Thank you for trying Sticky AMP!!

পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদি না ভারতে যশপ্রীত বুমরা—কে এগিয়ে?

রাজ্জাকের দাবি, আফ্রিদির ধারেকাছেও নেই বুমরা; পরিসংখ্যান কী বলছে

সময়ের সেরা ফাস্ট বোলারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করলে শাহিন আফ্রিদি ও যশপ্রীত বুমরার নাম ওপরের দিকেই থাকবে। বল হাতে প্রায়ই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠেন তাঁরা। তবে চোট দুজনকেই অনেক দিন হলো মাঠের বাইরে রেখেছে।

মেলবোর্নে গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে হাঁটুর চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর পাকিস্তানের হয়ে আফ্রিদিকে আর খেলতে দেখা যায়নি। পিঠের চোটের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বুমরাও ভারতের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন প্রায় পাঁচ মাস আগে।

ফেব্রুয়ারিতে পিএসএল দিয়ে ফেরার কথা আফ্রিদির। আর পুরোপুরি সেরে উঠলে বুমরা খেলতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন বর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে।

বয়সের ব্যবধান ৭ বছর হওয়ায় আফ্রিদি–বুমরাকে সে অর্থে সমসাময়িক ভাবা হয় না। বাঁহাতি আফ্রিদির বয়স ২২ আর ডানহাতি বুমরার ২৯। তা ছাড়া দুজন খুব একটা মুখোমুখিও হন না।

তবে আবদুল রাজ্জাক দুজনের তুলনা করতে গিয়ে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বিবৃতিই দিয়েছেন। বর্তমানে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নির্বাচকের দায়িত্বে থাকা সাবেক এ অলরাউন্ডার স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, ‘শাহিন আফ্রিদি যশপ্রীত বুমরার চেয়ে অনেক ভালো। বুমরা আফ্রিদির ধারেকাছের মানেরও নয়।’

বুমরাকে নিয়ে রাজ্জাকের এ ধরনের মন্তব্য এটাই প্রথম নয়। ২০১৯ সালে ভারতীয় তারকাকে ‘শিশু বোলার’ সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘আমি গ্লেন ম্যাকগ্রা, ওয়াসিম আকরামের মতো গ্রেটদের বল খেলে এসেছি। এখনো খেলা চালিয়ে গেলে সহজেই আধিপত্য বিস্তার করতাম এবং ওর বলে আক্রমণ করতাম।’

রাজ্জাক পাকিস্তানি হওয়ায় স্বদেশি খেলোয়াড়ের পক্ষে সাফাই গাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফ্রিদি ও বুমরার মধ্যে কে সেরা, সেটা পরিসংখ্যানের আলোকে যাচাই করা যেতে পারে।

Also Read: বাংলাদেশ সফরে যে কারণে নেই বুমরা

২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখা আফ্রিদি পাকিস্তানের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে খেলেছেন ১০৪ ম্যাচ। ২৩.৯২ গড় ও ৪.১৮ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ২১৯ উইকেট।

ভারতের জাতীয় দলে বুমরার অভিষেক হয়েছে আরও আগে, ২০১৬ সালে। আফ্রিদির চেয়ে ম্যাচ খেলা ও উইকেট শিকারেও এগিয়ে তিনি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৬২ ম্যাচে ৩১৯ উইকেট নিয়েছেন ‘ইয়র্কার–বিশেষজ্ঞ’ বুমরা—আফ্রিদির চেয়ে ঠিক ১০০টি বেশি।

দীর্ঘদেহী পাকিস্তানি পেসারের চেয়ে বুমরার বোলিং গড় ও ইকোনমি রেটও ভালো। পরিসংখ্যান বলছে, উইকেটপ্রতি ২২.৪৮ রান দেন বমুরা। আর ওভারপ্রতি ব্যাটসম্যানরা নিতে পারেন ৩.৭৮ রান। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়াতেও আফ্রিদিকে পেছনে ফেলেছেন বুমরা।

তবে বুমরাহ আফ্রিদির চেয়ে এগিয়ে গেছেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর। ওই বছরের জুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আফ্রিদির সমান ১০৪ ম্যাচ খেলেছেন বমুরা। সে সময় উইকেট শিকারে পাকিস্তানি পেসারের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। ১০৪ ম্যাচে আফ্রিদির ২১৯ উইকেটের বিপরীতে বুমরার উইকেট ছিল ১৯০টি। তবে বোলিং গড় ও ইকোনমি রেটে সে সময়ও এগিয়ে ছিলেন ভারতীয় তারকা।

পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার আবদুল রাজ্জাক শাহিন আফ্রিদির পক্ষ নিয়েছেন

সংস্করণ ধরে দুজনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার পাশাপাশি রাখলেও টেস্ট, ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টিতে ওভারপ্রতি আফ্রিদির চেয়ে কম রান দিয়েছেন বুমরা। টেস্ট আর টি–টোয়েন্টির বোলিং গড়েও এগিয়ে ডানহাতি পেসার। তবে আফ্রিদির ওয়ানডে বোলিং গড় বুমরার চেয়ে ভালো।

রাজনৈতিক বৈরিতায় ভারত–পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে না এক দশকের বেশি হয়েছে। এখন শুধু আইসিসি বা এসিসির টুর্নামেন্টগুলোতেই দেখা হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের। তাই বুমরা আর আফ্রিদিরও একে–অপরের মুখোমুখি হওয়ার খুব একটা সুযোগ হয়নি।

ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে ক্রিকেটপ্রেমীদের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে হয়

এখন পর্যন্ত দুবার মুখোমুখি হয়েছেন আফ্রিদি–বুমরা। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে ও ২০২১ সালে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। দুবারই ম্যাচ হয়েছে একপেশে। প্রথমবার ভারত জিতেছে ৯ উইকেটে। পরেরবার পাকিস্তান জিতেছে ১০ উইকেটে। এশিয়া কাপের ম্যাচটিতে আফ্রিদি ছিলেন উইকেটশূন্য, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আবার উইকেট পাননি বুমরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে বুমরার উইকেট দুটি, ভারতের বিপক্ষে আফ্রিদির উইকেট তিনটি। বিশ্বকাপের ম্যাচটিতে ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে আউট করেন আফ্রিদি। ওই ম্যাচে ইনসুইংগিং ইয়কার্রে রোহিত শর্মাকে বোল্ড করার দৃশ্য তো এখনো অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর চোখে লেগে আছে। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন তিনি।

সব কিছুর বিচারে আফ্রিদি–বুমরার মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি নয়। দুজনই দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। ফিটনেস ধরে রাখতে পারলে আফ্রিদি অনায়াসে আরও অনেক দিন পাকিস্তানের হয়ে খেলে যেতে পারবেন। বুমরাও আছেন ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে। তাঁদের মতো তারকা পেসারদের আরও অনেক দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাওয়া বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য বড় পাওয়া হবে।

Also Read: এপ্রিলের আগে মাঠে ফেরা হবে না আফ্রিদির?