
সিলেট টেস্টের প্রথম সকালের ঘটনা। ব্লেসিং মুজারাবানির লাফিয়ে ওঠা বলগুলো গ্লাভসে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলেন জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার নিয়োশো মায়াভো। কখনো বল ছুটে গিয়ে পড়ছে স্লিপে থাকা শন উইলিয়ামসের সামনে, কখনো ক্রেইগ আরভিনের। নতুন বল, সুইং, বাউন্স—সব মিলিয়েই হয়তো বলটা গ্লাভসে জমাতে পারছিলেন না মায়াভো! এমন ধারণা যদি করে থাকেন, তাহলে আপনার সেই ভুল এতক্ষণে ভাঙার কথা।
নতুন বলের মতো বল পুরোনো হলেও যে জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার হাতে রাখতে পারেন না, সেটি তো নিজেই প্রমাণ করেছেন। টেস্টের প্রথম তিন দিনে একে একে ক্যাচ ছেড়েছেন মুমিনুল হক, মাহমুদুল হাসান ও নাজমুল হোসেনের। তিনটিই ছিল সহজ সুযোগ। সুযোগগুলো মায়াভো নিতে পারলে, তৃতীয় দিন শেষেই ম্যাচ জয়ের কাছে থাকতে পারত জিম্বাবুয়ে।
মায়াভো মুমিনুলের ক্যাচ ছাড়েন টেস্টের প্রথম দিনে। মুমিনুল তখন এক রানও করতে পারেননি। ইনিংসের ১২তম ওভারে মুজারাবানির লাফিয়ে ওঠা এক ডেলিভারি মুমিনুলকে চমকে দিয়ে গ্লাভস ছুঁয়ে যায়। তবে উইকেটের পেছনে থাকা মায়াভো প্রতিক্রিয়া দেখাতেই দেরি করে ফেলেন। সেই ইনিংসে মুমিনুল করেন ৫৬ রান। চিন্তা করুন, ১৯১ রান থেকে ৫৬ চলে গেলে থাকে কত!
পরশু বিকেল মায়াভো ছেড়েছেন মাহমুদুলের ক্যাচ। মুজারাবানির বলে যে ক্যাচটি মায়াভো ছাড়েন, ওটা গ্লাভস হাতে ধরার চেয়ে ছাড়া কঠিন। মুজারাবানির প্রতিক্রিয়াও সেটা সবকিছু বলে দিচ্ছিল। অমন ক্যাচ মিস দেখে শূন্য লাথি মেরে জার্সিতে নিজের মুখ লুকিয়ে রাখেন এই পেসার।
মাহমুদুল যখন দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে জীবন পান, তখন তাঁর রান ৪, বাংলাদেশের ১ উইকেট ১৫। এরপরও খেলা হয়েছে প্রায় ৭ ওভার। ওই সময়ে অধিনায়ক নাজমুলকে উইকেটে আনা গেলে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে চাপে পড়ত আরও।
মুজারাবানির বলে দুটি ক্যাচ ছাড়া মায়াভো কাল ক্যাচ ফেলেছেন স্পিনার ওয়েসলি মাধেভেরের বলে। সেটিও নাজমুল হোসেনের, যিনি কিনা ৬০ রান নিয়ে আজ দিন শুরু করবেন। মাধেভেরের অফ স্টাম্পের বাইরে বল খোঁচা দিয়েছিলেন নাজমুল। উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচটিও নিতে পারেননি মায়াভো। ২৬ রানে বেঁচে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
একজন ব্যাটসম্যান এক ইনিংসে বারবার ভুল করবেন না! নাজমুলও এর পর থেকে বাড়তি সতর্ক থেকেই কালকের দিনটা শেষ করেছেন। শুধু এই তিনটি ক্যাচ নয়, ফিল্ডারদের থ্রোতে হাতে জমাতেও হিমশিম খেয়ে চলেছেন মায়াভো।
অথচ উইকেটকিপারের হাত জোড়াকেই মাঠে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আশপাশে ফিল্ডার থাকলেও তো নির্দ্বিধায় ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া হয় উইকেটকিপারের জন্য। কিন্তু মায়াভো যেন একেবারেই ব্যতিক্রম! ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা এই উইকেটকিপার করছেন সব মৌলিক ভুল। দেখে মনে হতেই পারে—জিম্বাবুয়ের উইকেটকিপার টেস্টটা বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন না তো!