‘আ ডে ফুল অব অ্যাকশন!’
মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে আজ প্রথম দিনে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় ১৫২ রানে। অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের যে পারফরম্যান্স, ১৫২ রানও যে ছোট সংগ্রহ নয়, সেটা ধারণা করা যাচ্ছিল।
১১০ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গিয়ে বেন স্টোকসের দল সেটা প্রমাণও করেছে। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে খেলেছে ৪৫.২ ওভার, ইংল্যান্ড ৩০ ওভারও খেলতে পারেনি, অলআউট হয় ২৯.৫ ওভারে।
৪২ রানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে তাই দ্বিতীয় ইনিংসেও আজই ব্যাটিংয়ে নামতে হয়। সেটা অবশ্য এক ওভারের জন্য। সে জন্যই সম্ভবত ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমেছিলেন পেসার স্কট বোল্যান্ড। স্ট্রাইক নিয়ে পুরো ওভার খেলে দিনটা কোনোভাবে তিনিই শেষ করেছেন।
মেলবোর্নে রেকর্ড ৯৪,১১৯ জন দর্শকের সামনে দিনের শেষ বলে বোল্যান্ড উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে পেয়েছেন বাউন্ডারি। তবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করেছেন, সেটা এখন থেকে বোল্যান্ড বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়া তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৪ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করায় ৪৬ রানে এগিয়ে স্বাগতিকেরা।
পুরো দিনে উইকেট পড়ল ২০টি। গত ৭৪ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টের এক দিনে ন্যূনতম ২০ উইকেট পড়ার এটাই প্রথম ঘটনা। সব মিলিয়ে এমন ঘটনা ঘটল সপ্তমবার এবং আজকের আগে সর্বশেষ এমন কিছু দেখা গেছে ১৯৫১ সালে অ্যাডিলেড ওভালে। সেই টেস্টে এক দিনে ২২ উইকেট পড়েছিল।
মেলবোর্নে এক দিনে সর্বোচ্চ উইকেট পড়েছে ২৫টি, সেটি ১৯০২ সালে, মানে ১২৩ বছর আগে। অ্যাশেজে ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সেই টেস্টে প্রথম দিনেই এতগুলো উইকেট পড়েছিল। তারপর ১২৩ বছরে অ্যাশেজে এই মাঠে টেস্টের প্রথম দিনে এটাই সর্বোচ্চ উইকেট (২০) পড়ার ঘটনা।
এসব পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, মেলবোর্নের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন ছিল। পেসারদের জন্য একেবারে স্বর্গরাজ্য। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভনও বলেছেন, ‘উইকেটে (বোলারদের জন্য) একটু বেশিই সাহায্য ছিল।’
কিন্তু ইংল্যান্ডের তাদের প্রথম ইনিংসে ১১০ রানে অলআউট হওয়া শুধু পিচের কারণেই হয়নি। অপরিণামদর্শী শট খেলতে গিয়ে যখন-তখন উইকেট হারানোতে ‘পিএইচডি’ করা এই ইংল্যান্ড দলের ব্যাটসম্যানের দায়ও আছে। বিশেষ করে টপ অর্ডারের।
একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। এবারের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের ১০ম উইকেট জুটি থেকে এসেছে মোট ১১৮ রান। আর ওপেনিং জুটি থেকে ১০১। নতুন বলে মিচেল স্টার্ক, বোল্যান্ডদের সামলানো নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে ওপেনারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতাও ইংল্যান্ডের দুর্দশার বড় কারণ।
ইংল্যান্ডের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে আজ সর্বোচ্চ রান করেন জ্যাক ক্রলি (৫)। ১৬ রানেই দলটি হারায় প্রথম ৪ উইকেট। এসবের বিপর্যয় অবশ্য হ্যারি ব্রুককে টলাতে পারেনি। দলীয় রান যখন ৩ উইকেট ৮, তখনো নিজের খেলা প্রথম বলেই উইকেট থেকে বেরিয়ে শট খেলার চেষ্টা করেছেন।
দলীয় রান যখন ৪ উইকেট ১৬, তখন একই কাজ করে সফল হন ব্রুক, ছক্কা মারেন। ৩৪ বলের ইনিংসে করেন ৪১ রান। সেটাই অবশ্য দুই দলের ইনিংস মিলিয়ে দিনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। আজ টেস্টে তিন হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন ব্রুক। টেস্টে কমপক্ষে দুই হাজার রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর স্ট্রাইক রেটই সবচেয়ে বেশি—৮৬.৮৫। তাঁর টেস্ট গড় ৫৪.১৭।
ব্রুক ছাড়া টেস্ট ইতিহাসে তিনজন ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা ৩০০০ রান করেছেন ৪৫–এর বেশি গড় ও ৭০–এর বেশি স্ট্রাইক রেটে— ভিভ রিচার্ডস, বীরেন্দর শেবাগ ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ব্রুকের খেলার ধরনে তিনি সফল, অন্যরা কী করছেন?
এককথায় ব্যর্থ হচ্ছেন। ব্রুকের পর দলটির সর্বোচ্চ রান এসেছে পেসার গাস অ্যাটকিনসনের কাছ থেকে। ২৮ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যামেরন গ্রিনের বলে আউট হন অ্যাটকিনসন। এ ছাড়া দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন শুধু স্টোকস (১৬)। অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল নেসার উইকেট নেন ৪টি, ৩ উইকেট বোল্যান্ডের। স্টার্ক নেন ২ উইকেট।
এর আগে অস্ট্রেলিয়াকে ১৫২ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পথে ৫ উইকেট নেন ইংলিশ পেসার জশ টাং। আউট করেন জ্যাক ওয়েদারাল্ড, মারনাস লাবুশেন, স্টিভ স্মিথ, মাইকেল নেসার ও স্কট বোল্যান্ডকে। মেলবোর্ন টেস্টে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম কোনো ইংলিশ বোলার এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন।
অস্ট্রেলিয়া: ১৫২ ও ৪/০ (বোল্যান্ড ৪*, হেড ০*; অ্যাটকিনস ০/৪)
ইংল্যান্ড: ২৯. ৫ ওভারে ১১০ (ব্রুক ৪১, অ্যাটকিনসন ২৮: নেসার ৪/৪৫, বোল্যান্ড ৩/৩০)।—প্রথম দিন শেষে।