ফাইনালে চাপ ছাড়া ব্যাটিং করবেন বলে টস জিতে ব্যাটিংই বেছে নিয়েছিলেন কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। সুনীল নারাইনের ব্যাটিংয়ে চাপে পড়ল বরিশাল, দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের মতো এবারও নারাইন কুমিল্লাকে এনে দিলেন দুর্দান্ত শুরু। আগের ম্যাচে ১৬ বলে ৫৭ রানের পর এবার নারাইন ৫৭ রান করলেন ২৩ বলে।
তবে তাঁর উইকেটের পরই বরিশালের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পথ হারাল কুমিল্লা। সপ্তম উইকেটে মঈন আলী ও আবু হায়দারের ৫১ বলে ৫৩ রানের জুটিতে ভর করে কুমিল্লা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত যেতে পেরেছে ১৫১ রান পর্যন্ত।
আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ নারাইন শুরু করেছেন সেখান থেকেই। মুজিব উর রেহমানের করা প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে সোজা ছয়ে ঝড় শুরু তাঁর। সে ওভারে ওঠে ১৮ রান, পরের ওভারে শফিকুল ইসলামের কাছ থেকেও আসে ১৮ রান। জায়গা পেলে তো কথাই নেই, নারাইন জায়গা বানিয়ে নিয়েও খেলেছেন শট। এক্সট্রা কাভার, মিডউইকেট, লং অন—নারাইনের শট গেছে সব দিকেই।
নারাইন-ঝড় থামাতে তৃতীয় ওভারেই আসেন সাকিব। ‘কাঙ্ক্ষিত’ উইকেটটা না পেলেও প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন লিটন দাসকে ফিরিয়ে। ঝুলিয়ে দেওয়া বলে স্লগ করতে গিয়ে মিস করেন লিটন, বোল্ড হলেন ৬ বলে ৪ রান করেই। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৩৫ বলে ৩৮ রান করার পর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ব্যর্থ লিটন ফাইনালেও রান পেলেন না।
সাকিবের পর ডোয়াইন ব্রাভো এসে দেন ৬ রান। তবে নারাইন থামেননি এরপরও। পরের ওভারে সাকিব এলে শুরুতে চড়াও হন মাহমুদুল, সেখান থেকে টানেন নারাইন। সাকিব এবার দেন ১৬ রান। সে ওভারেই টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান নারাইন, অবশ্য আগের ম্যাচের চেয়ে (১৩ বল) তুলনামূলক ধীরগতিতে এবারের অর্ধশতক—আজ নারাইনের লেগেছে ২১ বল। বরিশালকে যেন ধন্দে ফেলে দিয়েছিলেন এ ক্যারিবীয়, ফিল্ডিং সেট করতেও সাকিবকে সময় নিতে হচ্ছিল বেশ।
নারাইন অবশেষে থামেন মেহেদী হাসান রানাকে তুলে মারতে গিয়ে, লং অনে ক্যাচ দিয়ে। ফেরার আগে ৫টি করে চার ও ছয়ে ২৩ বলে করেন ৫৭ রান। পাওয়ার প্লে-তে কুমিল্লা তোলে ৭২ রান। তবে নারাইন ফেরার পর কুমিল্লাকে চেপে ধরে বরিশাল। পাওয়ারপ্লে-র পরের ৫ ওভারে ওঠে ২২ রান, এ সময়ে কুমিল্লা হারায় ৪ উইকেট।
প্রথমে পয়েন্টে ব্রাভোর দারুণ ফিল্ডিংয়ে রানআউট হন মাহমুদুল হাসান। মুজিব পরের ২ ওভারে নেন আরও ২ উইকেট—ক্যারম বলে ফাফ ডু প্লেসি ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার পর বোল্ড হন আরিফুল হক। এ দুজনের মাঝে ব্রাভোর শর্ট বলে অধিনায়ক ইমরুল কট বিহাইন্ড হলে চাপ আরও বাড়ে কুমিল্লার।
দ্রুত উইকেট পতনে বাধ দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত রান তোলার দ্বিমুখী চাপের মুখে পড়েন এরপর টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান মঈন। আবু হায়দারকে নিয়ে শুরুতে জুটি গড়ার দিকেই মনোযোগ ছিল তাঁর—প্রথম ২০ বলে করেন মাত্র ১৬ রান। ১৬তম ওভার শেষে কুমিল্লার স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১১৯ রান।
‘স্ট্র্যাটেজিক টাইম-আউটে’র ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলেই শফিকুলকে কাট করে চার মেরে আশা জুগিয়েছিলেন মঈন, যদিও সে ওভারে ৭ রানের বেশি আসেনি। পরের ওভারের প্রথম বলে মেহেদী রানাকে মঈন মারেন ছয়, শেষ বলে গিয়ে মারেন আবু হায়দার। তবে ১৯তম ওভারে ব্রাভো এসে আবার দেখান পেসের বৈচিত্র, মঈন-আবু হায়দার সেটি সামলে ৭ রানের বেশি তুলতে পারেননি।
শেষ ওভারের প্রথম বলে ডিপ এক্সট্রা কাভারে সাকিবের হাতে বল রেখে দুই রান চুরি করতে গিয়ে রানআউট হয়ে ফেরেন মঈন, ৩২ বলে ৩৮ রান করে। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আবু হায়দারের পর শহীদুল ইসলামকেও ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে যান শফিকুল, অবশ্য শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। কিন্তু শেষ ওভারে ২ রান ও ৩ উইকেট—বোলিংয়ে বরিশালের দাপটের প্রতিফলনই ছিল সেটি।