টিভির স্ক্রিনে একবার দেখাল শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদকে। পার্থে টিভি আম্পায়ারের কক্ষে খুব মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনে চোখ সেঁটে আছেন। দৃশ্যটি দেখে বাংলাদেশের যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমীর গর্ব হতে পারে। অ্যাশেজে বাংলাদেশি আম্পায়ার!
শরফুদ্দৌলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই এমন গর্বিত করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে জায়গা করে নেন আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি—দুই সংস্করণের বিশ্বকাপেই মাঠের আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন এ বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। তবে শরফুদ্দৌলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবার নজরে আসেন সম্ভবত গত বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে।
সেবার মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্টে টিভি আম্পায়ার হিসেবে প্রযুক্তি এড়িয়ে নিজের চোখে যা দেখেছেন, সেটির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন শরফুদ্দৌলা। তখন তাঁর সেই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন সাইমন টফেল, রিকি পন্টিং, রবি শাস্ত্রী ও মাইকেল ভন।
অস্ট্রেলিয়ায় সেবার আম্পায়ারিংয়ে প্রশংসা কুড়ানোর কারণেই এবার অ্যাশেজে শরফুদ্দৌলাকে দেখা যাচ্ছে কি না, কে জানে! বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অন্তত এমন ভাবতে পারেন। তবে ৮ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ নিজেদের এক প্রতিবেদনে এর কারণ ব্যাখ্যা করে। ডিআরএসে এ বছর সেরা পারফর্ম করা এলিট প্যানেলের আম্পায়ারদের একটি তালিকা করে সংবাদমাধ্যমটি। তাদের মধ্যে সেরা আম্পায়াররা কেন এবার অ্যাশেজে নেই?
তার ব্যাখ্যায় বলা হয়, এই তালিকার শীর্ষে থাকা অ্যালেক্স হোয়ার্ফ (ইংল্যান্ড), রড টাকার (অস্ট্রেলিয়া), পল রেইফেল (অস্ট্রেলিয়া), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড) ও রিচার্ড কেটেলবরোকে (ইংল্যান্ড) অ্যাশেজে দেখতে না পারার কারণ আইসিসির একটি নিয়ম—সিরিজের অংশ নেওয়া দুই দেশের কোনো আম্পায়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয় না।
তালিকাটিতে থাকা নিরপেক্ষ দেশের আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা, আল্লাহুদেইন পালেকার এখন নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ব্যস্ত। নিউজিল্যান্ডের ক্রিস গ্যাফানে আছেন ভারতে। সেখানে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলছে। আইসিসির এলিট প্যানেলের ১২ জন আম্পায়ারের মধ্যে শুধু ভারতের নিতিন মেনন, দক্ষিণ আফ্রিকার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক ও বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলাকেই শুধু পাওয়া গেছে অ্যাশেজের জন্য। পার্থে নামার আগে এ বছর টেস্টে শরফুদ্দৌলার বিপক্ষে ২৯টি রিভিউয়ে ১০বার তাঁকে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়েছে। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের এই তালিকায় সবার শেষে (১২তম) শরফুদ্দৌলা।
পার্থে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিতিন মেনন ও আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক। শরফুদ্দৌলা আছেন টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে। তবে ব্রিসবেনে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে পাল্টে যাবে তাঁর ভূমিকা। ব্রিসবেনে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দেখা যাবে তাঁকে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা চাইলে শরফুদ্দৌলাকে নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেই পারেন। অ্যাশেজের মতো কুলীন সিরিজে বাংলাদেশের আম্পায়ারকে দেখা যাবে—এই ব্যাপারটাই তো অন্যরকম। শরফুদ্দৌলা সেখানে বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে পা রেখেছেন অ্যাশেজে। সিরিজের বাকি তিন টেস্টে অবশ্য শরফুদ্দৌলাকে দেখা যাবে না। ব্রিসবেন টেস্ট শেষে অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন ও সিডনিতে দেখা যাবে, নিতিন মেনন, জেফ ক্রো, আহসান রাজা ও ক্রিস গ্যাফানিকে।