বাংলাদেশের পঞ্চম বোলারের দায়িত্বটা ভাগাভাগি করছেন সাইফ হাসান
বাংলাদেশের পঞ্চম বোলারের দায়িত্বটা ভাগাভাগি করছেন সাইফ হাসান

অঙ্ক মেলাতে গিয়ে কি আবার ভুল করবে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ দেখে খটকা লেগেছিল অনেকেরই। সুপার ফোরে ওঠার পর সেই খটকাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—বাংলাদেশের পাঁচ নম্বর বোলার কে? কিংবা আদৌ কোনো পাঁচ নম্বর বোলার খেলাবে তো বাংলাদেশ?

দুবাইয়ে আজ সুপার ফোরে বাংলাদেশের প্রথম পরীক্ষা। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের আগেও এ বিষয়টা আলোচনায় আছে। বাংলাদেশ পাঁচজন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামবে কি না, সেটি নির্ভর করছে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর। প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন, দলের শক্তি—সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু বিষয়টি আর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আফগানিস্তান ম্যাচেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল বাঁচা–মরার লড়াই। এমন ম্যাচে বাংলাদেশ নামল চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে—নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। দুজন স্পিনার, দুজন পেসার।

মূল বোলাররা দায়িত্ব ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন

১৫৪ রানের পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে নেমে চার বিশেষজ্ঞ বোলার কাজ চালালেও দুশ্চিন্তা বাড়ালেন দুই খণ্ডকালীন বোলার সাইফ হাসান ও শামীম হোসেন। অধিনায়ক লিটন দাস তাঁদের দিয়ে পঞ্চম বোলারের ৪ ওভারের কোটা পূরণ করেন। শামীম এক ওভারে দেন ১৬ রান। সাইফ ৩ ওভারে ৩৯। কারও ভাগ্যে উইকেট মেলেনি। অর্থাৎ দুজন মিলে ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৫৫ রান।

ক্রিকেট–বিশেষজ্ঞদের চোখ এড়িয়ে যায়নি এই চিত্র। ভারতের খ্যাতিমান ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে ও রোহান গাভাস্কারের কাছে ক্রিকবাজ জানতে চেয়েছিল, বাংলাদেশ কি মেহেদী হাসানকে একাদশে ফেরাবে? হার্শার উত্তর ছিল, ‘এটা ভেবেচিন্তে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত। হয়তো ম্যাচের দিন সকালে নেওয়া হবে।’

হার্শার যুক্তি ছিল সহজ—মেহেদী ডানহাতি অফ স্পিনার। তাই দেখতে হবে শ্রীলঙ্কার একাদশে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কজন আছেন। সে অনুযায়ী কন্ডিশন মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মেহেদী হাসান কি আজ একাদশে ফিরবেন?

বাংলাদেশ স্কোয়াডে মেহেদীই একমাত্র বিশেষজ্ঞ অফ স্পিনার। শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডারে তিন থেকে ছয় পর্যন্ত চার ব্যাটসম্যানই বাঁহাতি—কামিল মিসারা, কুশল পেরেরা, চারিত আসালাঙ্কা ও কামিন্দু মেন্ডিস। এই হিসাবেই মেহেদীর ফেরার সম্ভাবনা জোরালো।

অবশ্য যুক্তি আছে ব্যাটিংয়ের দিক থেকেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে ২০ ওভার খেলেও বাংলাদেশ তুলতে পেরেছিল মাত্র ১৩৯ রান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা–মরার ম্যাচে তাই ব্যাটিং শক্তি বাড়াতেই চার পরিবর্তন করে খেলেছিল দল। সাইফ ওপেনিংয়ে করেছিলেন ২৮ বলে ৩০। শেষ দিকে নুরুল খেলেছিলেন ৬ বলে ১২ রানের অপরাজিত ইনিংস। কৌশলটা পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল না।

তবু প্রশ্নটা থেকেই যায়। একজন বিশেষজ্ঞ বোলারের জায়গায় ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে কি ঠিক কাজ হলো? ১৫৪ রান তুলেও শেষ পর্যন্ত সেই ‘পার্ট টাইম’ ৪ ওভারে ৫৫ রান দেওয়ার খেসারতই দিতে হয়েছে। ব্যাটিংও পারেন, এমন একজন বিশেষজ্ঞ বোলার থাকলে দলের ভারসাম্য আরও ভালো হতো।

এশিয়া কাপে নুরুল হাসান একমাত্র ম্যাচটি খেলেছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে

আরেকটা দিক খেয়াল করুন। আফগানিস্তান ম্যাচে নুরুলের ভূমিকা সীমিত ছিল—একটি রানআউট আর ছোট ইনিংস। অথচ দলে উইকেটকিপার ছিলেন তিনজন। ফিনিশার হিসেবেও জাকের আলী নুরুলের চেয়ে এগিয়ে। সুতরাং পাঁচ নম্বর বোলারের জায়গা তৈরি করতে হলে ভাবতে হতে পারে নুরুলের জায়গা নিয়েই।

সাইফের জায়গায় কাউকে বসালেও বোলিং বিভাগে তেমন লাভ নেই। তবে পারভেজ হোসেনের নাম আসতে পারে। গত এক বছরে ওপেনিংয়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৪৪। রান রেট যেহেতু সুপার ফোরে গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই ভাবনাটাও অমূলক নয়।

সব হিসাবের শেষে প্রশ্ন একটাই—আবারও পার্টটাইমারদের দিয়ে ৫৫ রান দেওয়ার ঝুঁকি নেবে বাংলাদেশ, নাকি ব্যাটিংও পারেন—এমন বিশেষজ্ঞ বোলারকে একাদশে ফিরিয়ে আনবে?

শেষ পর্যন্ত আসল সমাধানটা স্পষ্ট—দলে বিশেষজ্ঞ বোলার চাই। দুবাইয়ের গরম, ধীর উইকেট ও স্পিনবান্ধব কন্ডিশনে মেহেদী হাসানের ফেরাটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়। নতুন বলেও তিনি কাজ করতে পারেন। শুরুতেই এক প্রান্ত থেকে নাসুম, অন্য প্রান্ত থেকে মেহেদী—এমন কৌশল খারাপ নয়। চাইলে পরে আনা যাবে।

সব হিসাবের শেষে প্রশ্ন একটাই—আবারও পার্টটাইমারদের দিয়ে ৫৫ রান দেওয়ার ঝুঁকি নেবে বাংলাদেশ, নাকি ব্যাটিংও পারেন—এমন বিশেষজ্ঞ বোলারকে একাদশে ফিরিয়ে আনবে? সাধারণ বুদ্ধি বলে, দ্বিতীয় পথটাই ভালো। কারণ বিশেষজ্ঞ বোলার ৪ ওভারে উইকেট না–ও পেতে পারেন, কিন্তু সাইফ-শামীমের মতো ৫৫ রান দিয়ে ফেরার সম্ভাবনা অন্তত কম। তাতে জয়ের পথও সহজ হবে, রান রেটও পুষ্ট হবে।

ভুলে যাওয়া চলবে না—সুপার ফোরে কিন্তু রান রেটই শেষ পর্যন্ত ‘পাস–ফেল’ নির্ধারণ করতে পারে।