টানা দ্বিতীয়বার এনসিএল টি–টোয়েন্টিতে শিরোপা জিতেছে রংপুর
টানা দ্বিতীয়বার এনসিএল টি–টোয়েন্টিতে শিরোপা জিতেছে রংপুর

নাসির, আকবর আর হাশিমের টুর্নামেন্ট, এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে আর কী হলো

বিপিএলের বাইরে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের দাবি ছিল ক্রিকেটারদের দীর্ঘদিনের। সেই দাবি মিটিয়ে গত বছর প্রথমবারের মতো এনসিএল টি-টোয়েন্টির আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। একই ধারাবাহিকতায় এবারও মাঠে গড়িয়েছে শুধু দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে হওয়া এই টুর্নামেন্ট।

এবার আরও ছড়িয়ে দিয়ে এনসিএল টি-টোয়েন্টি আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল বিসিবির। তবে তাতে বাধা হয়েছে বৃষ্টি। শুরুতে বগুড়া ও রাজশাহী ভেন্যুর তালিকায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও পাশের আউটার মাঠে। গতকাল শেষ হয়েছে এই টুর্নামেন্ট। এবারের আসরে এই টুর্নামেন্টে কী কী হলো, তা–ই দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে।

নায়কের নাম আকবর

আকবর আলী কী করছেন—এ নিয়ে কৌতূহল সব সময়ই থাকে। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক তিনি। ভারতের বিপক্ষে যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা সেই একাদশের মাত্র দুজন ক্রিকেটারেরই এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা পড়েনি—একজন অধিনায়ক আকবর আলী, অন্যজন অভিষেক দাস।

এই এনসিএল টি-টোয়েন্টি নতুন করে আশা জুগিয়েছে দুজনকে নিয়েই। অভিষেক চোটের কারণে সাড়ে পাঁচ বছর মাঠের বাইরে থাকার পর এই টুর্নামেন্ট দিয়েই আবার ফিরেছেন, একটি ম্যাচে হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচও। আর আকবর জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার জিতেছেন রংপুর অধিনায়ক আকবর আলী

৯ ম্যাচে ৩১.৭১ গড় আর ১৪৭.০২ স্ট্রাইক রেট নিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আকবর। শুধু সংখ্যার বিচারে নয়, আকবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন রংপুরকে কয়েকটি ম্যাচ জেতানোতেও।

তাঁর নেতৃত্বগুণের বিষয়টি সামনে এসেছে আরও একবার। চার নম্বর দল হিসেবে কোয়ালিফায়ারে ওঠা সেখানে টানা দুই ম্যাচ জিতে ফাইনালে হারিয়েছে খুলনাকে। গতবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রংপুরই। দুই আসরেই দলটির অধিনায়ক ছিলেন আকবর। জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের সংস্করণ ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এ নিয়ে তিনবার রংপুরের চ্যাম্পিয়ন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আকবর। অথচ এর আগে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি দলটি!

ব্যাটসম্যানদের আশার আলো নেই তেমন...

এবারের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অংশ নেননি। তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন এশিয়া কাপ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে। তবু ব্যাটিংয়ে আশার আলো খুব একটা দেখা যায়নি। রান কম হয়েছে, ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সও প্রত্যাশিত ছিল না।

এবারের আসরের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স নিয়ে জাতীয় দলের এক সাবেক অধিনায়ক বলছিলেন, ‘সিস্টেমের (হাইপারফরম্যান্স, টাইগার্সসহ বিসিবির বিভিন্ন প্রোগ্রামে থাকা) ক্রিকেটার আর এর বাইরের মধ্যে কতটা তফাত, তা স্পষ্ট হয়েছে।’
এনসিএল টি-টোয়েন্টির এবারের আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন চট্টগ্রামের মাহমুদুল হাসান।

একটি সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদুল হাসান

টেস্ট দলের পরিচিত মুখ হলেও মাহমুদুলের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতা মাত্র তিন ম্যাচের, তা–ও এশিয়ান গেমসে দ্বিতীয় সারির দলের হয়ে। তবে এবার ৮ ম্যাচে ১৫৫.৩৯ স্ট্রাইক রেটে এই ওপেনার করেছেন ৩২৩ রান। একটি সেঞ্চুরি পাওয়া মাহমুদুল ছক্কাই মেরেছেন ২১টি।

মাহমুদুলের সঙ্গে এবারের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে প্রাপ্তি বলা যায় হাবিবুর রহমানও। রাজশাহীর এই ওপেনার তাঁর মারমুখী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত অনেক দিন ধরেই। বিপিএলেও নিয়মিত খেলেছেন, তবে আলো কাড়ার মতো পারফরম্যান্স করতে পারেননি। এবারের এনসিএলে দুটি হাফ সেঞ্চুরিতে ১৮৩.১৯ স্ট্রাইক রেটে ২১৮ রান করেছেন হাবিবুর।

বোলিংয়ে তাঁরা কারা

এবারের আসরে দুজন বোলার উঠে এসেছেন, যাঁরা দর্শকদের কাছে তেমন পরিচিত নন। তাঁদের মধ্যে রংপুরের বাঁহাতি স্পিনার আবু হাশিম ৯ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ওভারপ্রতি তিনি রান দিয়েছেন ৫.০৩ গড়ে।

বাঁহাতি স্পিনে নজর কেড়েছেন রংপুরের আবু হাশিম

অন্যজন চট্টগ্রামের অফ স্পিনার মোহাম্মদ রুবেল। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য দিয়ে তিনি সাড়া ফেলেছেন। এবারের টুর্নামেন্টের সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটারের পুরস্কারটাও নিজের করে নিয়েছেন ৮ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৫.২১ গড়ে রান দিয়ে ১০ উইকেট নেওয়া রুবেল। কিছুদিন আগে হওয়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টি-টোয়েন্টি ও গত বছর প্রথম বিভাগ ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন রুবেল।

এবারের এনসিএলে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক যদিও চট্টগ্রামেরই আরেক স্পিনার হাসান মুরাদ। ৮ ম্যাচে ১৪ উইকেট নেওয়া এই ক্রিকেটার দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই ভালো করছেন। টেস্টে একবার জাতীয় দলের স্কোয়াডে জায়গা পেলেও এখনো অভিষেক হয়নি তাঁর। ৭ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছেন খুলনার অফ স্পিনার শেখ পারভেজ জীবন।

নাসির কি ফিরেছেন

টুর্নামেন্টের শেষ দুই ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন নাসির হোসেন

এই টুর্নামেন্টে ব্যাট ও বলে উজ্জ্বল ছিলেন রংপুরের হয়ে খেলা নাসির হোসেন। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালে ওপেনিংয়ে নামা এই অলরাউন্ডার দুই ম্যাচেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। বল হাতেও রংপুরের ইনিংস শুরু করেছেন নাসির।

৮ ম্যাচে সব মিলিয়ে ১১৫.৭৯ স্ট্রাইক রেটে ১৭৬ রান করেছেন নাসির। অভিজ্ঞতা, ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ পরিস্থিতি মাথায় রেখে তাঁর ব্যাটিং রংপুরকে পথ দেখিয়েছে। বল হাতে ৮ ম্যাচে ৬ উইকেট পেয়েছেন ওভারপ্রতি ৫.৭৪ গড়ে। রংপুরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

এবারও সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

বিসিবি নির্বাচন ও এশিয়া কাপের ভিড়ে এবার এনসিএল টি-টোয়েন্টি নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত আসরের মতো এবারও বেশ প্রচারণা চালানো হয়েছে।

ফাইনালের আগে ট্রফির সঙ্গে ফটো সেশনে রংপুর অধিনায়ক আকবর ও খুলনা অধিনায়ক মিঠুনের ভাইরাল কেক নিয়ে খুনসুঁটি

ক্রিকেটারদের জন্য মজার কোনো গেম—‘ভাইরাল কেক’ থেকে শুরু করে ‘টেন সেকেন্ড ব্যাক টু ব্যাক’ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাইরাল বিষয়গুলো নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে নিয়মিত। মাঠে একটি বাইসাইকেলও রাখা হয়েছিল। কোনো ব্যাটসম্যান বল সাইকেলে লাগাতে পারলে সেটি পুরস্কার হিসেবে পেতেন। ছিল আরও অনেক আয়োজন। তবে মাঠের বাইরে নানা ঘটনা আর মাঠে খুব একটা রোমাঞ্চকর ক্রিকেট উপহার না দিতে পারায় এবারের এনসিএল টি-টোয়েন্টি কিছুটা কমই আলোচিত হয়েছে।