তাইজুলের উইকেট পাওয়ার আনন্দ
তাইজুলের উইকেট পাওয়ার আনন্দ

মাইলফলকের ম্যাচে জয় থেকে ৪ উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

তাইজুল ইসলামকে আলিঙ্গনে টেনে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। কিছুক্ষণের জন্য যেন তাঁকে তুলে নিলেন অন্য সবার চেয়েও উঁচুতে। তাঁদের এই আনন্দের ভাগাভাগির মুহূর্তটা টেস্ট উইকেটের সংখ্যায় তাইজুল চূড়ায় উঠে যাওয়ার পর। দুজনের মুখে চওড়া হাসি, চারপাশে তাঁদের ঘিরে উচ্ছ্বসিত সতীর্থরা। মুশফিক-তাইজুলের এ মুহূর্তই মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের প্রতীকী ছবি।

কে কোন মাইলফলকে পৌঁছালেন—ম্যাচের ফলের চেয়ে তা নিয়েই বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টে আগ্রহটা বেশি। নিজের শততম টেস্টে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি করে রেকর্ডের পাতায় নাম তুলেছেন মুশফিক, লিটন দাসও তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। আর সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে দেশের শীর্ষ টেস্ট উইকেটশিকারির রেকর্ডটা তাইজুলের করে নেওয়া তাতে নতুন সংযোজন।

ম্যাচের ফল? তা গত পরশু বাংলাদেশ যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ২১১ রানে এগিয়ে থেকে আবার ব্যাট করতে নেমেছিল, তখনই একরকম ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচের গতিপথ এখনো সেদিকেই। আগামীকাল শেষ দিনে জিততে হলে আয়ারল্যান্ডকে করতে হবে ৩৩৩ রান, হাতে ৪ উইকেট। আক্ষরিক অর্থেই ‘মিরাকল’ ঘটে না গেলে এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়বঞ্চিত হওয়ার কারণ নেই।

আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ

আজ চতুর্থ দিনের সকালে বাংলাদেশ যখন ব্যাটিংয়ে নামে, তখনই লিড ছিল ৩৬৭ রানের। মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে ৪০০ রান করা যেকোনো দলের জন্যই কঠিন। বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিল আসলে ব্যক্তিগত মাইলফলক পূরণের।

দিনের শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে অবশ্য একটু চাপেই পড়ে গিয়েছিল তারা। শুরুটা হয় সাদমান ইসলামকে দিয়ে। ম্যাকব্রাইনের বলে তিনি ৭৮ রানে এলবিডব্লু হন। সিলেটে প্রথম টেস্টে খেলা একমাত্র ইনিংসে করেছিলেন ৮০, এবার ২ কম। সিরিজে দুবার সেঞ্চুরি সম্ভাবনা জাগিয়েও কোনোবারই তা করতে পারলেন না সাদমান। তাঁর বিদায়ের পরের ওভারে আউট অধিনায়ক নাজমুল হোসেনও।

তবে মধ্যাহ্নভোজের আগেই মুমিনুল হক হাফ সেঞ্চুরি পেরিয়ে সেঞ্চুরির পথে ছুটতে শুরু করেন, তিনি ৭৯ আর মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রানে। দ্বিতীয় সেশনেও তাই ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তবে তা ছিল মাত্র ১০ মিনিটের জন্য।

লাঞ্চ বিরতিতে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন মুশফিক–মুমিনুল

বাংলাদেশের ব্যাটিংটা থেমেছে গ্যাভিন হোয়ের বলে মুমিনুলের ক্যাচে। ১১৮ বলে ৮৭ রান করেন তিনি। মুমিনুল আউট হওয়ার পরই ড্রেসিংরুমের বাইরে এসে ইনিংস ঘোষণা দেন অধিনায়ক নাজমুল। তাঁর ওই ইশারার পর সবার আগে দৌড় শুরু করেন মুশফিকই।

তবে শততম টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আফসোসও হয়তো সঙ্গী হয়েছে তাঁর। অবশ্য ইনিংস ঘোষণার আগেই ৫৩ রান করে মুশফিক একটা রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। শততম টেস্টের দুই ইনিংসেই পঞ্চাশ রানের বেশি নেই রিকি পন্টিং ছাড়া আর কারও।

৫০৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যে খেলতে নামা আয়ারল্যান্ড প্রথম উইকেট হারায় ২৩ রানে। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বলবার্নিকে এলবিডব্লু করে রেকর্ড গড়েন তাইজুল। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় সাকিবের পাশে বসেছিলেন তিনি। দুজনেরই উইকেট ছিল ২৪৬। ১৩ রান করা বলবার্নির এলবিডব্লুতে সাকিবকে ছাড়িয়ে যান তাইজুল। এখন তিনিই টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

তাইজুল ছাড়াও চতুর্থ দিনের বাকি সময়ে আইরিশ ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। আয়ারল্যান্ডের হারানো ৬ উইকেটের মধ্যে তাঁরা দুজনই নিয়েছেন ৫টি, বাকি ১টি পেয়েছেন পেসার খালেদ আহমেদ।

আইরিশদের প্রাপ্তি বলতে শুধু হ্যারি টেক্টরের হাফ সেঞ্চুরি। তবে তিনিও ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। ৯৩ বল খেলে ৩৪ রান করা কার্টিস ক্যাম্পার ও ১৩ বলে ১১ রান করা অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন শেষ দিনে বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা কত লম্বা করতে পারেন অথবা অবিশ্বাস্য কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারেন কি না, সেটিই কেবল এই ম্যাচের এখনকার অপেক্ষা।