টি-টোয়েন্টিতে কোন ব্যাটসম্যানদের কদর বেশি? যাঁরা চার-ছক্কার ঝড় তুলতে পারেন। কম বলে বেশি রানের জন্য যাঁদের ওপর চোখ বুজে ভরসা করা যায়।
তেমন ব্যাটসম্যান কারা?—এই প্রশ্ন যদি করা হয়, তাহলে কার কার নাম মনে পড়বে সবার আগে? এরই মধ্যে বিদায় বলে দেওয়া ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ডরা তো তালিকার অগ্রভাগেই থাকবেন। বর্তমানদের মধ্যে মনে পড়বে ট্রাভিস হেড, সূর্যকুমার যাদব, ফিল সল্ট, হাইনরিখ ক্লাসেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, টিম ডেভিড, জস বাটলারদের নাম।
যাঁদের কথা বলা হলো, তাঁদের খেলা সব সময় টিভি পর্দায় বা মাঠে গিয়ে দেখেছেন এবং কারও কারোটা এখনো দেখছেন। এ কারণে এ নামগুলোই সবার আগে মনে পড়ছে। কিন্তু রেকর্ড বইয়ে যদি তাকান, সেখানে এমন কিছু নামের দেখা পাবেন, নিশ্চিত আপনি চমকে যাবেন। এমনই দুটি নাম ফয়সাল খান ও সাবের জাখিল।
এবার পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন—এঁরা কারা! আসলে টি–টোয়েন্টির জগৎটা এখন মহাসাগরের মতোই। মহাসাগরের কোন কোনায় কী আছে, তার কতটুকুই বা একজনের পক্ষে জানা সম্ভব। এই যেমন সেশেলস যে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে এবং দলটি আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের ১০০–এর মধ্যেও আছে, সেটাই–বা কজন খবর রাখেন।
ব্রাজিল–আর্জেন্টিনার টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার বিষয়টি অবশ্য এখন অনেকেরই জানা। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে সৌদি আরব আর বেলজিয়ামও। আইসিসির টি–টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে সৌদি আরব ৩২ আর বেলজিয়াম ৪৫ নম্বরেও আছে। চমকজাগানিয়া যে দুটি নামের কথা ওপরে বলা হলো, সেই দুই নামের মধ্যে ফয়সাল সৌদি আরবের ক্রিকেটার আর জাখিল বেলজিয়ামের।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এমনও ক্রিকেটার আছেন, যাঁদের স্ট্রাইক রেট ৬০০। কিন্তু সেই ব্যাটসম্যান শুধু একটা ম্যাচই খেলেছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে একটা বল আর সেই বলে ৬ মেরে অপরাজিত ছিলেন। তাই নির্দিষ্ট একটি মানদণ্ড যদি আমরা বেছে নিই আর সেই অনুযায়ী হিসাব করি, তাহলে কী দেখব? শুরুতে আমরা মানদণ্ড হিসেবে যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কমপক্ষে ১০০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের বেছে নিই, তাহলে সবচেয়ে ভয়ংকর সৌদি আরবের ফয়সাল। ৬১ ম্যাচ খেলে ৩১.১২ গড়ে ১৭৪৩ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট? ঈর্ষণীয়, ১৭৩.৪৩। একটি সেঞ্চুরি ও ১০টি ফিফটি করা ফয়সাল সব মিলিয়ে চার মেরেছেন ১৮০টি, ছয় ১০৬টি।
এ তালিকার দুই নম্বরে আছে জাখিলের নাম। ৫২ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে ২৭.৮৪ গড়ে জাখিলের রান ১০৫৮। কমপক্ষে ১০০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর স্ট্রাইক রেট দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ১৬৯.২৮। এই মানদণ্ডে ভয়ংকর ব্যাটসম্যানদের তালিকায় পরের তিনটি নাম হেড, সূর্যকুমার ও সল্টের। ফয়সাল ও জাখিলের এখানে এগিয়ে থাকার কারণ তাঁরা নিজেরা যেমন আইসিসির সহযোগী দেশের হয়ে খেলেন, তাদের প্রতিপক্ষও ছিল সহযোগী দেশগুলো। ওই ধরনের ম্যাচে খেলার মান টেস্টখেলুড়ে দেশগুলোর মতো নয়। ফলে ইদানীং দেখা যায়, সেসব ম্যাচে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে।
মানদণ্ডটা আরেকটু যদি ওপরে ওঠাই, তাহলে কী দেখব? আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে কমপক্ষে ২০০০ রান করাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট ভারতের মারকাটারি ব্যাটসম্যান সূর্যকুমারের। ৮৩ ম্যাচ খেলে ৪ সেঞ্চুরি ও ২১ ফিফটিতে ১৬৭.০৭ স্ট্রাইক রেট আর ৩৮.২০ গড়ে ২৫৯৮ রান তাঁর। ১২৩ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি ও ১১ ফিফটিতে ২৯ গড়ে আর ১৫৫.৫৪ স্ট্রাইক রেটে ২৭৫৫ রান করা ম্যাক্সওয়েল আছেন দ্বিতীয় স্থানে। এখানেও শীর্ষ পাঁচে আছেন সহযোগী দেশের দুজন—তৃতীয় স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুহাম্মদ ওয়াসিম ও পঞ্চম স্থানে কুয়েতের সান্দারুয়ান ডি সিলভা। এ দুজনের মাঝে চতুর্থ স্থানে আছেন বাটলার।
মানদণ্ডটা আরেকটু উঁচু করলে, অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০০০ রান করলে তালিকটা মাত্র ১০ জনের। ১৪৭.০৫ স্ট্রাইক নিয়ে এখানে সবার ওপরে ইংল্যান্ডের বাটলার। এরপর অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার এবং ভারতের রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। তবে এখানেও দশের মধ্যে আছেন ছোট দলের দুই বড় তারকা—সাত নম্বরে আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং (স্ট্রাইক রেট ১৩৪.৮৮) ও নবম স্থানে মালয়েশিয়ার বিরানদীপ সিং (১২৭.৯৪)।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ৪০০০ রানের মাইলফলক পেরোতে পেরেছেন মাত্র তিনজন। যাঁদের কেউই ৫০০০ রানে যেতে পারেননি। তিনজনের এই তালিকায় অবশ্য কোনো চমক নেই। স্ট্রাইক রেটের দিক দিয়ে সবার ওপরে আছেন রোহিত শর্মা (১৪০.৮৯)। এরপর কোহলি (১৩৭.০৪) ও বাবর আজম (১২৯.২২)।
তবে আইসিসি সহযোগী দেশের ম্যাচগুলোকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির মর্যাদা দেওয়ার পর যেভাবে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে, তাতে একদিন হয়তো দেখা যাবে রোহিত-কোহলিদের এই অভিজাত তালিকায়ও ঢুকে পড়বেন ফয়সাল–জাখিলদের মতো অনেকে।