চোট থেকে ফিরেই আইপিএলে বোলিং ঝলক দেখাচ্ছেন যশপ্রীত বুমরা
চোট থেকে ফিরেই আইপিএলে বোলিং ঝলক দেখাচ্ছেন যশপ্রীত বুমরা

‘যশপ্রীত বুমরা বোলিংয়ের ডন ব্র্যাডম্যান’

লাগাতার ইয়র্কার, কখনো ভয়ংকর বাউন্সার আবার কখনো স্লোয়ার—যশপ্রীত বুমরার বোলিং সামর্থ্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।

দিন যতই গড়াচ্ছে, বুমরা যেন নিজেকে আরও শাণিত করে চলছেন। গত বছর ভারতকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতে বড় অবদান রেখেছেন, হয়েছেন টুর্নামেন্ট–সেরাও। সর্বশেষ বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে ভারত হারলেও তিনিই হয়েছেন সিরিজ–সেরা।

বছরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে জিতেছেন ২০২৪ সালে আইসিসির বর্ষসেরা পুরস্কার। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ উইজডেনও তাঁকে দিয়েছে বর্ষসেরার স্বীকৃতি।

মাঝে পুরোনো চোট নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে পারেননি বুমরা। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে (এনসিএ) পুনর্বাসনে থাকায় আইপিএলের শুরুর কয়েকটি ম্যাচও মিস করেছেন।

স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে অনেকেই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বলে থাকেন

তবে পুরোপুরি সেরে ওঠার পর মাঠে ফিরতেই আবারও ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে উঠেছেন। তাঁর দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসও যেন হালে পানি পেয়েছে। ম্যাচের পর ম্যাচ বুমরার এমন জাদুকরী পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনা করেছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

অস্ট্রেলিয়ার প্রয়াত কিংবদন্তি ব্র্যাডম্যানকে অনেকেই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বলে থাকেন, যিনি সর্বোচ্চ ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার আরেক কিংবদন্তি গিলক্রিস্টের চোখে বুমরা যেন বোলিংয়ের ব্র্যাডম্যান।

আইপিএলে কাল রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ১০০ রানে জয়ের পর ক্রিকবাজকে গিলক্রিস্ট বলেছেন, ‘আমার মনে হয় সে–ই সর্বকালের সেরা বোলার, সেরা ফাস্ট বোলার। যখন আপনি পরিসংখ্যানে তাকিয়ে দেখবেন কোন কোন পরিস্থিতিতে সে তার বোলিং দক্ষতা দেখিয়ে চলেছে, তখন তাকে ব্র্যাডম্যানের মতোই মনে হবে। ব্র্যাডম্যান অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিলেন, একইভাবে বুমরাও বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আলাদা কন্ডিশনে ও আলাদা পিচে সে যেভাবে বোলিং করে, তাতে বোঝা যায় আমরা সত্যিই এক বড় মাপের খেলোয়াড়কে দেখছি।’

বুমরার উইকেট উদ্‌যাপন

সর্বশেষ বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে ৩২ উইকেট নিয়ে সিরিজ–সেরা হন বুমরা। সেই সিরিজে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্বে ছিলেন গিলক্রিস্ট। বুমরার বোলিং দেখে তখনই তিনি বলেছিলেন, ‘বুমরার মতো ফাস্ট বোলার বর্তমান বিশ্বে বিরল। বল হাতে সে এতটাই ভয়ংকর যে, (তখনকার) কোনো ব্যাটসম্যানই তাঁর সামনে টিকতে পারত না। আমার তো মনে হয় ব্র্যাডম্যানও তার বল খেলতে গিয়ে ঝামলোয় পড়তেন।’

ক্রিকবাজকে সেই কথাই আরেকটু ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে বলেছেন গিলক্রিস্ট, ‘একজন ভারতীয় পেসার হিসেবে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সিরিজে বুমরার মতো ধারাবাহিক পারফরমার আগে দেখিনি। আমরা ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় তাকে দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম। সে নিঃসন্দেহে সব সংস্করণ মিলিয়ে সেরা বোলার। অস্ট্রেলিয়ানরা কখনো কোনো ভারতীয় বোলারকে এত ভয় পায়নি বা শ্রদ্ধা করেনি, যতটা বুমরাকে করেছে।’

এবারের আইপিএলে বুমরা খেলতে নামার আগে মুম্বাই চার ম্যাচের মধ্যে শুধু একটিতে জিতেছিল। বুমরা ফেরার পর সেই মুম্বাই সাত ম্যাচের ছয়টিতে জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। ৩১ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার সাত ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেট। ইকোনমি রেট ৬.৯৬; যা পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত ১১ উইকেট পেয়েছেন বুমরা

বুমরার ১৬৮ বলের মধ্যে ৬৯টিতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা কোনো রান নিতে পারেননি। আইপিএলে ডট বল যেখানে ‘সোনার হরিণ’, সেখানে বুমরা প্রতি ম্যাচে গড়ে প্রায় ১০টি করে ডট বল করেছেন। তাঁর স্পেলগুলোই ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিচ্ছে।