পল কলিংউড
পল কলিংউড

সৈকতে চুমু, কর ফাঁকি আর জরিমানা—কোথায় হারালেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক

পল কলিংউডের উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডও (ইসিবি) নীরব।

বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। শিরোপাজয়ী সেই দলের অধিনায়ক পল কলিংউড পরবর্তী সময়ে হয়েছেন ইংল্যান্ড টেস্ট দলের সহকারী কোচ। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড হ্যামিল্টন টেস্টের পর থেকে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।

গত ১০ মাসের মধ্যে ইংল্যান্ড টেস্ট দল জিম্বাবুয়ে ও ভারতের বিপক্ষে খেলেছে। কিন্তু কলিংউডকে দেখা যায়নি। তাঁর এই ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাওয়া নিয়ে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডও (ইসিবি) নীরব।

ডেইলি মেইল বলছে, বোর্ডের আসন্ন অ্যাশেজ পরিকল্পনাতেও নেই কলিংউড। মাঠের বাইরের বিতর্কিত ঘটনা, বিশেষ করে যৌন কেলেঙ্কারি আর কর বিল নিয়ে প্রশ্ন তাঁকে ক্রিকেট দুনিয়া থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।

যৌন কেলেঙ্কারি

কলিংউড একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে কলিংউডের নামে ঝুলছে কেলেঙ্কারির মেঘ। সাবেক ইংল্যান্ড সতীর্থ গ্রায়েম সোয়ান ‘রিগ বিজ পডকাস্ট’-এ দাবি করেন, ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রচারিত একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে কলিংউডকে একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতে শোনা গেছে।

দুই ঘণ্টা দীর্ঘ এই ভয়েস নোটের সময় ও স্থান স্পষ্ট নয়। তবে সোয়ান সেটিকে মজা করে বর্ণনা করেছিলেন ‘বিশুদ্ধ কলিংউড’ হিসেবে। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে এটি তাঁর ‘দুর্দান্ত পর্যটক’ স্বভাবেরই উদাহরণ।

জরিমানা

কলিংউডের ব্যক্তিজীবনের এই বিষয় অবশ্য নতুন নয়। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের ম্যাচের আগের দিন কেপটাউনের একটি স্ট্রিপ ক্লাবে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। পরে তিনি দাবি করেছিলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই বেরিয়ে এসেছিলেন। তবে ইসিবি তাঁকে ১ হাজার পাউন্ড জরিমানা করেছিল। সেই ম্যাচে অধিনায়ক কলিংউড শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন।

সৈকতে চুমু বিতর্ক

বার্বাডোজের সৈকতে এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায় কলিংউডকে

২০২২ সালে ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ ব্যর্থতার পর কলিংউডকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচের দায়িত্ব দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাঠানো হয়েছিল। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হারের পর বার্বাডোজের এক সৈকতে এক নারীর সঙ্গে চুম্বনরত অবস্থায় তাঁর ছবি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

করের ঝামেলা

কলিংউডের সাম্প্রতিক বিতর্কের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন কর–সংক্রান্ত সমস্যা। যুক্তরাজ্যের রাজস্ব ও শুল্ক বিভাগ এইচএমআরসির সঙ্গে মামলায় হেরে যাওয়ায় তাঁকে ১ লাখ ৯৬ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২ কোটি) কর পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই রায়ের সূত্রপাত বহুদিন ধরে চলা এক তদন্ত থেকে। কলিংউডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি নিজের স্পন্সরশিপ আয়ের বড় অংশ ‘পিডিসি রাইটস’ নামের একটি ব্যক্তিগত কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরিয়ে করের দায় কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে একটি মামলা বাতিল হলেও এইচএমআরসি পুনরায় তদন্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত আদালতের রায় কলিংউডের বিরুদ্ধে যায়।

এ নিয়ে তিনি আপিল করলেও কাজ হয়নি। গত মে মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ থেকে নাম সরিয়ে নেওয়ার সময়ই কলিংউড কর মামলা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন বলে জানা গেছে।

নায়ক থেকে অদৃশ্য

ইংল্যান্ডের ২০০৫ অ্যাশেজ স্কোয়াডের সদস্য এবং প্রথম আইসিসি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক হিসেবে কলিংউড ইংলিশ ক্রিকেটের শীর্ষস্থানীয় নায়কদের একজন। তাঁকে একসময় পূর্ণকালীন কোচিং ভূমিকায় জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য মনে করা হয়েছিল।

কলিংউডের অধিনায়কত্বে ২০১০ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড

কলিংউড ৬৮টি টেস্টে ৪০-এর সামান্য বেশি গড়ে ৪২৫৯ রান করেছিলেন। মিডিয়াম পেস বোলিং এবং চমৎকার ফিল্ডিং দক্ষতার কারণে সাদা বলের ক্রিকেটেও ছিলেন মানানসই। ১৯৭টি ওয়ানডেতে ৫০৯২ রানের পাশাপাশি ১১১ উইকেট আছে তাঁর।

খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে যোগ দেন এবং বেন স্টোকস-ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যুগে দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। কিন্তু ইসিবির কর্মকর্তাদের মতে, কলিংউডের ক্রমবর্ধমান নিশাচর জীবনধারা, মাঠের বাইরে পেশাদারত্বের অভাব এবং চলমান ব্যক্তিগত সমস্যা তাঁকে পিছিয়ে দিয়েছে।

চলতি বছর যখন ২০০৫ অ্যাশেজজয়ী দল পুনর্মিলনী করে, সেখানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন, যা ক্রিকেট–দুনিয়া থেকে তাঁর উধাও হওয়া নিয়ে জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইসিবি নীরব, কলিংউড অধরা

অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের কোচিং প্যানেলে থাকছেন না কলিংউড

ডেইলি মেইল লিখেছে, কলিংউডের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইসিবি কোনো স্পষ্ট বিবৃতি দেয়নি। শুধু বলেছে, অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে ‘সহায়ক দলের এক বা দুটি পদ চূড়ান্ত করা হচ্ছে’। কলিংউড বা তাঁর প্রতিনিধি কেউই তাঁর দীর্ঘদিন জনসমাগম বা ক্রিকেটাঙ্গনে অনুপস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।