‘এতটুকু তো আমি আশা করতেই পারি…’, মুখে একটা মুচকি হাসি রেখে কথাটা বললেন নাজমুল হোসেন। তা বাংলাদেশ অধিনায়কের কী সেই আশা? টেস্ট ক্রিকেটের প্রচারটা যেন আরেকটু বেশি হয়!
প্রচারের জন্য যে মাঠের পারফরম্যান্সও দরকার, তা অজানা নয় নাজমুলের। সাংবাদিকদের কাছে লাল বলের ক্রিকেটের প্রচার বাড়ানোর অনুরোধের আগে তাই তিনি এই সংস্করণে পিছিয়ে থাকার দায়টাও তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধেই।
আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজের প্রথমটি আজ শুরু হচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। টেস্টের প্রতিপক্ষ হিসেবে আয়ারল্যান্ড খুব একটা সবল নয়। ২০২৩ সালে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া একমাত্র টেস্টে জিতেছিল বাংলাদেশই। কিন্তু অস্বস্তিটা প্রথম টেস্টের ভেন্যু নিয়ে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এর আগে খেলা ৪ টেস্টের তিনটিতেই যে হেরেছে বাংলাদেশ!
তবে অতীত পেছনে ফেলে এই সিরিজটা উপভোগই করতে চান টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল। সব ঠিক থাকলে মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হবে মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি।
সিরিজটা উপভোগ করতে চাওয়ার এটাই বড় কারণ। সিলেটে কাল সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল বলেন, ‘এই দুইটা টেস্ট ম্যাচ সবাই মিলে একসঙ্গে উপভোগ করতে চাই। বিশেষত এক শতম টেস্টটা যদি উনি (মুশফিক) সুস্থভাবে খেলতে পারেন, তাহলে ওই পাঁচটা দিন আমরা সবাই মিলে উদ্যাপন করব।’ এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মুশফিক।
অবশ্য এই দুই বছরে টেস্ট ক্রিকেটে পরিপক্ব হয়ে উঠেছে আয়ারল্যান্ড। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের শেষ তিনটি টেস্টই জিতেছে তারা। কিন্তু দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে তাঁদের জন্য বাস্তবতা রয়ে গেছে আগের মতোই। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণির কোনো টুর্নামেন্ট নিয়মিত না হওয়ায় টেস্টের দল বাছাই করতে আইরিশদের ভরসা ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট। এ নিয়ে কালও সংবাদ সম্মেলনে অনুযোগ ছিল আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নির কণ্ঠে।
তবু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে টেস্টেই কিছুটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস আয়ারল্যান্ডের। দলটির অধিনায়ক বলেন, ‘জিততে তো অবশ্যই চাই। কিন্তু আগে যতটা ফল নিয়ে ভাবতাম, এখন এত ভাবছি না। আমরা জানি, একটা টেস্ট ম্যাচ জেতা কত কঠিন, লম্বা সময় ধরে ভালো খেলতে হবে আমাদের। আমরা যে ধরনের আবহাওয়ায় অভ্যস্ত, তার চেয়ে একটু কঠিন হবে এখানে।’
সিলেটের উইকেটে ব্যাটসম্যান–বোলারদের জন্য সমান সুবিধা থেকেছে অতীতে। এবারও স্পোর্টিং উইকেটই চাওয়া স্বাগতিক অধিনায়কের। আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক বালবার্নি অবশ্য উইকেট নিয়ে কথা বলতেই রাজি নন। ম্যাচের আগের দিন এক রকম উইকেট দেখে পরে তা বদলে যেতে দেখার অভিজ্ঞতার কারণেই তাঁর এই আপত্তি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন নিজেদের দিকে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বাড়তি কোনো পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশেরও। অধিনায়ক নাজমুল বলেন, ‘বাড়তি কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি এই সিরিজ আমরা ভালোভাবে খেলতে পারি, তাহলে এটা আমাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে সব সময় চ্যালেঞ্জ থাকে। প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন সরগরম মাঠের বাইরের নানা ঘটনাপ্রবাহে। জাতীয় দলকে যেতে হয়েছে প্রবল সমালোচনার ভেতর দিয়ে। সেই ঝড়ঝাপটা থেকে অবশ্য টেস্ট দল দূরেই থেকেছে। গত জুলাইয়ে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। যা হওয়ার, তার সবই হয়েছে মাঝে সাদা বলের ক্রিকেটে খেলা ২৮ ম্যাচে।
তবু ক্রিকেট আর জাতীয় দল ঘিরেই যেহেতু সবকিছু, ক্রিকেটারদের মধ্যে এর প্রভাব পড়া নিয়ে চিন্তাটা থেকেই যায়। এর মধ্যে টেস্ট নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও আবার তা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাজমুল। ৫ মাস পর টেস্ট খেলার আগে তাঁর ভাবনাটা সহজ—যে বিষয় নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে ভেবে কাজ কী!
মুশফিকের শততম টেস্ট আর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরুর আগে আপাতত নাজমুলের মনোযোগ সিরিজটা উপভোগ করার দিকেই। দলেরও নিশ্চয়ই সেটাই চাওয়া।