নরমান গর্ডন যখন ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে, পুরো বিশ্বকে থামিয়ে দিতে হাজির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই মহাযুদ্ধের আগে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সবার চোখ কেড়েছিলেন এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। ওয়ালি হ্যামন্ড ও লেন হাটনের মতো সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান তো ভক্তই হয়ে গিয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী গর্ডনের। ইংল্যান্ড ওপেনার হাটন গর্ডনকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ও শুধু ইংল্যান্ড সফরে যাক, দেখবেন কত বড় তারকা হয়ে যাবে।’
কিন্তু সেই সুযোগ পাননি গর্ডন। ১৯৩৯ সালে হিটলারের জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে যায় মহাযুদ্ধ। ১৯৪৫ সালে জাপানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি সে যুদ্ধের। যুদ্ধ থামার পর আবার সবকিছু স্বাভাবিক হলে ১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেই দলে ছিলেন না গর্ডন। বয়স হয়ে গেছে ৩৫, তাই ‘বুড়ো’ এই ফাস্ট বোলারকে দেশে রেখেই ইংল্যান্ডে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তখন কে জানত, একদিন এই বয়সই গর্ডনকে অমর করে রাখবে ক্রিকেট বিশ্বে! সবচেয়ে বেশি বয়স পাওয়া টেস্ট ক্রিকেটার যে এই দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারই। শুধু এটুকু বললেই খুব বেশি কিছু বলা হয় না। জীবনে ইনিংসে নড়বড়ে নব্বই পেরিয়ে ‘সেঞ্চুরি’ ছোঁয়া একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার তিনিই। ২০১১ সালে ‘১০০’ পুরো করা সেই গর্ডনের আজ জন্মদিন।
বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ১১৪ বছর। কিন্তু গর্ডনের বয়সের গণনাটা থেমে গেছে ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বরেই। সেদিন জোহানেসবার্গের হিলব্রোতে ১০৩ বছর ২৭ দিন বয়সে মারা যান ১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে পাঁচটি টেস্ট খেলা গর্ডন।
২০১১ সালে গর্ডনের জন্মশতবার্ষিকীতে পুরো ক্রিকেট বিশ্বই আলোড়িত হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড জোহানেসবার্গে সাড়ম্বরে উদ্যাপন করে গর্ডনের জন্মদিন। নিউ ওয়ান্ডারার্সের লংরুমে গর্ডন কাটেন ক্রিকেটীয় আবহে বানানো জন্মদিনের কেক। সেদিন লংরুমে গর্ডনের পাশে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের তারকাকুলের প্রায় সবাই।
এই জোহানেসবার্গেই ১৯৩৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক গর্ডনের। তখন অবশ্য নিউ ওয়ান্ডারার্স নয়, খেলা হতো ওল্ড ওয়ান্ডারার্সে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওল্ড ওয়ান্ডারার্স ভেঙে রেলওয়ে স্টেশন বানানো হয়। আর নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানানো হয় পাশের এলিস পার্কে।
টেস্ট অভিষেকের প্রথম ইনিংসেই ৫ উইকেট নিয়েছিলেন গর্ডন। শিকার করেছিলেন ওয়ালি হ্যামন্ডের মতো ব্যাটসম্যানকে। দ্বিতীয় ইনিংসে গর্ডন শিকার করেন বিল এডরিচ ও এডি পেইন্টারকে। অভিষেক টেস্টে ৭ উইকেট নেওয়া গর্ডন কেপটাউনে দ্বিতীয় টেস্টেও একমাত্র ইনিংসে আবার ৫ উইকেট পান। সিরিজের পরের তিন টেস্টে আরও ৮ উইকেট পেয়েই থেমে যেতে হয় তাঁকে। এরপর বিশ্বযুদ্ধ, আর গর্ডনের বয়স বেড়ে যাওয়া। তাই ৫ টেস্টে ৪০.৩৫ গড়ে ২০ উইকেটেই থামল জীবনের ২২ গজে ১০০ পেরোনো একমাত্র ক্রিকেটারের টেস্ট ক্যারিয়ার।
গর্ডনের আগেই ‘১০০’ ছোঁয়ার খুব কাছে গিয়েছিলেন বিল টিনডিল। ২০১০ সালের ১ আগস্ট ৯৯ বছর ২২৬ দিন বয়সে মারা যান নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই ব্যাটসম্যান।
গর্ডনের রেকর্ড ভাঙবে কি না, কে জানে! এখনো যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স নিল হার্ভির। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ৮ অক্টোবর পা দেবেন ৯৭-এ। এ ছাড়া আরও পাঁচজন আছেন, যাঁরা ৯৫ পেরিয়ে গেছেন।