সুপার ওভারে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং শুরু করেন সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার
সুপার ওভারে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং শুরু করেন সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার

উইকেট, অধিনায়ক, ব্যাটিং পরিকল্পনা—সবই প্রশ্নের মুখে

কালো মাটির উইকেট, দ্বিতীয় ওয়ানডের সুপার ওভার, মেহেদী হাসান মিরাজের অধিনায়কত্ব—ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে সামনে আসছে একটার পর একটা বিতর্ক। এসবের কারণ হিসেবে জাতীয় দলের সাবেক চার অধিনায়কের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে চিন্তার ঘাটতি আর ভুল সিদ্ধান্ত—

চাই ভারসাম্যপূর্ণ উইকেট

রকিবুল হাসান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক

সব দলই ঘরের মাঠে নিজেদের শক্তি অনুযায়ী উইকেট তৈরি করে। কিন্তু এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের উইকেটে বল শুরু থেকেই অনেক বেশি টার্ন করেছে। আমি যখন দেশের বাইরে খেলতে যাব, তখন কি এ রকম উইকেট পাব? নিশ্চয়ই পাব না।

বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান

প্রতিপক্ষ যে রকম উইকেটে অভ্যস্ত নয়, ঘরের মাঠে সে রকম উইকেট তৈরি করে আমরা তাদের হারালাম, ম্যাচ জিতে বাহবা নিলাম—আমি মনে করি এমন পরিকল্পনার পেছনে নেতিবাচক মানসিকতা কাজ করে। আপনি যখন বাইরে খেলতে যাবেন, সেখানে আপনাকে ভিন্ন উইকেটে খেলতে হবে। ঘরের মাঠে এ রকম উইকেটে খেললে তখন কিন্তু ভালো করা সম্ভব হবে না।

আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ উইকেট তৈরি করতে হব; যেখানে আমরা কিছুটা সুবিধাও নেব, একই সঙ্গে উইকেট এতটা খারাপও হবে না। আমি লড়াই করব, জিতব নয়তো হারব। কিন্তু চতুরতার আশ্রয় নিয়ে যদি নিজেই সেটার ফাঁদে পড়ে যাই, তাহলে কী লাভ হবে?

মিরাজকে আরও সময় দিতে হবে

মিনহাজুল আবেদীন, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা প্রথমবারের মতো সুপার ওভার খেলেছি, এটা নতুন অভিজ্ঞতা। তবে আমি বলব দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হওয়া সুপার ওভারে টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাটসম্যান নির্বাচনে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সুপার ওভারে আমরা ১০ রানের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকে রেখেছিলাম। খুব কঠিন লক্ষ্য ছিল না, তবু আমরা জিততে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন

মিরাজের অধিনায়কত্ব নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। তবে আমি বলব অধিনায়ক হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্স মূল্যায়নের এখনো সময় আসেনি। আরও ৫-৬টা সিরিজ গেলে বোঝা যাবে সে আসলেই চাপ নিতে পারছে কি না। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে পুরো দায়িত্ব নিয়ে এটা মিরাজের মাত্র দ্বিতীয় সিরিজ। তাঁকে আরও সময় দিতে হবে।

মিরাজের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে, তিন সংস্করণেই অনেক দিন ধরে খেলছে। অনূর্ধ্ব-১৯-এ অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতাও আছে। দল না জিতলে যে চাপটা আসে, সেটি সামলে সামনের সিরিজটা কেমন খেলে, এখন এটাই দেখার বিষয়।

রিশাদকেই পাঠানো উচিত ছিল

আকরাম খান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক

এই উইকেটে সুপার ওভারে ১১ রান ভালো লক্ষ্য। তবু রানটা শুরুতেই চলে এসেছিল। সৌম্যর বড় শট খেলতে যাওয়া উচিত হয়নি। এ রকম উইকেটে  বড় শট খেলতে গেলে ৬০ শতাংশ সময় নেতিবাচক ফলই আসবে। আর যদি মেরে খেলারই পরিকল্পনা থাকত, তাহলে রিশাদকে পাঠানো উচিত ছিল। যে তিনজনকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা কেউ কিন্তু সুপার ওভারের খেলোয়াড় নয়।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান

আর এ ধরনের উইকেটে খেললে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। আমাদের এখানে আগেও স্পিনসহায়ক উইকেট হয়েছে। কিন্তু তখন আমরা আগে বিশ্লেষণ করে দেখেছি স্পিন বল খেলার মতো খেলোয়াড় আমাদের দলে আছে কি না। ব্যাটিং ভালো করে তারপর ম্যাচ জিতেছি।

এখন দেখা যাচ্ছে, যে উইকেট বানাচ্ছি সেখানে অন্য দল যেভাবে ব্যাট করছে, আমরাও সেভাবেই করছি। উইকেট বানানোর সময় আমাদের খেলোয়াড়দের স্বাচ্ছন্দ্য ও মানের দিকটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের এই চিন্তায় ঘাটতি ছিল।

আমি সৌম্যকেও আশা করিনি

হাবিবুল বাশার, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক

সুপার ওভারে আমি সৌম্যকেও আশা করিনি। ও উইকেটে গিয়েই মেরে দেওয়ার মতো ব্যাটসম্যান নয়। এ জন্য টি-টোয়েন্টিতে তার রেকর্ডও ভালো নয়। সাইফ-সৌম্যকে তা-ও মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু তিনে বাঁহাতি বলে নাজমুলকে পাঠিয়েছে, এটা একদমই ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি।

হাবিবুল বাশার

এখানে রিশাদ হতে পারত, তাওহীদ হৃদয় হতে পারত। তাদের যেকোনো বলে মেরে দেওয়ার সামর্থ্য আছে। সুপার ওভারে খেলাটা অন্য রকম, হয়তো তারাও গিয়ে আউট হয়ে যেতে পারত। তবু এটাই হতো ঠিক সিদ্ধান্ত।

আর ম্যাচটা তো সুপার ওভারেও যাওয়ার কথা ছিল না। মূল ম্যাচে বোলিংয়ে আমরা খুব খারাপ করিনি। কিন্তু ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল।

৪০ ওভার পর্যন্ত আমরা ৪ রান করে নিয়ে উইকেট হাতে রেখে বল পুরোনো হয়ে যাওয়ার পর মারতে পারতাম। ওরা কিন্তু সেটাই করেছে, সফলও হয়েছে।