালা, রানারটা বাবা, আর মেহেদীরটা মা। ‘আর আমারটা দাদা’—মনে পড়েছে মারুফের।
নামের মিলে মাঠে-মাঠের বাইরে নিশ্চয়ই নানা বিড়ম্বনা বা সমস্যায় পড়তে হয়। মারুফ অবশ্য এটিকে ‘সমস্যা’ হিসেবে মনে করেন না, ‘একজনকে ডাকলে আরেকজনের ফিরে তাকানো, দুজনেরই উত্তর দেওয়া কিংবা স্কোরকার্ডে ভুল আসার ঘটনা তো ঘটেই। তবে এগুলোকে সমস্যা মনে হয় না, বরং মজাই লাগে!’
মিরাজের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তাঁর ও মেহেদীর বাড়ি খুলনায়। জাতীয় লিগে দুজনই খেলেন একই বিভাগে। লিগ চলার সময় নামবিভ্রাটের অভিজ্ঞতা প্রায়ই হয় মিরাজের, ‘আমি যখন রান করি, অনেক সময় আমার জায়গায় ওর নামে (মেহেদী) আসে। আবার ও ভালো করলে আমারটা আসে। দুজনের বাড়ি একই জায়গায়। এ কারণে এমনটা হয়। তবে আমার নাম ‘মেহেদী হাসান মিরাজ’ লেখা হলে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর থাকে না।’
মিরাজ তুলনামূলক বেশি পরিচিত বলে এমন ভুলের ‘শিকার’ নাকি মেহেদীই বেশি হন। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপে খেলা এই অলরাউন্ডারের দাবি, ‘আমি বোলিং-ব্যাটিং ভালো করলে অনেকে মনে করে মিরাজই ভালো করছে। আমাকে তেমন একটা না চেনায় এমন হয়। এটা বেশি ভুল হয় এলাকার লোকজনের মধ্যে ও সংবাদমাধ্যমে।’
মিরাজ কিংবা মেহেদীর মতো নয়, রানার সমস্যাটা ভিন্ন। অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে তো হেসেই বাঁচেন না এ বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা এই বাঁহাতি পেসার, ‘আমার সমস্যা হয়েছে মারুফ ভাইয়ের সঙ্গে। আমি পেসার, উইকেট নেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য। মারুফ ভাই মূলত ব্যাটসম্যান। উনি রান করলে আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করে, “তুই ব্যাটসম্যান হয়ে গেলি কবে? এত রান করেছিস!” অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলার সময় মিরাজের সঙ্গেও গুলিয়ে ফেলা হয়েছে আমার নাম। অনেক সময় আমার স্কোর যোগ হয়েছে ওর পাশে। আবার ওরটা আমার পাশে!’ মারুফের অভিজ্ঞতাও কাছাকাছি, ‘কোনো মেহেদী ভালো করলে ফেসবুক-ফোনে অনেকে অভিনন্দন জানায় আমাকে!’
মিরাজ-মেহেদী এসেছেন খুলনা থেকে, মারুফের বাড়ি টাঙ্গাইল আর রানার চাঁদপুরে। কিছুটা সিনিয়র হওয়ায় মিরাজ-রানা-মেহেদীর সঙ্গে অবশ্য দূরত্ব আছে মারুফের। দলের চারজনের ভূমিকাও ভিন্ন। মিরাজ অলরাউন্ডার, মারুফ ব্যাটসম্যান আর রানা শুধুই পেস বোলার। মেহেদীর মূল ভূমিকা ব্যাটিংয়ে হলেও মাঝেমধ্যে স্পিনজাদুও দেখান তিনি।
চার মেহেদীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কে কিংবা কে সবচেয়ে বেশি পরিচিত? ঝটপট তিনজনের আঙুল মিরাজের দিকে। মিরাজ অবশ্য বিনয়ের সঙ্গে দেখিয়ে দেন মারুফকে, ‘মারুফ ভাই আমাদের আগে এসেছেন ক্রিকেটে, তিনিই বেশি পরিচিত।’ কিন্তু এতে একমত নন মারুফ, ‘মিরাজই আমাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ও যতটা ভালো খেলেছে, আমরা হয়তো পারিনি।’
জাতীয় লিগের গত মৌসুমে মেহেদী ছিলেন খুলনার ওপেনার। এক ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখে ঢাকা থেকে এক কোচ ফোন দিলেন বিভাগীয় দলের কোচকে, ‘মিরাজ কেন ওপেনিংয়ে খেলছে?’ অবশ্য দ্রুতই তাঁর ভুল ভাঙে। যদি চারজন কখনো একসঙ্গে খেলেন জাতীয় দলে, ভেবে দেখুন নাম নিয়ে কেমন বিভ্রাট তখন হবে! মিরাজের রসিকতা, ‘নামের মিলে বিশ্ব রেকর্ডও হয়ে যেতে পারে! সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে পারেন টিভি ধারাভাষ্যকারেরা।’ সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক একটা উপায়ও বাতলেছেন মারুফ, ‘ধারাভাষ্যকারদের নাম্বারিং পদ্ধতি চালু করতে হবে। মেহেদী-১, মেহেদী-২...।’
হাসিতে ফেটে পড়লেন চারজন। হাসির মধ্যেই তাঁদের চোখে স্বপ্নটা স্পষ্ট, একদিন খেলবেন জাতীয় দলে!
মেহেদীহাসান
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান
বয়স ২১
প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক ২০১৪-১৫ লিস্ট ‘এ’ ২০১৬ মৌসুম।
মেহেদীহাসানরানা
পেস বোলার
বয়স ১৯
প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক ২০১৪-১৫ লিস্ট ‘এ’ ২০১৪-১৫ মৌসুম।
মেহেদী হাসান সিদ্দিক মারুফ
ওপেনার
বয়স ২৮
প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক ২০০৬-০৭ লিস্ট ‘এ’ ২০১৩-১৪ মৌসুম।
মেহেদীহাসানমিরাজ
অলরাউন্ডার
বয়স ১৮
প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক ২০১৪-১৫ লিস্ট ‘এ’ ২০১৪-১৫ মৌসুম।