আউট হওয়ার পর ডাগআউটে মন খারাপ করে বসে আছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা
আউট হওয়ার পর ডাগআউটে মন খারাপ করে বসে আছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ

এভাবেও ভেঙে পড়া যায়, অবিশ্বাস্য হারে বাংলাদেশের বিদায়

শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ১২ রান, শেষ ওভারে ৯। শেষ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ নারী দল হেরেছে ৭ রানে। তাতে শেষ চারের আগেই বিদায় নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের।

এভাবেও ভেঙে পড়া যায়! এভাবেও স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়া যায়!

নাবি মুম্বাইয়ে ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের বাইরে যখন দীপাবলির আতশবাজি ফুটছিল, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা ডুবে গেলেন হতাশার গভীর অন্ধকারে।

শেষ দুই ওভারে কী যেন কী হয়ে গেল! অবিশ্বাস্য ব্যাটিং–ধসের শিকার হয়ে বাঁচা-মরার ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হাতে রেখে ১২ বলে ১২ রানের সমীকরণটা শেষ ওভারের আগে হয়ে গেল ৬ বলে ৯ রান। তখনো হাতে ৫ উইকেট। আর সবচেয়ে বড় কথা ৭৭ রান নিয়ে টিকে ছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা।

বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল নিগার সুলতানা–শারমিন আক্তারের জুটি

কিন্তু চামারি আতাপাত্তুর করা শেষ ওভারটায় যা হলো, সেটির কোনো ব্যাখ্যা নেই। নিগার স্ট্রাইকে ছিলেন না প্রথম বলে। রাবেয়া খান হয়ে গেলেন এলবিডব্লু। পরের বলে অধিনায়ককে স্ট্রাইক দিতে পড়িমরি ১ রান নিতে গিয়ে সরাসরি থ্রোতে নন–স্ট্রাইকিং প্রান্তে রানআউট নাহিদা আক্তার। স্ট্রাইক পেয়েও কিছুই করতে পারলেন না নিগার, ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিলেন। টানা তিন বলে উইকেট হারানো বাংলাদেশ উইকেট হারাল টানা চতুর্থ বলেও। এলবিডব্লু হলেন মারুফা আক্তার। টানা চার বলে আউট চার ব্যাটার। ৬ বলে ৯ রানের সমীকরণ ততক্ষণে হয়ে গেছে ২ বলে ৯ রান। পঞ্চম বলে নিশিতা আক্তার যখন ১ রান নিলেন, ম্যাচ আর বাংলাদেশের হাতে নেই। ১ বলে ৮ রান, চোটের কারণে একবার উঠে যাওয়ার পর আবারও ব্যাটিংয়ে ফেরা শারমিন আক্তার ব্যাটে-বলেই করতে পারলেন না।

ফল ৯ উইকেটে ১৯৫ রানে থেমে ৭ রানে হেরে শেষ চারের স্বপ্ন বিসর্জন বাংলাদেশের।

শেষটা এমন ‘মর্মান্তিক’ হবে, কে ভাবতে পেরেছিল! রান তাড়ায় ৪৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ১৭৬/৩। ৩০ বলে দরকার ২৭ রান। অধিনায়ক নিগার কী আস্থার সঙ্গেই না ব্যাট করছিলেন, অপরাজিত ছিলেন ৬৭ রানে। অন্য পাশে স্বর্ণা আক্তারের ব্যাটেও ছিল প্রতিশ্রুতি।

জয়ের পর চামারি আতাপাত্তুকে ঘিরে শ্রীলঙ্কানদের উল্লাস

ধসের সূচনা হলো পরের ওভারের প্রথম বলেই। প্রথম ৭ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য আতাপাত্তুর অফ ব্রেক স্বর্ণার ব্যাট ছুঁয়ে লেগ সাইডের অনেক বাইরে আশ্রয় নিল উইকেটকিপারের গ্লাভসে। ১৯ রানে ফিরলেন স্বর্ণা, বাংলাদেশের ভাগ্যও যেন ঘুরে গেল তখনই। ওভারটায় মাত্র ২ রান দিলেন লঙ্কা অধিনায়ক।

৪৯তম ওভারে সুগন্ধিকা কুমারি বোল্ড করে দেন রিতু মণিকে। এরপর শেষের সেই দুঃস্বপ্নের গল্প।

রান তাড়ায় শুরুটা অতটা ভালো ছিল না বাংলাদেশ। ১৫.৩ ওভারে ৪৪ রান তুলতেই নেই ৩ উইকেট। এরপর শারমিন আক্তারকে নিয়ে ৮২ রানের জুটি নিগারের। ৩৬তম ওভারে রান নিতে গিয়ে পায়ে টান পড়ে শারমিনের। যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে উঠে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন ৬৪ রান করা ব্যাটার।

তবে আস্থা হয়ে তখনো টিকে ছিলেন নিগার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ৯৮ বলের ৭৭ রানের ইনিংসটা কোনো কাজেই এল না। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবার হারিয়ে স্বপ্ন বাঁচাতে পারল না বাংলাদেশ।

রাবেয়া ও স্বর্ণার উইকেট উদ্‌যাপন। বোলিংটা খারাপ করেনি বাংলাদেশ

অথচ ম্যাচের শুরুটা কী দারুণই না হয়েছিল বাংলাদেশের। প্রথম বলেই মারুফা আক্তারের ইনসুইঙ্গারে এলবিডব্লু শ্রীলঙ্কার ওপেনার বিস্মি গুনারত্নে। এরপর হাসিনি পেরেরাকে নিয়ে আতাপাত্তুর ৭২ রানের জুটি। একবার জীবন পাওয়া আতাপাত্তু ফিরেছেন ৪৬ রানে। আর দুবার জীবন পাওয়া হাসিনি করেছেন ৮৫ রান। এরপর ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করেছিল ২০২ রানে।

কিন্তু ব্যাট হাতে ব্যর্থ (!) আতাপাত্তু খেল দেখালেন বল হাতে, তুলে নিলেন ৪২ রানে ৪ উইকেট। ১২০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেট পেয়ে গেলেন।

ষষ্ঠ ম্যাচে পঞ্চম হারের পর ২ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে সাতে। আর ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথম জয়ের দেখা পাওয়া শ্রীলঙ্কা ৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে ছয়ে। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া দুই ম্যাচ থেকে এসেছে দলটির বাকি ২ পয়েন্ট।

আগামী রোববার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা: ৪৮.৪ ওভারে ২০২ (হাসিনি ৮৫, চামারি ৪৬, নীলাক্ষিকা ৩৭; স্বর্ণা ৩/২৭, রাবেয়া ২/৩৯)। বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৯৫/৯ (নিগার ৭৭, শারমিন ৬৪*, স্বর্ণা ১৯; আতাপাত্তু ৪/৪২, সুগন্ধিকা ২/৩৮)। ফল: শ্রীলঙ্কা ৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: হাসিনি পেরেরা।