কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: টপ অর্ডার ও পেস আক্রমণে টানা দ্বিতীয় শিরোপার আশা
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রোমাঞ্চ নিয়ে আবারও হাজির বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। আগামী শুক্রবার পর্দা উঠবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের। কে জিতবে এবারের বিপিএল, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি। ট্রফিটা হাতে তুলতে সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির কে কেমন দল সাজিয়েছে, শক্তিমত্তায় কারা এগিয়ে, কারাই–বা পিছিয়ে—বিপিএল শুরুর আগে এসব নিয়েই এই আয়োজন—
মাশরাফি বিন মুর্তজা নেই, নেই তামিম ইকবালও। তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তাতে কোনো সমস্যা হয়নি গতবার। ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে স্থানীয় তরুণ ক্রিকেটার আর বিদেশিদের দারুণ সমন্বয়ে রেকর্ড তৃতীয় শিরোপা জিতেছিল তারা। রোমাঞ্চকর ফাইনালে হারিয়েছিল সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালকে। এবার বিদেশি ক্রিকেটারদের আগের পুলটা না থাকলেও বেশ শক্তিশালী দল গড়েছে কুমিল্লা। সব মিলিয়ে শিরোপার অন্যতম দাবিদার বলতে হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
মোস্তাফিজুর রহমানকে ধরে রাখা কুমিল্লা ড্রাফটে প্রথমে নেয় লিটন দাসকে, গতবারও যিনি খেলেছিলেন এ দলেই। স্থানীয়দের ক্ষেত্রে ইমরুল, সৈকত, মোসাদ্দেকদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তরুণ জাকের আলী, মাহিদুল ইসলাম, মুকিদুল ইসলামকে দলে নিয়েছে তারা।
বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে কুমিল্লায় আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, খুশদিল শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শাদাব খান, হাসান আলীদের মতো পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যাডউইক ওয়ালটন, ব্র্যান্ডন কিং আর আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি। অবশ্য পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সবাইকে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই পাচ্ছে না দলটি।
টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর থেকে সবাইকে টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে।
‘কুমিল্লা সব সময় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গড়ে। এ বছরও আমাদের একই পরিকল্পনা। চেষ্টা করব এ বছরও শিরোপা ধরে রাখার জন্য। মাঠে ভালো খেলতে হবে। কাগজে–কলমে যত শক্তিশালীই হই না কেন, মাঠে খেলতে না পারলে লাভ হবে না।’ইমরুল কায়েস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস অধিনায়ক
টপ অর্ডার, অলরাউন্ডার ও পেসে শক্তিশালী দলটির এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য, জানিয়েছেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস, ‘কুমিল্লা সব সময় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গড়ে। এ বছরও আমাদের একই পরিকল্পনা। চেষ্টা করব এ বছরও শিরোপা ধরে রাখার জন্য। মাঠে ভালো খেলতে হবে। কাগজে–কলমে যত শক্তিশালীই হই না কেন, মাঠে খেলতে না পারলে লাভ হবে না।’
Also Read: ফরচুন বরিশাল: গতবার রানার্সআপ, এবার?
অবশ্য শুরুতেই শেষের ব্যাপারটি ভাবতে চান না কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তাঁর লক্ষ্য—ধীরে ধীরে দলটিকে একটা ‘শেপ’-এর মধ্যে আনা, মোমেন্টাম ধরে রাখা। তবে চ্যাম্পিয়নশিপ ‘ডিএনএ’ বলে কোনো ব্যাপার যদি বিপিএলে কোনো দলের থেকে থাকে, সেটি সবচেয়ে বেশি আছে তো কুমিল্লারই।
Also Read: খুলনা টাইগার্স: প্রথম শিরোপার খোঁজে
শক্তি
টপ অর্ডার ও পেস
লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, ডেভিড ম্যালান, মোহাম্মদ রিজওয়ান—কুমিল্লার টপ অর্ডার যেকোনো দলের জন্যই ভীতিজাগানিয়া। লিটন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব সংস্করণে দারুণ একটি বছর কাটিয়েছেন, বিপিএলে ইমরুল পরীক্ষিত পারফরমার।
ম্যালান সর্বশেষ মৌসুমে ১৪৫-এর ওপর স্ট্রাইকরেট ও প্রায় ৫০ গড়ে ব্যাটিং করেছিলেন। রিজওয়ান তো একের পর এক রেকর্ডভাঙা সময় কাটিয়েছেন। টপ অর্ডারে কুমিল্লার অপশন হিসেবে আছেন দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান চ্যাডউইক ওয়ালটন ও ব্র্যান্ডন কিং। অন্য কয়েকটি দলের যেখানে বড় একটি দুশ্চিন্তা টপ অর্ডারের ব্যাটিং, কুমিল্লার অন্যতম শক্তির জায়গা সেটিই।
অন্যদিকে পেসে মোস্তাফিজুর যেকোনো দলের জন্যই বড় অস্ত্র, বাংলাদেশের কন্ডিশনে তো আরও বেশি। শাহিন শাহ আফ্রিদিকেও ফিট হওয়া সাপেক্ষে দলে পাওয়ার আশা করছে কুমিল্লা, আছেন হাসান আলীও। অপশন হিসেবে আছেন ফজলহক ফারুকিও। বিদেশি বলে হয়তো আফ্রিদি খেললে আর কাউকে খেলানোর সুযোগ কুমিল্লা পাবে না। তবে স্থানীয় আবু হায়দারের সঙ্গে থাকবেন মুকিদুল ইসলাম ও তরুণ আশিকুর জামান।
দুর্বলতা
টেকসই হবে মিডল অর্ডার?
টপ অর্ডারে শক্তিশালী দলটির একটি দুশ্চিন্তা হতে পারে মিডল অর্ডার। মোসাদ্দেক হোসেন, জাকের আলী, সৈকত আলী, মাহিদুল ইসলামের মতো স্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে এ দায়িত্ব নিতে হতে পারে মোহাম্মদ নবিকে। যদিও নবির ভূমিকা মূলত ফিনিশার হিসেবেই।
Also Read: ঢাকা ডমিনেটরস: গতিই যাদের ভরসা
যাঁর ওপর চোখ
লিটন দাস
সর্বশেষ বিপিএলটা লিটনের জন্য ছিল গড়পড়তাই। ২৩.২২ গড়ে ১ ফিফটিতে করেছিলেন ২০৯ রান। তবে ২০২২ সাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত কাটিয়েছেন লিটন, তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান তাঁর। এবারের বিপিএলে লিটনের ওপর বাড়তি নজর থাকবেই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস দল
ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), মোস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, জাকের আলী, আশিকুর জামান, তানভীর ইসলাম, মুকিদুল ইসলাম, নাঈম হাসান, সৈকত আলী, মাহিদুল ইসলাম, আবু হায়দার, চ্যাডউইক ওয়ালটন, মোহাম্মদ রিজওয়ান, খুশদীল শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, আবরার আহমেদ, হাসান আলী, শাদাব খান, ব্র্যান্ডন কিং, মোহাম্মদ নবী, ফজলহক ফারুকি ও ডেভিড ম্যালান।
Also Read: রংপুর রাইডার্স: বিদেশি শক্তিতে বলীয়ান