টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরেই দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন সূর্যকুমার
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরেই দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন সূর্যকুমার

টি–টোয়েন্টির সূর্যর ওয়ানডে–দুঃখ

সূর্যকুমার যাদব তাঁর সেরাটা খেললেন। তবে সেই ইনিংসটা এল সময়ের চার দিন পর! বিশ্বকাপ ফাইনাল নয়, তিনি নিজের সেরাটা দিলেন দ্বিপক্ষীয় সিরিজকে। সেটাও তাঁর চিরচেনা টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। তাই তো এমন একটা ইনিংস খেলার পরও ভারতীয় সমর্থকেরা যেন তাঁর প্রশংসা করেও করছেন না! একটা ‘কিন্তু’ রেখেই দিচ্ছেন। সবারই একটাই আফসোস—ইস্‌, সূর্য যদি সেদিন শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারতেন!

কী হয়েছিল আহমেদাবাদের সেই ফাইনালে? ফাইনালে সূর্য যখন ক্রিজে আসেন, ভারতের রান ৫ উইকেটে ১৭৮। ক্রিজে ছিলেন লোকেশ রাহুল। ১০৭ বলে ৬৬ রান করে রাহুল যখন আউট হন, ভারতের স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেটে ২০৩ রান। তখনো ইনিংস শেষ হতে বাকি ছিল ৫১ বল।

সেই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ খুব একটা লম্বা ছিল না। ৬ উইকেট পড়ার পরই বেরিয়ে গিয়েছিল ‘লেজ’। ক্রিজে আসতে হয়েছে মোহাম্মদ শামিকে। শামি কিংবা যশপ্রীত বুমরারা কেউই ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি। আর তা অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন সূর্য। শেষ দিকে বেশি স্ট্রাইকে থাকার চেষ্টাও দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে।

বুমরা যখন ফিরে যান, তখনো ম্যাচে ৩১ বল বাকি ছিল। অনেকেই আশা করেছিলেন, সূর্য এখন হয়তো কিছু একটা করবেন। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার দারুণ কৌশলে স্লোয়ার বাউন্সারে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার আগে করেন ২৮ বলে ১৮ রান। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কিছু রান পাবেন বলেই তো তাঁকে ওয়ানডে দলে নেওয়া!

ফাইনালে সূর্য করেন মাত্র ১৮ রান

ওয়ানডেতে বরাবরই সূর্যকুমারের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্নে উঠেছে। ৩৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে গড় মাত্র ২৫, অর্ধশতক তিনটি। এরপরও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর ভরসা রেখেছে। তারা নানা সমালোচনার মুখেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সূর্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে থাকছেন। তবে যে কারণে তাঁর ওপর এত বিনিয়োগ, সেটাই তিনি দলের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনের সময়ে পূরণ করতে পারেননি।

অথচ চার দিন পরই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সূর্য কতটা সাবলীল! যখন ক্রিজে এলেন, ভারত অনেক চাপে। ২০৯ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই ২ উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে ৪২ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলেছেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ৯টি চার ও ৪টি ছক্কা মেরে সূর্য যখন ফেরেন ভারতের স্কোর ১৭.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৪। অর্থাৎ জয়ের জন্য ভারতের আর প্রয়োজন ছিল ১৪ বলে মাত্র ১৫ রান। টি-টোয়েন্টি এটা তাঁর টানা তৃতীয় অর্ধশতক। হয়েছেন আরও একবার ম্যাচসেরা।

গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪২ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলেছেন সূর্য

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ম্যাচসেরা হওয়ার রেকর্ডটাও বিস্ময় জাগানিয়া। গতকাল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৩ বারের মতো ম্যাচসেরা হয়েছেন সূর্য। ছাড়িয়ে গেছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচসেরা হয়েছেন ১২ বার। রোহিত ১২ বার ম্যাচসেরা হতে খেলেছেন ১৪৮ ম্যাচ। সূর্যর তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে লেগেছে মাত্র ৫৪ ম্যাচ। সূর্যর চেয়ে দুবার বেশি, অর্থাৎ ১৫ বার ম্যাচসেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি। প্রজন্মসেরা কোহলি খেলেছেন ১১৫ ম্যাচ। সূর্যকুমার ও কোহলির মধ্যে আছেন আরও একজন, তিনি মোহাম্মদ নবী। ১০৯ ম্যাচে ১৪ বার ম্যাচসেরা হয়েছেন এই আফগান ক্রিকেটার।

শুধু গতকালের ইনিংসটাই নয়, সূর্যকুমারের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটাও বিস্ময়ের জন্ম দেয়। কারণ, একই সঙ্গে ধারাবাহিকতা আর অবিশ্বাস্য স্ট্রাইক রেট এবং বড় ইনিংস খেলার সক্ষমতা—এই তিনের মিশেল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই খুব একটা দেখা যায় না। কোহলির কথাই ধরুন, প্রায় ৫৩ গড়ে টি-টোয়েন্টিতে রান করেছেন, তবে স্ট্রাইক রেট ১৪০-এর নিচে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও উদাহরণ হিসেবে আনা যেতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার এই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে রান করেন, তবে গড় মাত্র ২৮.৪০। অথচ সূর্য ১৭৩.৩৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেও অবিশ্বাস্য রকমের ধারাবাহিক। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর গড় ৪৬.৮৫। ৫১ ইনিংসের ক্যারিয়ারে ৩টি শতক ও ১৬টি অর্ধশতক।

টি-টোয়েন্টিতে সফল বলেই ওয়ানডেতেও তাঁকে টি-টোয়েন্টির মতো ব্যবহার করতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই তো ফাইনালে ২৯তম ওভারে চার উইকেট হারানোর পর ভারত সূর্যর আগে রবীন্দ্র জাদেজাকে পাঠিয়েছিল ব্যাটিংয়ে। তবে এরপরও সফলতা মেলেনি। আর সেরাটা দেওয়ার সেরা মঞ্চটাও তিনি ফেলে এসেছেন। সূর্যর ওয়ানডে ক্যারিয়ার আর আলোর মুখ দেখবে কি না, সেটা সময়ই বলবে। তবে এত দিন পর্যন্ত যা হয়েছে, সূর্য নিজেও হয়তো রহস্য উদ্‌ঘাটন করার চেষ্টা করবেন—ওয়ানডে ম্যাচে কী হয় তাঁর!