
এমন দৃশ্য আগে কোনোদিন দেখা যায়নি ক্রিকেট মাঠে। কোনো টুর্নামেন্টে একটা দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তারা ট্রফি নেবে কি নেবে না, পাবে কি পাবে না, সেটা নিয়ে এত জটিলতা!
এশিয়া কাপ ২০২৫–এর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ভারত। কিন্তু তাদের এই শিরোপা জয়ের আনন্দের চেয়েও বেশি আলোচনা তৈরি হয়েছে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের বিতর্ক নিয়ে।
নিয়ম অনুযায়ী, চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা ছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির। কিন্তু ভারতীয় দল তাঁর হাত থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এটা শুনে বেঁকে বসেন নাকভিও। তাঁর কথা, এসিসি সভাপতি হিসেবে তিনিই পুরস্কার তুলে দেবেন, নয়তো দেওয়া হবে না। এর ফলে ক্রিকেট ইতিহাসেই সম্ভবত প্রথমবার কোনো চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি মাঠে আসার পরেও সেটা হাতে পায়নি!
গতকাল রোববার রাতে ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম। তিনি এই অনুষ্ঠানে পাকিস্তান দলের হাতে রানার্সআপ পদক ও অর্থ পুরস্কারের চেক তুলে দেন। অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমিনুল।
ভারতের ট্রফি না নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি জানান, এসিসি এ বিষয়ে দ্রুত একটি বৈঠকে বসবে এবং সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে। আমিনুল বলেন, ‘বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে এসিসির। সেই মিটিং হয়তো কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে। সেখানে আমি উপস্থিত থাকব। আমরা চেষ্টা করব, যারা জিতেছে, তাদের কাছে ট্রফিটা পৌঁছে দিতে।’
ভারতের ট্রফি না নেওয়ার কারণ সম্পর্কে আমিনুল বিস্তারিত কিছু না বললেও এটিকে কূটনৈতিক জটিলতা বলেই উল্লেখ করেন, ‘এখানে কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলো হয়তো সাংবাদিকদের সামনে বলা যাবে না। এখানে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, পাকিস্তান রানার্স আপ হয়েছে। তবে একটা দল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসতে দেরি করছিল। পরবর্তীতে একটা সমঝোতা হয়েছে। তারা হয়তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ট্রফি নিতে চায়নি।’
এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ দলও থাকতে পারত। কিন্তু অলিখিত সেমিফাইনালে রূপ নেওয়া সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে খুবই হতাশাজনকভাবে হেরে যায় তারা। পাকিস্তানের করা মাত্র ১৩৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ৯ উইকেটে ১২৪ রানে। মাত্র ১১ রানের হারে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন ভেঙে যায়।
আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে যেভাবে এসেছি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গেই জিতেছি। এরপর ভারত–পাকিস্তান দুই দলের সঙ্গেই জেতা উচিত ছিল। আফসোস নেই। পারফরম্যান্সে আমি গর্বিত।এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল
বাংলাদেশের হার নিয়ে আক্ষেপ ঝরেছে আমিনুলের কণ্ঠেও, ‘আমাদের ফাইনাল খেলার একটা ভালো সুযোগ ছিল। সেই যোগ্যতাও ছিল দলের। তারপরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
আমিনুল মনে করেন, দলটা নতুন, তারা প্রতিদিনই উন্নতি করছে। ব্যাটিং দুর্বলতার বিষয়ে আমিনুল বলেন, ‘মাত্র গৌতম গম্ভীর (ভারতের প্রধান কোচ) আমাকে একটা পরামর্শ দিলেন—আমাদের ব্যাটিংটা নিয়ে যেন একটু কাজ করা হয়। আমিও তাঁর সঙ্গে একমত।’
তবে সব মিলিয়ে দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টিই প্রকাশ করেছেন আমিনুল। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে যেভাবে এসেছি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গেই জিতেছি। এরপর ভারত–পাকিস্তান দুই দলের সঙ্গেই জেতা উচিত ছিল। আফসোস নেই। পারফরম্যান্সে আমি গর্বিত।’
দলের উন্নতির ধারা প্রসঙ্গে আমিনুল আরও বলেন, ‘গত চার মাসের পারফরম্যান্স দেখেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে হেরেছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দেশের মাঠে জিতেছি।’
বাংলাদেশের সামনে আফগানিস্তান সিরিজ। ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য এই সিরিজকে প্রস্তুতি নেওয়ার ভালো সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিসিবি সভাপতি, ‘কিছু ভুল আমরা করছি। এগুলো যেন আর না হয়, উন্নতির ধারা যেন অব্যাহত থাকে। এখানে এসেছি কয়েক ঘণ্টার জন্য। আবার চলে যাব। খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।’