
ফয়সালাবাদে ১৭ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২ উইকেটে হারাল পাকিস্তান।
ফয়সালাবাদে ফয়সালার আগে চরম নাটকীয়তা! ম্যাচটা দেখে থাকলে এমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমে তখন মুখ গোমড়া করে ছিলেন বাবর আজম, সালমান আলী আগার মাথায় হাত। মুহূর্তের মধ্যেই কী হতে যেন কী হয়ে যাচ্ছিল।
৬ উইকেট হাতে নিয়ে এক সময় ২৭ বলে মাত্র ২৩ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। ক্রিজে দুই থিতু ব্যাটসম্যান সালমান ও হুসেইন তালাত।
এরপর লুঙ্গি এনগিডি এই জুটি ভাঙতেই স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে ধস নামল। হাসান নেওয়াজ ও সালমানকে ফেরানোর পর জয়ের সম্ভাবনা জাগাল দক্ষিণ আফ্রিকা। মোহাম্মদ নেওয়াজকে আউট করার পর প্রোটিয়ারা ম্যাচটা আরও জমিয়ে তুলল।
তবে শেষ পর্যন্ত পারল না। ফয়সালাবাদে ১৭ বছর পর আন্তজার্তিক ক্রিকেট ফেরার দিনে সহজ ম্যাচ কঠিন বানিয়ে জিতল পাকিস্তান। ড্রেসিংরুমের সবাই ফেললেন স্বস্তির নিশ্বাস। শহরটির ক্রিকেটপ্রেমীরা হাসিমুখেই বাড়ির পথে যাত্রা করলেন।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬৩ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তান লক্ষ্যে পৌঁছাল ২ উইকেট আর ২ বল হাতে রেখে। এ জয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১–০ তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকেরা।
এ ম্যাচ দিয়েই পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছে শাহিন আফ্রিদির। দলকে জিতিয়েই তিনি মাঠ ছাড়লেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। উদ্বোধনী জুটিতে ১৬ ওভারে ৯৮ রান এনে দেন কুইন্টন ডি কক ও লুয়ান–দ্রে প্রিটোরিয়াস। দুজন মিলে শাহিন আফ্রিদি–নাসিম শাহদের বোলিং এমনভাবে সামলেছেন যে দেখে বোঝার উপায় ছিল না এটি প্রিটোরিয়াসের অভিষেক ওয়ানডে আর এ ম্যাচ দিয়েই প্রায় ২ বছর পর এই সংস্করণে ফিরেছেন ডি কক।
তবে এই জুটি ভাঙার পর আর বড় জুটি গড়তে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এক পর্যায়ে ৩৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯১ রান তুলে ফেলা দলটা আবরার আহমেদ ও সাইম আইয়ুবের ঘূর্ণি আর নাসিম শাহর তোপে আর ৭২ রান যোগ করতেই শেষ ৭ উইকেট হারায়।
আটে নামা করবিন বশ ক্যারিয়ারসেরা ৪১ রানের ইনিংস না খেললে আড়াই শও হতো না দক্ষিণ আফ্রিকার।
লক্ষ্য তাড়া করতে নামা পাকিস্তানের শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। সাইম আইয়ুব ও ফখর জামান উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৮৭ রান। তবে দুই ওপেনার আউট হওয়ার পর তারকা ব্যাটসম্যান বাবর আজম দ্রুত আউট হলে (১২ বলে ৭ রান) কিছুটা চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান।
এরপর অভিজ্ঞ মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে ৯১ ও হুসেইন তালাতের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন সালমান। তখন মনে হচ্ছিল, পাকিস্তান সহজেই ম্যাচটা জিততে চলেছে।
কিন্তু ডোনোভান ফেরেইরার বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব আর দুই নেওয়াজের ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ ব্যাটিংয়ে ম্যাচে ফেরার আভাস দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে শেষ পর্যন্ত জয়টা পাওয়া হয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.১ ওভারে ২৬৩ অলআউট (ডি কক ৬৩, প্রিটোরিয়াস ৫৭, ম্যাথু ব্রিটজকে ৪২, বশ ৪১; নাসিম ৩/৪০, আবরার ৩/৫৩, আইয়ুব ২/৩৯)।
পাকিস্তান: ৪৯.৪ ওভারে ২৬৪/৮ (সালমান ৬২, রিজওয়ান ৫৫, ফখর ৪৫, আইয়ুব ৩৯; বশ ২/৩২, এনগিডি ২/৪৬, ফেরেইরা ২/৫৩)।
ফল: পাকিস্তান ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সালমান আলী আগা।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ১–০ তে এগিয়ে।