ভারতীয় ক্রিকেটে এই ঘটনা ৮২ বছরে প্রথম
>অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে হার্দিক পান্ডিয়া ও কেএল রাহুলকে। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে ৮২ বছর আগে শৃঙ্খলাজনিত কারণে একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল। ইংল্যান্ড সফর থেকে দেশে ফিরেছিলেন লালা অমরনাথ। ক্রিকেট ইতিহাসেই টুকরো এক কৌতূহল জাগানিয়া অংশ হয়ে আছে সেই ঘটনাটি।
‘১৯৩৬’-কে ফিরিয়ে আনল ‘২০১৯’। বিদেশ সফর থেকে কোনো খেলোয়াড়কে শৃঙ্খলাজনিত কারণে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটে এতটা বিরল, এর আগের উদাহরণটি খুঁজতে ফিরে যেতে হচ্ছে ৮২ বছর আগে। যেবার অধিনায়কের সঙ্গে বিবাদের জের ধরে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল ভারতীয় কিংবদন্তি লালা অমরনাথকে। আট দশক পেরিয়ে যে ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন হার্দিক পান্ডিয়া ও কেএল রাহুল। কফি উইথ করনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিতর্কিত সব কথাবার্তা বলার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন এই দুই ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া সফরের দল থেকে তাই দেশের বিমান ধরতে হয়েছে হান্ডিয়া ও রাহুলকে।
১৯৩৬ সালের সেই ঘটনা অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেটেই বেশ আলোচিত ছিল। এখনো ক্রিকেটের গ্রন্থকীটেরা সুযোগ পেলেই সেই গল্প বলতে ভালোবাসেন। ঘটনাটি বেশ কৌতূহল জাগানিয়াই ছিল।
১৯৩৬ সালে প্রথম পূর্ণ সফরে গিয়েছিল ভারত। ভারত তখনো ব্রিটেনের শাসনের অধীনেই ছিল। সেই সফরে ভারতের অধিনায়ক হওয়ার জন্য বেশ ধরাধরি করেছিলেন বিজয়নগ্রামের মহারাজকুমার, ‘ভিজি’ নামে যিনি পরিচিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বই ইংল্যান্ডে তিনটা টেস্ট খেলতে যায় ভারত। কিন্তু ক্রিকেটের অধিনায়ক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা তাঁর ছিল না। যার পরিণতি দেখা গিয়েছিল মাঠে। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেই খাবি খাচ্ছিল ভারত।
এমনকি সাধারণত এসব বিষয়ে চুপ থাকার রেওয়ার ভেঙে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমও বেশ লেখালেখি করেছিল বিষয়টি নিয়ে। ভারতীয় ড্রেসিং রুম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। অমরনাথ, সিকে নাইডু, বিজয় মার্চেন্টের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা ছিলেন এক দিকে। বিষয়টি চূড়ান্ত খারাপ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায় প্রথম টেস্ট শুরুর আগের প্রস্তুতি ম্যাচে। সেই ম্যাচে ভিজির সঙ্গে ব্যাট করতে নামার জন্য প্যাড পরে তৈরি থাকলেও অমরনাথকে নামানো হচ্ছিল না। তাঁর বদলে নামানো হচ্ছিল বাকিদের। অমরনাথ দিনের শেষে সুযোগ পান।
অমরনাথ এমনিতে ওই সফরে পিঠের চোটে ভুগছিলেন। কিন্তু কিছুতেই বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছিল না তাঁকে। লর্ডস টেস্টের আগের প্রস্তুতি ম্যাচও খেলতে বলা হয়। আবার মাঠেও নামানো হচ্ছিল না। সব মিলিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অমরনাথ। ড্রেসিং রুমে ফিরে নিজের ব্যাগ, কিট সবকিছু ছুড়ে ফেলেন। পাঞ্জাবি ভাষায় ক্ষোভ উগরে দেন।
ভিজি প্রতিশোধ নিতে দেরি করেননি। দলের ম্যানেজার মেজর জ্যাক ব্রিটেন-জোন্স অমরনাথকে প্রথম টেস্ট শুরুর আগেই ভারতে ফেরত পাঠান। ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে অমরনাথকে আরও ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল! সেই সফরে টেস্ট খেললেও বিজয় মার্চেন্টও ভিজির প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। কথিত আছে, দলের আরেক সদস্য মুশতাক আলীকে ভিজি সোনার ঘড়ি ঘুষ সেধেছিলেন মার্চেন্টকে রান আউট করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে!
মার্চেন্ট, অমরনাথরা পরে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে শ্রদ্ধেয় হয়ে আছেন। কিন্তু ভিজিকে খুব বেশি লোকে চেনে না। চিনলেও ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে অধিনায়ক হিসেবেই চেনে।
ভারতীয় ক্রিকেটে এর পরে আরও অনেকবারই শৃঙ্খলাজনিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কাউকে দেশে ফেরত পাঠানোর নজির ছিল না। শুধু একবার এক খেলোয়াড় নিজেই দেশে ফিরে এসেছিলেন, কাউকে কিছু না বলে। সেটিও ইংল্যান্ড সফরে, ১৯৯৬ সালে। অধিনায়ক আজহারউদ্দিনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে খেপে গিয়ে কাউকে কিছু না বলে সফরের মাঝপথে দেশে ফেরেন নভজ্যোত সিং সিধু। এর ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে একাদশে সুযোগ পান সিধুরই রুমমেট। অভিষেকে সেই তরুণ লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছিল। পরে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেয় স্থায়ীভাবে। সেই তরুণের নাম সৌরভ গাঙ্গুলি!
আরও পড়ুন
-
ঢাকাসহ ৫ জেলা: মাধ্যমিক কাল বন্ধ হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলাই থাকছে
-
ঢাকাসহ ৫ জেলার মাধ্যমিক স্কুল–কলেজ কাল বন্ধ ঘোষণা
-
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে দপ্তরে উপাচার্য, শিক্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
-
সাবেক স্ত্রীর করা ৩ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান
-
কাজ না পেয়ে প্রকৌশলীর শার্টের কলার ধরলেন ঠিকাদার