কোচ গম্ভীর ও অধিনায়ক শুবমান গিল
কোচ গম্ভীর ও অধিনায়ক শুবমান গিল

ভারতের দলটা আসলে চালাচ্ছেন কে

ভারতীয় দলের নেতৃত্ব এখন আসলে কার হাতে—তরুণ অধিনায়ক শুবমান গিল, নাকি প্রভাবশালী কোচ গৌতম গম্ভীরের? একাদশ নির্বাচন ও মাঠের সিদ্ধান্ত ঘিরে এই প্রশ্ন এখন বিতর্কের কেন্দ্রে।

অধিনায়ক না কোচ—এই মুহূর্তে ভারত ক্রিকেট দলের নেতৃত্বে কে? অধিনায়কের নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি বা বিরাট কোহলি হলে হয়তো এই প্রশ্ন এখন উঠত না। কিংবা বর্তমানে ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর না হলেও হয়তো সরাসরি এমন প্রশ্ন আসত না।

তবে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক তরুণ শুবমান গিল বলেই প্রশ্নটা জোরালো হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ভারত–ইংল্যান্ড ‘অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফি’তে একাদশ বা মাঠে দল পরিচালনার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে।

গম্ভীর অধিনায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন আইপিএলে কলকাতা ও দিল্লিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি সব সময় নিজের পছন্দমতো একাদশ সাজাতেন বলেই শোনা যেত। এরপর মেন্টরের দায়িত্ব পালন করে তিনি ২০২৪ সালে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। সেই মৌসুমে দলের নেতৃত্ব দেন শ্রেয়াস আইয়ার। পর্যাপ্ত কৃতিত্ব না পাওয়ায় যিনি পরের মৌসুমেই কলকাতা ছাড়েন। বোঝাই যাচ্ছে, গম্ভীর মেন্টর বা অধিনায়ক যা–ই হন না কেন, তাঁর পরিকল্পনাতেই দল চলে।

ভারতের কোচ হওয়ার পরও কি একইভাবে দল চালান গম্ভীর? হয়তো। কোচিং স্টাফে সে কারণেই নিজের পছন্দের লোকদের জায়গা দিয়েছেন তিনি। মরনে মরকেলকে বানিয়েছেন বোলিং কোচ, রায়ান টেন ডেসকাটেকে ফিল্ডিং কোচ। এর মধ্যে আবার টেস্ট দল থেকে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির মতো তারকারাও অবসর নিয়েছেন।

অধিনায়ককে নিয়েই তো আলোচনা হবে, অধিনায়কত্ব নিয়েই কথা উঠবে। তাই সিদ্ধান্তটা তাঁরই হওয়া উচিত।
সুনীল গাভাস্কার

মানে, বর্তমান দলে গম্ভীরকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই বললেই চলে।
এমন এক দাপুটে কোচকে কি গিল বলতে পারেন, এটা আমার দল। একাদশ আমি ঠিক করব! কুলদীপ যাদবকে টানা চার টেস্টে একাদশের বাইরে রাখার প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন সুনীল গাভাস্কারের সামনে রেখেছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে।

এই সিরিজে এখনো খেলা হয়নি কুলদীপের

উত্তরে গাভাস্কার বলেন, ‘আমাদের সময়ে কোনো কোচ ছিল না। আমাদের সঙ্গে থাকতেন সাবেক খেলোয়াড়েরা, যাঁরা ম্যানেজার বা সহকারী ম্যানেজার হিসেবে থাকতেন। ওনারা এমন মানুষ ছিলেন, যাঁদের কাছে যাওয়া যেত, কথা বলা যেত। তাঁরা কিছু পরামর্শ দিতেন লাঞ্চে, দিনের খেলা শেষে বা ম্যাচের আগের রাতে। তাই অধিনায়ক ও কোচের এই যুগল ভূমিকা আমার পক্ষে বোঝা কঠিন। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, তখন আমাদের সঙ্গে কোনো সাবেক খেলোয়াড় ছিলেন না।’

তবে সিদ্ধান্ত যে অধিনায়কেরই নেওয়া উচিত, সেটা স্পষ্ট করেছেন গাভাস্কার। তিনি বলেন, ‘মূল কথা হলো, দিনের শেষে এটা অধিনায়কের দল। আপনি এটা বলতে পারেন না যে তিনি (অধিনায়ক) কাউকে চাননি—যেমন শার্দুল ঠাকুর বা কুলদীপ যাদবের ক্ষেত্র হতে পারে—ওদের দলে থাকা উচিত ছিল। তিনি যদি না চান, তাহলে সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত। অধিনায়ককে নিয়েই তো আলোচনা হবে, তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়েই কথা উঠবে। তাই সিদ্ধান্তটা তাঁরই হওয়া উচিত। আমি জানি, বাইরে দেখানোর জন্য অনেক সময় সবকিছুই খুব মিলেমিশে চলছে এমন দেখানো হয়, কিন্তু বাস্তবে অধিনায়কই মূল দায়িত্বে। মাঠে যাঁদের নেতৃত্ব দিতে হবে, সেটা তাঁরই দল।’

ম্যানচেস্টার টেস্টে ভারতের পেসাররা সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। তবুও তাঁদের ওপরই ভরসা রেখেছেন গিল। স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে বল তুলে দিয়েছেন ইনিংসের ৬৯তম ওভার, যখন ইংল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ৩০৫।

সুন্দরকে বল না দেওয়ার দায় ক্রিকেট বিশ্লেষক সঞ্জয় মাঞ্জরেকার দিয়েছেন কোচ গৌতম গম্ভীরকে। এটিও দল কে চালান, তার একটা ইঙ্গিত।

নিজেকে প্রমাণ করে চলছেন সুন্দর। তবু যেন অধিনায়ক গিল তাঁকে ভরসা করছেন না!

ধারাভাষ্যকক্ষে মাঞ্জরেকার বলেন, ‘ইনিংসের ৬৫তম ওভার চলছে। সুন্দরকে দলে রাখার কারণটা কি তাহলে? যদি তার সামর্থ্য নিয়ে নিশ্চয়তার দরকার থাকত, তাহলে আগের ম্যাচে পাওয়া ৪ উইকেটই যথেষ্ট ছিল। এটা একেবারেই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত—এমন একটি সিদ্ধান্ত, যা আসলে নেওয়াই উচিত হয়নি। আর এর জন্য আমি গৌতম গম্ভীরকেই দায়ী করি। গিল একজন তরুণ অধিনায়ক, এটা তার পক্ষে একটা যুক্তি হতে পারে এবং আমরা তার কিছুটা ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেই পারি। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই কোচের কিছু বলার থাকা উচিত ছিল।’

সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতে হেরে যাওয়া ভারত আজ ওল্ড ট্রাফোর্ডে তৃতীয় হার এড়ানোর লড়াইয়ে নামবে। পঞ্চম দিনে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নামবে ২ উইকেটে ১৭৪ রান। এখনো শুবমান গিলের দল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ১৩৭ রানে পিছিয়ে আছে।