অনেক কিংবদন্তির ভিড়ে তাঁর নামটা একটু আড়ালেই থেকে যেত, থেকে গেছে। তবে ১৯৭৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা ছিল বার্নার্ড জুলিয়েনের। বাঁহাতি পেস, আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আর প্রাণবন্ত ফিল্ডিং মিলিয়ে তিনি ছিলেন দারুণ এক অলরাউন্ডার। সেই জুলিয়েন অন্যলোকে চলে গেলেন গতকাল। উত্তর ত্রিনিদাদের ভালসেইন শহরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি, তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে ২৪ টেস্ট ও ১২ ওয়ানডেতে খেলেছেন জুলিয়েন। ৫০ বছর আগে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেছিলেন দুর্দান্ত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিয়েছিলেন ২০ রানে ৪ উইকেট, সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭ রানে ৪ উইকেট। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩৭ বলে ২৬ রানের ঝলমলে ইনিংস। সেই টুর্নামেন্টেই গড়ে উঠেছিল তাঁর ‘অলরাউন্ড’ খ্যাতি।
জুলিয়েনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো গার্ডিয়ানকে লয়েড বলেছেন, ‘ও সব সময় শতভাগের বেশি দিত। কখনো দায়িত্ব এড়াত না। ব্যাট-বল দুটোতেই নির্ভর করা যেত ওর ওপর। দারুণ ক্রিকেটার ছিল।’
লর্ডসেও দারুণ কিছু স্মৃতি আছে জুলিয়েনের। ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেখানে করেছেন নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, ১২১ রানের সেই ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিয়েছিল দারুণ এক জয়। পরের বছর একই দলের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৫ উইকেটও।
লয়েডের স্মৃতিচারণায় এসেছে সেই সময়ের কথাও, ‘ওর প্রতি আমাদের ছিল অফুরন্ত সম্মান। খেলা দারুণ উপভোগ করত, আর সবাই ওকে ভালোবাসত। মনে আছে, লর্ডসে আমরা টেস্ট জেতার পর অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। ও ছিল আমাদের দলের জন্য সত্যিকারের সম্পদ। যেখানেই গেছি, ও ছিল সবার শ্রদ্ধার পাত্র।’
দেশের হয়ে খেলার পাশাপাশি ১৯৭০ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল কেন্টের হয়েও খেলেছেন জুলিয়েন। তবে ১৯৮২-৮৩ সালে বর্ণবৈষম্যের সময় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করা বিদ্রোহী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে যোগ দেওয়ার পর থেমে যায় তাঁর ক্যারিয়ার।
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি ড. কিশোর শ্যালো বলছেন, ‘বার্নার্ড জুলিয়েনের পরিবার, বন্ধু আর আপনজনদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা। তাঁর চলে যাওয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়—যে জীবন কোনো উদ্দেশ্যে নিবেদিত, তা আসলে কখনো শেষ হয় না। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই শোকের সময়ে তাঁর পরিবারের পাশে আছে।’