
ক্রিকেটাররা আগে নায়িকাদের প্রেমে পড়েন, নাকি নায়িকারা আগে ক্রিকেটারদের—এটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে এই দুয়ের মধ্যে যে একটা অমোঘ আকর্ষণ কাজ করে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। সাবেক ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং আর বলিউড অভিনেত্রী গীতা বসরার প্রেমকাহিনিটাও এ রকমই। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাবটা গিয়েছিল হরভজনের পক্ষ থেকেই। দুজনের বিয়ের ১০ বছর পূর্তি সামনে রেখে এক সাক্ষাৎকারে সেই দিনগুলোর কথা বলেছেন গীতা। জানিয়েছেন, বিয়ের আগে হরভজনকে তিনি দিয়েছিলেন এক মজার শর্ত।
গীতার বলিউডে অভিষেক হয়েছিল ২১ বছর বয়সে। ইমরান হাশমির বিপরীতে অভিনয় করেন ২০০৬ সালের রোমান্টিক থ্রিলার ‘ দিল দিয়া হ্যায়’ ছবিতে। পরের বছর আবারও ইমরানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ‘দ্য ট্রেন’ সিনেমায়। ঠিক ওই সময়েই তাঁর জীবনে আসেন হরভজন সিং। গীতাকে প্রথমবার দেখেই নাকি ক্লিন বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন ‘ভাজ্জি’।
সম্প্রতি ভারতী টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গীতাই মজা করে বলেন, ‘সে (হরভজন) খুব স্পষ্টবাদী ছিল। আমার একটা পোস্টার দেখে সম্ভবত প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। এরপর যুবির (যুবরাজ সিং) কাছে আমার নম্বর চায়। বোঝেনই তো, যুবির তো অনেক বন্ধু।’ যেন ইঙ্গিতে এটাও মনে করিয়ে দিলেন—দীপিকা পাড়ুকোন, কিম শর্মার মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে যুবরাজের ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে যেসব গুঞ্জন ছিল, তা একেবারে মিথ্যা নয়।
হরভজন যোগাযোগ করলেও শুরুতে নাকি সাড়া দেননি গীতা। তিনি তখন ক্রিকেট নিয়ে কিছুই জানতেন না। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০০৭) জেতার পর হরভজনকে তিনি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান, ‘ওয়েল ডান, কনগ্র্যাচুলেশনস।’ সেখান থেকেই আস্তে আস্তে কথাবার্তা শুরু। প্রথম দেখাতেই নাকি হরভজন সোজাসাপটা বলেছিলেন, ‘তেরে সে হি শাদি করুঙ্গা।’ (শুধু তোমাকেই বিয়ে করব)। গীতা তো হতভম্ব, ‘শাদি? আমি তো মাত্র একুশ।’
ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া গীতা মুম্বাই এসেছিলেন অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নে। তখন ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুর সময় চলছিল তাঁর। আর সেই সময় মেয়েদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিও ছিল অনেক কঠিন। কারও সঙ্গে নাম জড়ালেই ক্যারিয়ার শেষ। গীতাই বলেন, ‘শুধু বিয়ের গুঞ্জনের কারণে আমি চারটা ছবি হারিয়েছি। তাই মনে হয়, আমি আসলে ভারতে এসেছিলাম আমার সোলমেট খুঁজে পাওয়ার জন্য।’
হরভজনের প্রস্তাবে গীতার রাজি হতে লেগেছিল ১০ মাস। তিনি মজার ছলেই একটা শর্ত দেন, ‘তুমি যদি ৩০০ উইকেট পাও, আমি ‘‘হ্যাঁ’’ বলব।’ সেটা হরভজনের জন্য খুব কঠিন কিছু ছিল না। তিনি তখন টেস্টে ৩০০ উইকেটের খুব কাছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ৩০০ উইকেট হয়ে যায়। গীতাও ভাবেন, এবার চেষ্টা করা যাক। বন্ধুরাও নাকি তাঁকে বলেছিলেন, হরভজন ভালো মানুষ, তারকাখ্যাতি থাকার পরও অহংকার নেই। তা ছাড়া দুজনই পাঞ্জাবি পরিবারের, ফলে মানিয়ে নেওয়াও সহজ হবে। সবকিছু ভেবে ‘হ্যাঁ’ বলেন গীতা।
অবশেষে ২০১৫ সালের অক্টোবরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন হরভজন-গীতা। তবে সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না। গীতার মাথায় তখন নানা প্রশ্ন-ভিন্ন দেশ, সাংস্কৃতিক ব্যবধান, খ্যাতিমান ক্রিকেটারের প্রতি আস্থা রাখা ঠিক হচ্ছে তো? তবে হরভজন সব সংশয় দূর করেন। গীতা বলেন, ‘বিয়ের আগে আমরা সবাই ভাবি, এই মানুষটার সঙ্গে কি সারাজীবন থাকা সম্ভব? আমারও সন্দেহ ছিল, কিন্তু হরভজন মাটির মানুষ। খ্যাতি তাঁকে বদলায়নি।’
২০১৬ সালে জন্ম নেয় তাঁদের কন্যা হিনায়া হীর প্লাহা, ২০২১ সালে আসে ছেলে জোভান বীর সিং প্লাহা। মেয়ের জন্মের পর থেকেই গীতা দূরে সরে গেছেন সিনেমা থেকে। হরভজন ১৯৯৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত খেলেছেন ভারতের জার্সিতে। আইপিএলেও খেলেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও চেন্নাই সুপার কিংস দলে। অবসরের পর এখন নতুন ইনিংস শুরু করেছেন ধারাভাষ্য আর রাজনীতির মাঠে।