পাকিস্তান দলের রূপ দুটি। সহজ টার্গেটে লজ্জাজনকভাবে হেরে যাওয়া দলটির নামও পাকিস্তান, আবার অসম্ভব কোনো সমীকরণ মিলিয়ে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার দলটির নামও পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাকিস্তানের কোন চেহারা দেখা যাবে?
উত্তরটা সময়ের হাতে তোলা থাক। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘোষিত দল দেখে বোঝা যাচ্ছে, দলটি ‘হাইরিস্ক অপশন’ই বেছে নিয়েছে। যাঁরা দলে আছেন, তাঁদের ব্যাটে–বলে লেগে গেলে নাকানিচুবানি খেতে পারে বাংলাদেশ দল। আবার উল্টোও হতে পারে।
সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজের দল থেকে পাকিস্তান বাংলাদেশ সিরিজে ৮ জন ক্রিকেটারকে বাদ দিয়েছে। সংখ্যাটা বড় হলেও পাকিস্তান যে তাদের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে, সেটা বলা যাবে না। নতুন শুরুর ঘোষণা দিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজ শুরু করা পাকিস্তান সেই সিরিজের মূল খেলোয়াড়দের ঠিকই দলে রেখেছে।
৪-১ সিরিজ হারার পরও সালমান আগাকে নেতৃত্বে রাখা হয়েছে। ৫ ম্যাচের সিরিজের ৩টিতে শূন্য ও একটি ১ রানে আউট হওয়া হাসান নেওয়াজকে সামর্থ্য আছে এই বিশ্বাসেই রেখে দেওয়া হয়েছে। ওই সিরিজে ১০৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে প্রমাণও করেছিলেন।
ব্যর্থতার পরও রাখা হয়েছে মোহাম্মদ হারিসকে। টি-টোয়েন্টি মেজাজে যাঁরা ব্যাটিং করতে পারেন, ব্যর্থ হলেও তাঁদের বাংলাদেশ সিরিজে রেখেছে পাকিস্তান। আধুনিক টি-টোয়েন্টি খেলতে পারেন, এমন অনেককে এই সিরিজে যোগও করা হয়েছে।
এবারের পিএসএলে সাহিবজাদা ফারহান ইসলামাবাদের হয়ে ৪৪৯ রান করেছেন ১৫২.২০ স্ট্রাইকরেটে।
এই যেমন সাহিবজাদা ফারহান। পাকিস্তানের হয়ে ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই ওপেনার রান করেছেন মাত্র ৮৬। তবে কয়েক মাস ধরে যেন সাহিবজাদাকে ‘ভূতে’ ধরেছে। গত মার্চে হওয়া ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে ৭ ম্যাচে ৪০টি ছক্কা মেরেছিলেন। জানিয়ে রাখতেই হচ্ছে, ওই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কা ছিল ১৩টি। ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে করেছেন ৬০৫ রান। ৭ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন ৩টি, ফিফটি ২টি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল ৭২ বলে অপরাজিত ১৬২। তাঁর ১৬২ রানের অপরাজিত ইনিংসটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
টুর্নামেন্টে স্ট্রাইক রেট ছিল ১৮৯.৬৫, আর গড়টা তো অবিশ্বাস্য—১২১। একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তিন সেঞ্চুরি করা পঞ্চম ক্রিকেটার ছিলেন সাহিবজাদা। ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান কত ছিল জানেন, ২৮২! মানে সাহিবজাদার চেয়ে ৩২৩ রান কম।
এমন অবিশ্বাস্য টুর্নামেন্ট কাটানোর পর ২৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান এবারের পিএসএলেরও সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ইসলামাবাদের হয়ে ৪৪৯ রান করেছেন ১৫২.২০ স্ট্রাইক রেটে।
ফখর জামান ও সাইম আইয়ুবের দলে ফেরারই কথা ছিল। ফিরেছেন। ফখর পিএসএল চ্যাম্পিয়ন দল লাহোর কালান্দার্সের সদস্য ছিলেন। টুর্নামেন্টে ৪৩৯ রান করে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ফখরের স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা তো না বললেও হয়, তবুও তা জানিয়ে রাখা যেতে পারে—১৫২.৯৬। বড় চোট থেকে ফেরা সাইয়ের পিএসএলটা ভালো কাটেনি। ১২৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৭৪। তবে এসবে ভুললে চলবে না। নো লুক শট খেলতে বিশেষ পারদর্শী এই ক্রিকেটার নিজের দিনে কী করতে পারেন, সেটা সবারই জানা।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে এক সেঞ্চুরি আর তিন শূন্য করে আলোচনায় থাকা হাসানও পিএসএলে রান পেয়েছেন। ৩৯৯ রান করেছেন, গড়টা ছিল ৫৭। স্ট্রাইক রেট ১৬২.১৯। তাঁদের সঙ্গে মোহাম্মদ হারিসের নামটা যোগ করুন। পিএসএলে প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা হারিস পাওয়ার প্লেতে বেধড়ক পিটুনি দিতে পটু।
সব মিলিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ আক্রমণাত্মক। গত কয়েক বছর বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বে চলা এই ব্যাটিং অর্ডারকে এখন বিধ্বংসীই বলা যায়। ফখর, হারিস, হাসানরা টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার সবখানে ব্যাটিং করতে পারেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজে ওপেন করা হাসান এবারের পিএসএলে মিডল অর্ডারে খেলেছেন। ফখর তো টি-টোয়েন্টি সর্বোচ্চ ২৬ ইনিংস ৩ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। ৪ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন ১৮ বার।
তাঁদের পাশাপাশি এই দলে আছেন সালমান, শাদাব ও খুশদিল শাহ। বাংলাদেশের বোলারদের তাই এই সিরিজে কঠিন পরীক্ষা দিতে হতে পারে। এমনিতেই চোটের কারণে নেই তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। আর ফর্মের কথা চিন্তা করলে তো বাংলাদেশের দিন যেটাই যায়, সেটাই মনে হয় ভালো। সর্বশেষ এই দলটি সিরিজ হেরেছে আমিরাতের কাছেও। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ছক্কাবাজরা যদি জ্বলে ওঠেন, তাহলে বাংলাদেশের বিপদ আছে।
অবশ্য বাংলাদেশ দল তো বিপদের মধ্যেই থাকে। এ আর নতুন কী!