
এক অর্থে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমান যেন এক আক্ষেপের নাম। করেছেন অনেক কিছুই। কিন্তু আসলে করতে পারতেন আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে তিনি সেরাদের একজন। কিন্তু মোস্তাফিজ তো আসলে হতে পারতেন নিজের সময় ছাড়িয়ে ক্রিকেটের সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন। এ রকম অপার সম্ভাবনা নিয়েই শুরুটা হয়েছিল তাঁর।
মোস্তাফিজকে নিয়ে এই আক্ষেপটা শুধু এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমী বা ক্রিকেট বোদ্ধাদেরই নয়, হয়তো তাঁর সতীর্থদেরও। সেটা টের পাওয়া গেল প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর সঙ্গে জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজের সাক্ষাৎকারে। প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে বর্ষসেরা রানারআপ হওয়া এই দুই ক্রিকেটার সেই সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন অনেক প্রসঙ্গে। উৎপল শুভ্রর সঙ্গে আড্ডার ঢঙে সেই সাক্ষাৎকারেই গল্পে গলে এসেছে মোস্তাফিজ প্রসঙ্গও।
আমরাও অফ কাটার দিই। আমাদেরটা যদি এতটুকু টার্ন করে, ওরটা করে অতটুকু (অনেক বেশি)। এবং উইথ পেস। যেটা অনুমান করা কঠিন। মাশা আল্লাহ, আমরা ফিজকে পেয়েছি, এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া।তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশের ক্রিকেটার
কার সঙ্গে জুটি বেঁধে বল করাটা বেশি উপভোগ করেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাসকিন নতুন বলের জুটি হিসেবে বলেছেন শরীফুল ইসলামের নাম। আর ডেথ ওভারের বোলিং জুটি হিসেবে তাসকিনের সব সময়ের পছন্দ মোস্তাফিজ। কেন, সেই ব্যাখ্যাও দেন তাসকিন, ‘যদি আপনি ডেথ বোলিং নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে চান, বাংলাদেশের বাইরে কারও সঙ্গে ও রকম কথা বলার প্রয়োজন নাই, ফিজ (মোস্তাফিজ) ইজ প্রুভেন, ফিজের সঙ্গে কথা বললে অনেক কিছু শেখার আছে, বিশেষ করে ডেথ বোলিং। ও আইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করেছে। আমরা অনেক সময় চিন্তা করি না যে কার সঙ্গে কথা বলব। আমাদের ফিজ আছে কথা বলার জন্য।
তাসকিনের সঙ্গে একমত হয়ে উৎপল শুভ্রও যোগ করেন, মোস্তাফিজ যেটা করেন, সেটা আসলে আর কারও পক্ষেই সম্ভব না। হেসে তাসকিনও বলেন, ‘আমরাও চেষ্টা করেছি। আমরাও অফ কাটার দিই। আমাদেরটা যদি এতটুকু টার্ন করে, ওরটা করে অতটুকু (অনেক বেশি)। এবং উইথ পেস। যেটা অনুমান করা কঠিন। মাশা আল্লাহ, আমরা ফিজকে পেয়েছি, এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া।’
ও আসলে লাল বলে বোলিংটা উপভোগ করে না। এমন না যে কষ্টের কারণে খেলে না। ও উপভোগ করে না। তো একটা মানুষ যদি ইনজয় না করে...সাকসেসফুল হতে পারবে না।তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশের ক্রিকেটার
আড্ডার এই পর্যায়েই উৎপল শুভ্র মোস্তাফিজকে নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা প্রকাশ করে বলেন, চাইলে মোস্তাফিজ হয়তো সর্বকালের সেরাদের একজন হয়তো হতে পারতেন, কিন্তু তিনি কেন যেন সেই চ্যালেঞ্জটা নিলেনই না। হয়তো সহজ পথটাই বেছে নিয়েছেন।
তাঁর এই কথার সূত্র ধরেই তাসকিন যোগ করেন, ‘আসলে ওর (মোস্তাফিজ) সঙ্গে তো আমি অনেক ঘনিষ্ঠ। প্রায় ১০ বছর ধরে একসঙ্গে খেলছি। ও আসলে লাল বলে বোলিংটা উপভোগ করে না। এমন না যে কষ্টের কারণে খেলে না। ও উপভোগ করে না। তো একটা মানুষ যদি ইনজয় না করে...সাকসেসফুল হতে পারবে না।’
তাসকিনের এই কথার সঙ্গে মিরাজও যোগ করেন, ও যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে (লাল বলে না খেলার), আমি অবশ্যই ওর সিদ্ধান্তটা সম্মান করি। কারণ, ও যদি তিনটা সংস্করণেই খেলত, আমাদের ক্ষতি হতো। কারণ, ওয়ানডেতে তো ওইভাবে অ্যাফোর্ট দিতে পারত না, টি-টোয়েন্টিতেও দিতে পারত না। আর একই সঙ্গে আপনি দেখেন, এখন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সে যতটা কার্যকর, টেস্ট খেললে ওর কিন্তু অনেক বল করতে হবে এবং চোট পাওয়ার শঙ্কাও বেড়ে যাবে। ও টেস্টে খেলেছে আগে, চোটেও পড়েছে, কাঁধে অস্ত্রোপচারও করিয়েছে।
এই পর্যায়ে উৎপল শুভ্র জানতে চান, ‘বলুন তো, মোস্তাফিজ মানুষটা কেমন?’ তাসকিন হেসে বলেন, ‘অনেক দুষ্টু কিন্তু।’ তারপর আরও বলেন, অব দ্য ফিল্ড, সে খুবই ভালো সতীর্থ। সবাইকে নাড়ায়, খোঁচায়, ক্যামেরার সামনে চুপচাপ, কিন্তু অনেক দুষ্টু।
উৎপল শুভ্র এরপর মোস্তাফিজের সংবাদ সম্মেলন কাভার করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানতে চান, ‘ও কি আসলেও এমন, এ রকম “হ্যাঁ”, “না”, এক শব্দে উত্তর দেওয়া এগুলো কী পরিকল্পনা করে আসে?’
হেসে তাসকিন জানান, ‘না, ও আসলে এটা উপভোগই করে না।’