
ক্যামেরার সারি তাক করা তাঁর দিকে, সামনে অপেক্ষায় মাইক্রোফোন। বিসিবির নতুন সভাপতি হয়ে কী বলবেন আমিনুল ইসলাম, সবার কৌতূহল তা নিয়ে। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক শুরুই করলেন সৌহার্দ্যের কথা বলে। উদাহরণ দিতে তাঁর পাশে বসা ফারুক আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন একটু আগেই বোর্ড সভায় হওয়া সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের কথা।
সেখানে সভাপতি হিসেবে আমিনুলের নাম প্রস্তাব করেছেন ফারুক, আবার সহসভাপতি হিসেবে ফারুকের নাম প্রস্তাব করেছেন আমিনুল। দুজনই নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফারুককে সরিয়ে দিয়েই আমিনুলকে বসানো হয়েছিল বিসিবি সভাপতির চেয়ারে। উদাহরণটা হয়তো টানা সে কারণেই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত অপর সহসভাপতি শাখাওয়াত হোসেন।
আমিনুল যতই সৌহার্দ্যের কথা বলুন, তিনি যে নির্বাচন পার করে আজ সভাপতি হিসেবে নতুন করে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটি ছিল বিতর্কিত। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা, কাদা–ছোড়াছুড়ি—নির্বাচন আয়োজনের পথে অনেকের সঙ্গেই সৌহার্দ্যের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে অনেকের। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা সংগঠকেরা শুধু নির্বাচন বর্জন করেই থামেননি, আমিনুলদের ভবিষ্যৎ পথটাও কঠিন করার আভাস দিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ।
আমিনুল অবশ্য সভাপতি হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে একসঙ্গে পথচলার কথাই বলেছেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। যাঁরা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন, যাঁরা নেই—সব অংশীজনকে আমরা আহ্বান জানাব বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করতে এবং আমাদের সহযোগিতা করতে।’ প্রয়োজনে নির্বাচনের বিরোধীপক্ষের কাছে যাবেন, এমন কথা জানিয়ে আমিনুল পরে বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে সব দেশে, সব সেক্টরেই এমন হয়। কিন্তু আমার জানামতে, আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রের ভেতর থেকেছি।’
ঢাকার ক্লাবগুলোর একটা অংশ ঘোষণা দিয়েছিল, বিসিবি নির্বাচন পিছিয়ে না দিলে আগামী মৌসুমে সব ধরনের ক্রিকেট বর্জন করবে তারা। তাদের প্রতি আমিনুলের আহ্বান, ‘ক্রিকেটটা গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটটা যেন ব্যাহত না হয়, ক্রিকেটের ধারাবাহিকতা যেন থাকে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাব।’
আমি এটাকে একটা যাত্রার অংশ ধরে নিয়েছি। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।আমিনুল ইসলাম, বিসিবি সভাপতি
চার মাস আগে দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমিনুল বলেছিলেন, ‘একটা কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস’ খেলবেন তিনি। সেই ইনিংসটা এখন লম্বা হয়েছে চার বছরের জন্য। তখন আমিনুল বোর্ডের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আইসিসির চাকরি ছেড়ে। এরপর কেন লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব নিলেন, ব্যাখ্যা করেছেন সে কারণও, ‘আমি এটাকে একটা যাত্রার অংশ ধরে নিয়েছি। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।’
আমিনুলের কথা বলার সময় তাঁর পাশে ছিলেন জাতীয় দলের আরও দুই সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ ও খালেদ মাসুদ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শুরুতে বিসিবির দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফারুকই। তখন থেকে বোর্ড চলছিল ১০ পরিচালক নিয়ে।
এবার পূর্ণাঙ্গ বোর্ড হওয়ায় কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে মনে করেন এবারের বোর্ডে সহসভাপতির দায়িত্ব পাওয়া ফারুক। অতীতকে পেছনে ফেলে আসার আহ্বানও তিনি জানিয়েছেন সবাইকে, ‘কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় ঘটেছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য যেহেতু একটাই, আমার মনে হয় ছোটখাটো বিষয় থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।’
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে কোচ ও ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিতি ছিল খালেদ মাসুদের। বোর্ডের সমালোচনায়ও প্রায়ই মুখর হতেন তিনি। এবার নিজে পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর মাসুদ দিয়েছেন ক্রিকেটীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি, ‘আমাদের সবাইকে মিলে কাজ করতে হবে। যে অবস্থায় আমরা আছি, আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরও ওপরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা চেষ্টা করব, সবাই মিলে দল হিসেবে কাজ করে ভালো একটা ক্রিকেট অবকাঠামো যেন গড়ে তুলতে পারি।’
সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের পরই মুলতবি হয়ে গেছে নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভা। কাল দুপুরে মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে হবে মুলতবি সভার বাকি অংশ। সেখানেই বন্টন হতে পারে বিসিবির স্থায়ী কমিটির প্রধানের পদ। ঠিক হবে আমিনুলের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের ভবিষ্যৎ পথরেখাও।