ভারতের কংগ্রেস দলীয় সংসদ সদস্য শশী থারুর বলেছেন, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটারদের হাত মেলানো উচিত ছিল। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময়ও দুই দল বিশ্বকাপে হাত মিলিয়েছিল—এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে যা ঘটে, খেলার চেতনা তার চেয়ে আলাদা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত দুবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু কোনো ম্যাচেই খেলোয়াড় বা কোচিং স্টাফ পর্যায়ে পাকিস্তান দলের সঙ্গে ভারতের কেউ হাত মেলাননি। এ বিষয়ে ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বলেছেন, ক্রিকেট দল সরকার ও বিসিসিআইয়ের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আচরণ করছে।
এবারের এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান প্রথম মুখোমুখি হয় ১৪ সেপ্টম্বর ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে। সেদিন টসের সময় পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগার সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতের সূর্যকুমার। পরে খেলা শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা অপেক্ষায় থাকলেও ভারতের ক্রিকেটাররা ড্রেসিংরুমের দরজা বন্ধ করে দেন। একই ঘটনা ঘটে ২১ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরের ম্যাচেও।
ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে থারুর বলেন, খেলাধুলাকে আলাদা চোখে দেখা উচিত ছিল। তাঁর ভাষায়, ‘আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, যদি পাকিস্তান নিয়ে এত দৃঢ় অবস্থান থাকে, তবে আমাদের খেলা উচিত হয়নি। কিন্তু একবার যখন খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তখন খেলার চেতনা নিয়েই খেলা উচিত ছিল। আমাদের তাদের সঙ্গে হাত মেলানো উচিত ছিল।’
থারুর উদাহরণে টেনে এনেছেন ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের কথা। তখন কারগিল সীমান্তে যুদ্ধ চলছিল। সেই সময়ও ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত–পাকিস্তান। খেলোয়াড়েরা যথাযথ খেলোয়াড়সুলভ আচরণই দেখিয়েছিলেন। থারুর বলেন, ‘যে দিন আমাদের দেশের জন্য সৈন্যরা প্রাণ দিচ্ছিলেন, সে দিনও আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছি। তখনো আমরা তাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলাম। কারণ, খেলার চেতনা হলো ভিন্ন এক চেতনা। যা সেনাদের যুদ্ধক্ষেত্রের চেয়ে আলাদা।’
১৪ সেপ্টেম্বরের ম্যাচে ভারত হাত না মেলানোর পর ২১ সেপ্টেম্বরের খেলায় পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আচরণ ছিল আক্রমণাত্মক। সাহিবজাদা ফারহান ফিফটি পূর্ণ করে ব্যাটকে বন্দুকের ভঙ্গিতে উদ্যাপন করেন। হারিস রউফ বাউন্ডারির ধারে ভারতীয় দর্শকদের সামনে হাত দিয়ে বিমান ভূপাতিতের ভঙ্গি করেন, দেখান ৬–০ সংকেতও।
এর পেছনে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পটভূমিও আছে। গত এপ্রিলে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর মে মাসে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। পাল্টা হামলা শুরু হলে টানা চার দিন সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশ। পাকিস্তান দাবি করে, ওই যুদ্ধে তারা ভারতের ছয়টি বিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত তা অস্বীকার করে।
থারুর সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানের আচরণকেও অখেলোয়াড়সুলভ বলেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘পাকিস্তান দল প্রথমবার অপমানিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার যখন আমাদের অপমান করে, তখন এটা প্রমাণ করে দুই পক্ষের কারও মধ্যেই খেলার চেতনা নেই।’