খারি পিয়েরে ক্যাচটা ধরতেই হাতের ব্যাটটা মাটিতে ফেলে দিলেন সৌম্য সরকার। চোখেমুখে অবিশ্বাস তখন স্থির দাঁড়িয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে রানের জন্য দৌড়ে আসা তাওহিদ হৃদয়।
পিঠে হাত বুলিয়ে সৌম্যকে স্বান্তনা দিলেন। ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে হতাশায় পা–ই যেন চলছিল না তাঁর। ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললেও অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করার আক্ষেপ থাকাই স্বাভাবিক।
সৌম্যর ইনিংসের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। প্রথম ৭ বলে রান পাননি। তখন ১২ বলে ১৪ রানে অপরাজিত তাঁর সঙ্গী সাইফ হাসান। চাপটা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছিল সৌম্যর ওপর। রোস্টন চেজের বলে ওয়াইড স্লিপে দাঁড়িয়েছিলেন জাস্টিন গ্রিভস। সৌম্যর ব্যাটের কানায় লেগে কিপার ও স্লিপের মাঝখান দিয়েই বলটা চলে যায় বাউন্ডারিতে। এরপর সৌম্য এমন দারুণ একটা ইনিংস খেলবেন, তা হয়তো তখনও কারও ভাবনায় ছিল না।
পাওয়ার প্লেতে রিভার্স সুইপে মারা দুটি ছক্কাতেই বড় কিছুর বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন সৌম্য— আগের ম্যাচেই সুপার ওভারে হারের দায় কাঁধে নেওয়ার পর আজ যেন নেমেছিলেন প্রায়শ্চিত্ত করতে। সবমিলিয়ে ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৮৬ বলে ৯১ রানে আউট হন সৌম্য। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১৬৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সৌম্য। সেই ম্যাচের ১২ ইনিংস পর আবারও ন্যূনতম ৯০ রানের ইনিংসের দেখা পেলেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
আজ ব্যাটিংয়ে নেমে সাইফের সঙ্গে জুটিতেও রেকর্ড গড়েন সৌম্য। মিরপুরে ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে এখন সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি তাঁদেরই। ১৭৬ রানের এই জুটি অল্পের জন্য ভাঙতে পারেনি যেকোনো উইকেটেই মিরপুরে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ২০১৫ সালে এপ্রিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিম–তামিম ইকবালের জুটিই এতদিন ছিল সর্বোচ্চ।
২০১৫ সালের এপ্রিলে এই মিরপুরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২৭ রানের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতেই বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন সৌম্য। তবে ক্যারিয়ারের পরের পর্বটা উত্থান–পতনের ভেতর দিয়েই কেটেছে তাঁর। কখনো বাকিদের খারাপ পারফরম্যান্স, কখনো ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত কিছু করে আশা দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত হতাশই করেছেন।
কখনই সেভাবে থিতু হতে পারেননি জাতীয় দলে। গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ছিটকে গিয়েছিলেন ওয়ানডে সংস্করণ থেকে। বাদ পড়ার আগের ম্যাচে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ৭৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন গত বছর ডিসেম্বরে।
অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে আবার ওয়ানডে দলে ফেরেন সৌম্য। প্রথম ম্যাচে ৪ রানে আউট হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে করেন ৪৫ রান। এরপর আজ সেঞ্চুরির সুবাস ছড়িয়ে আউট হলেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো শেরে বাংলায় কালো মাটির কঠিন উইকেটে সৌম্য যেভাবে ব্যাট করলেন, যেভাবে কিছু শট খেলেছেন, ইনিংস টেনে নিলেন, সাইফের সঙ্গে জুটি গড়লেন—এসব মিলিয়ে তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকেরা তো আবারও আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।