সিরিজের ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক লিটন দাস ও আগা সালমান
সিরিজের ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক লিটন দাস ও আগা সালমান

দুঃস্বপ্নের প্রস্তুতির পর আসল সিরিজে কী করবে বাংলাদেশ

২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ দল তার আগের সময়টাতে টি–টোয়েন্টি ম্যাচই খেলবে বেশি। লাহোরে আজ থেকে শুরু পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটার তাই বাড়তি গুরুত্ব আগে থেকেই ছিল। এই সিরিজ দিয়েই যে শুরু হওয়ার কথা টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিমুখে বাংলাদেশ দলের যাত্রা!

সংযুক্ত আমিরাত সিরিজে অভাবনীয় হার সেই গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। শারজার সিরিজটিকে বাংলাদেশ দেখেছিল মূলত পাকিস্তান সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে। কিন্তু প্রস্তুতিমূলক সিরিজে হোঁচট খেয়ে বাংলাদেশ দলের ওপর এখন দায় চলে এসেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো কিছু করে শারজার দুঃস্বপ্ন ভোলার। লিটন দাসের নেতৃত্বে টি–টোয়েন্টিতে নবযাত্রার আশায় থাকা দলটার জন্য লাহোরের তিন ম্যাচ সিরিজে তাই জয়েই চোখ রাখছে সবাই।

পরশু লাহোরে দলের প্রথম দিনের অনুশীলন শেষে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের কথায়ও পাওয়া গেছে নতুনত্ব। আমিরাতের বিপক্ষে হার নাকি তাঁদের আরও উজ্জীবিত করবে! সেটা হলে তো ভালো; তবে যদি তা না হয়, টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের নবযাত্রাটা হবে ঝড়ে পড়া জাহাজের মতোই টালমাটাল।

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুশীলনে বাংলাদেশ দল

পাকিস্তান সিরিজের আগে চোটের হানা বাংলাদেশ দলের ভারসাম্যও কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। সৌম্য সরকার শারজা থেকেই চোট নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। আইপিএলের শেষ ম্যাচে পাওয়া চোটে পাকিস্তান সিরিজে নেই পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও। তাঁর বদলি হিসেবে যাওয়া খালেদ আহমেদ আবার দলের সঙ্গে পরশু প্রথম দিনে অনুশীলন করতে পারেননি তখনো লাহোরে না পৌঁছানোয়।

পিএসএল খেলতে গিয়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ভেতর পড়ে যাওয়া পেসার নাহিদ রানা মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারায় পাকিস্তান সফর থেকে নাম কাটিয়ে নেন। আমিরাতে অভিষেকটা ভালো না হলেও তাঁর গতি এখন বাংলাদেশের জন্য ‘এক্স ফ্যাক্টর’। তাসকিন আহমেদ আগে থেকেই দলে নেই, এখন নেই মোস্তাফিজও। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বোলিং শক্তিটা যে কমে গেছে—তা মানছেন কোচ সিমন্সও।  

যেকোনো সময়ই পাকিস্তান ভয়ংকর দল। তারা আজ খারাপ খেলতে পারে, কাল আবার অন্য রকম হয়ে যাবে। আপনারা বলছেন পাকিস্তান ভালো খেলছে না, কিন্তু পাকিস্তান তো পাকিস্তানই!
ফিল সিমন্স, প্রধান কোচ, বাংলাদেশ

বোলিংয়ে পুরো শক্তি না পেলেও এই সিরিজে প্রধান কোচের আশা–ভরসা বাংলাদেশের প্রথম ছয় ওভারের ব্যাটিং নিয়ে। আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হেরে গেলেও এক ম্যাচে ছক্কা–বৃষ্টি বইয়ে দিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন ওপেনার পারভেজ হোসেন। শেষ দুই ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে রান এসেছে তানজিদ হাসানের ব্যাট থেকেও।

এই সিরিজের আগে স্বাগতিক পাকিস্তান যে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, তা–ও অবশ্য নয়। তারাও এ বছরের মার্চে হওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই টি–টোয়েন্টি সংস্করণে নতুন দিনের সন্ধানে আছে। নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে নতুন দল গড়তে গিয়ে বাবর আজম–মোহাম্মদ রিজওয়ানের পর এবার দলে নেই শাহিন শাহ আফ্রিদিও।

আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হারার পরও বাংলাদেশ দলের কোচ সিমন্সের কাছে তাই জানতে চাওয়া হয়েছে—এটাই কি তবে পাকিস্তানকে হারানোর সেরা সময়? সিমন্স কিন্তু পাকিস্তানকে নিয়ে সেই পুরোনো কথাটাই মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘যেকোনো সময়ই পাকিস্তান ভয়ংকর দল। তারা আজ খারাপ খেলতে পারে, কাল আবার অন্য রকম হয়ে যাবে। আপনারা বলছেন পাকিস্তান ভালো খেলছে না, কিন্তু পাকিস্তান তো পাকিস্তানই!’

বাংলাদেশ ভালো দল, তাদের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। তারা ভালো চ্যালেঞ্জই জানাবে আমাদের।
আগা সালমান, পাকিস্তান অধিনায়ক

প্রতিপক্ষের প্রতি সমীহ পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগার কথাতেও। নিউজিল্যান্ডে তাঁর নেতৃত্বের অভিষেক ভালো হয়নি, পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হারতে হয়েছিল ৪–১ ব্যবধানে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও সিরিজ হেরেছে পাকিস্তান। একই চ্যালেঞ্জ যে বাংলাদেশের বিপক্ষেও থাকবে, সেটি মনে করিয়ে দিয়ে কাল পিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সালমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ভালো দল, তাদের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। তারা ভালো চ্যালেঞ্জই জানাবে আমাদের।’

সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান অধিনায়ক আগা সালমান

ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের কারণে সময়মতো সিরিজ শুরু করতে না পারায় পাঁচ ম্যাচের পরিবর্তে ম্যাচ হবে এখন তিনটি। এই তিন ম্যাচের সিরিজও আবার হচ্ছে ডিআরএস ছাড়া। পিসিবির সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে উইজডেন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, ‘যুদ্ধ’–পরবর্তী সময়ে ডিআরএসের কর্মীরা পাকিস্তানে আসতে চাননি বলেই সিরিজে থাকবে না ডিআরএস।