
২০২৫ আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে চাইলে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল) কিংবা ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি রিশাদ হোসেনকে এখনই ‘বুকিং’ দিয়ে রাখতে পারে। কে জানে, ড্রাফট বা নিলাম থেকে রিশাদকে যদি অন্য কেউ নিয়ে নেয়!
রিশাদকে নিয়ে এমন বাড়তি চাহিদা দেখানোর কারণ নিশ্চয় আন্দাজ করতে পারছেন। বাংলাদেশের এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ইদানীং সৌভাগ্যের দূত হয়ে উঠেছেন। তিনি যে দলে খেলেন, সেই দলই চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা–উৎসবে মেতে উঠছে।
সর্বশেষ এমন দৃশ্য দেখা গেছে গত রাতে। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ফাইনালে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের দেওয়া ২০২ রানের লক্ষ্য সফলভাবে তাড়া করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিশাদের লাহোর কালান্দার্স, যা স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি লিগের ফাইনালে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।
শিরোপাজয়ী লাহোরের অংশ হয়ে আছেন আরও দুই বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও সাকিব ও মিরাজ ফাইনালের একাদশে ছিলেন না।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন বিশ্বমানের লেগ স্পিনারের অভাব ছিল সব সময়ের। তবে রিশাদের আগমনে সেই অভাব অনেকটাই দূর হয়েছে। আন্তর্জাতিক আঙিনায় তাঁর পা পড়েছে ২ বছর ২ মাস আগে। তবে অল্প সময়েই তিনি টি–টোয়েন্টি লিগের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নজর কেড়েছেন।
গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাওয়া সাফল্য রিশাদকে কানাডার গ্লোবাল টি–টোয়েন্টি লিগে খেলার সুযোগ করে দেয়। তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল টরন্টো ন্যাশনালস। কিন্তু ভিসা জটিলতায় কানাডায় যেতে পারেননি। তিনি খেলতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর দল টরন্টো ন্যাশনালসই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগের সর্বশেষ মৌসুমে রিশাদকে কিনেছিল হোবার্ট হারিকেন্স। তবে বাংলাদেশ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থাকায় বিসিবি তাঁকে অনাপত্তিপত্র দেয়নি। তিনি না খেললেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হোবার্ট হারিকেন্স, যা ছিল দলটির ইতিহাসে প্রথম শিরোপা।
গত বছর গায়ানায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) প্রথম আসরে রিশাদ খেলেছেন রংপুর রাইডার্সের হয়ে। বাংলাদেশের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথম দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতে নিয়েছিল।
কাল লাহোরের হয়ে পিএসএল জেতার আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএলও জিতেছেন রিশাদ।
এর মানে, রিশাদ খেলুন বা না খেলুন, গত ১২ মাসে তিনি যে ফ্র্যাঞ্চাইজিরই অংশ ছিলেন, তারাই শিরোপা–উৎসবে মেতেছে। রিশাদকে তাই সৌভাগ্যের দূত বলাই যায়।
তবে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন সাকিব আল হাসান। কাল লাহোর কালান্দার্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মোট ছয় দলের হয়ে সাতটি ট্রফি জিতলেন সাকিব।
এর আগে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে একবার করে বিপিএল, বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টস ও জ্যামাইকা তালাওয়াসের হয়ে একবার করে সিপিএল এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে দুবার আইপিএল জিতেছিলেন একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৭ ট্রফি জিতে সবার ওপরে আছেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ডোয়াইন ব্রাভো। এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা আবার আরেক ক্যারিবীয় তারকা আন্দ্রে রাসেলের।
২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সিডনি থান্ডারের হয়ে বিগ ব্যাশ, ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের জার্সিতে পিএসএল, জ্যামাইকা তালাওয়াসের জার্সিতে সিপিএল এবং ঢাকা ডায়নামাইসের হয়ে বিপিএল জিতেছিলেন তিনি।