আইপিএল থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ ক্রিকেটার

আইপিএল মানেই অর্থের ঝনঝনানি। এই টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে খেলোয়াড়দের পকেটে ঢোকে বড় অঙ্কের অর্থ। আইপিএলের যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হয়ে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন কোন ১০ ক্রিকেটার, তা নিয়েই এ আয়োজন—

দিনেশ কার্তিক

আইপিএল দল: দিল্লি ক্যাপিটালস, পাঞ্জাব কিংস, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, গুজরাট লায়নস ও কলকাতা নাইট রাইডার্স

আয়: ৯০ কোটি ৪০ লাখ রুপি

দিনেশ কার্তিক

আইপিএলে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০০৮ সালে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে। আয় ছিল ২ কোটি ১০ লাখ রুপি। এরপর দিনেশ কার্তিক খেলেছেন পাঞ্জাব কিংস, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, গুজরাট লায়নস, কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। ২০১৪ সালে দিল্লিতে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপি। ২০১৫ সালে বেঙ্গালুরুর হয়ে আয় করেন ১০ কোটি ৫০ লাখ রুপি। গুজরাটে দুই মৌসুমে পান ২ কোটি ৩০ লাখ করে। কলকাতায় ২০১৮–২১ সাল পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে পেয়েছেন ৭ কোটি ৪০ লাখ করে এবং আইপিএল ক্যারিয়ারের শেষ তিন বছর (২০২২-২৪) বেঙ্গালুরুতে পান ৫ কোটি ৫০ লাখ রুপি করে। সব মিলিয়ে তাঁর মোট ৯০ কোটি ৪০ লাখ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১৩ কোটি টাকা।

শিখর ধাওয়ান

আইপিএল দল: দিল্লি ক্যাপিটালস, ডেকান চার্জার্স, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও পাঞ্জাব কিংস
আয়: ৯১ কোটি ৮০ লাখ রুপি

শিখর ধাওয়ান

শিখর ধাওয়ানের আইপিএল–যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে মাত্র ১২ লাখ রুপি বেতনে। এরপর খেলেছেন ডেকান চার্জার্স, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং শেষ পাঞ্জাব কিংসের হয়ে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রতিবছর হায়দরাবাদ তাঁকে দিয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপি। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দিল্লি ও পাঞ্জাবে পেয়েছেন ৫ কোটি ২০ লাখ থেকে ৮ কোটি ২৫ লাখ রুপি পর্যন্ত। ১৬ বছরের এ যাত্রায় আইপিএল থেকে তাঁর মোট আয় ৯১ কোটি ৮০ লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১৫ কোটি টাকা।

গৌতম গম্ভীর

আইপিএল দল: দিল্লি ক্যাপিটালস ও কলকাতা নাইট রাইডার্স
আয়: ৯৪ কোটি ৭২ লাখ রুপি

গৌতম গম্ভীর

২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে বছরে ২ কোটি ৯০ লাখ রুপি করে আয় করেন গৌতম গম্ভীর। এরপর ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্সে বছরে ১১ কোটি ৪ লাখ রুপি পান। ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কলকাতায় বেতন বেড়ে প্রতিবছর ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপি হয়। ২০১৮ সালে আবার দিল্লিতে ফিরে বছরে ২ কোটি ৮০ লাখ রুপি পান। ১১ বছরের এই সময়কালে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে মোট আয় করেন ৯৪ কোটি ৭২ লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গম্ভীর বর্তমানে ভারত জাতীয় দলের প্রধান কোচ।

এবি ডি ভিলিয়ার্স

আইপিএল দল: দিল্লি ক্যাপিটালস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
আয়: ১০২ কোটি ৫০ লাখ রুপি

এবি ডি ভিলিয়ার্স

২০০৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত দিল্লি ডেয়ারডেভিলস (বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিটালস) এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে প্রতি মৌসুমে ১ কোটি ৩০ লাখ রুপি আয় করেন। ২০১১ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে যোগ দিয়ে পান ৫ কোটি রুপি। পরের দুই মৌসুমেও একই দাম পান। ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রতিবছর পান ৯ কোটি ৫০ লাখ রুপি। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আয় ছিল ১১ কোটি রুপি করে। ১৪ বছরের এ যাত্রায় তাঁর মোট আয় দাঁড়িয়েছে ১০২ কোটি ৫০ কোটি রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

সুরেশ রায়না

আইপিএল দল: চেন্নাই সুপার কিংস ও গুজরাট লায়নস
আয়: ১০৪ কোটি ৫ লাখ রুপি

সুরেশ রায়না

তাঁকে বলা হতো মি. আইপিএল। একটা সময় আইপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটাও তাঁর। সেই সুরেশ রায়না আইপিএলের প্রথম আসরে বিক্রি হন ২ কোটি ৬০ লাখ রুপিতে। তাঁকে কিনে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। ২০১১ সালে চেন্নাই তাঁকে ৫ কোটি ৯০ লাখ রুপিতে ধরে রাখে। ২০১৪ সালে রায়নার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৫০ লাখ রুপি।
চেন্নাই নিষিদ্ধ হলে ২০১৬ সালে গুজরাট লায়নস তাঁকে ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে দলে নেয়। ২০১৭ সালেও একই দামে গুজরাটে খেলেন রায়না। ২০১৮ সালে চেন্নাই আইপিএলে ফিরলে রায়নাকে ১১ কোটি টাকায় আবার দলে নেয় চেন্নাই। ২০২০ পর্যন্ত এই দামে খেলেন রায়না। নিজের সর্বশেষ আসর ২০২১ সালে তাঁকে ২ কোটি রুপিতে ধরে রাখে চেন্নাই। সব মিলিয়ে রায়নার আয় ১০৪ কোটি ৫ লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

সুনীল নারাইন

আইপিএল দল: কলকাতা নাইট রাইডার্স
আয়: ১০৭ কোটি ২০ লাখ রুপি

সুনীল নারাইন

আইপিএলে সুনীল নারাইনের পুরো ক্যারিয়ার কেটেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সে। ২০১২ সালে ৩ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে নেয় কলকাতা। পরের বছরও একই দামে খেলেন। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭—টানা চার বছর পান ৯ কোটি ৫০ রুপি করে। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে আয় করেন ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপি। পড়তি ফর্ম ও চাহিদা কমার কারণে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আয় নেমে আসে ৬ কোটি রুপিতে। সর্বশেষ আসরে তাঁর দাম বেড়ে ১২ কোটি রুপিতে পৌঁছায়। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলের নিলাম বা খেলোয়াড় ধরে রাখা থেকে নারাইন সর্বোচ্চ আয় করেছেন—১০৭ কোটি ২০ লাখ রুপি, টাকায় ১৫১ কোটি ৩২ লাখ।

 রবীন্দ্র জাদেজা

আইপিএল দল: রাজস্থান রয়্যালস, কোচি টাস্কার্স কেরালা, চেন্নাই সুপার কিংস ও গুজরাট লায়নস
আয়: ১৭০ কোটি ৯১ লাখ রুপি

রবীন্দ্র জাদেজা

রবীন্দ্র জাদেজার আইপিএল–যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে মাত্র ১২ লাখ রুপিতে। এরপর কোচি টাস্কার্স কেরালা, চেন্নাই সুপার কিংস ও গুজরাট লায়নসের হয়ে খেলেছেন তিনি।
আইপিএলে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে ২০১০ সালে নিষিদ্ধও ছিলেন জাদেজা। এর আগের দুই মৌসুম খেলেছেন রাজস্থানের হয়ে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ২০১১ সালে কোচি টাস্কার্স কেরালা তাঁকে ৪ কোটি ৩৭ লাখ রুপিতে দলে নেয়। জাদেজার বর্তমান দল চেন্নাই সুপার কিংস তাঁকে প্রথমবার দলে নেয় ২০১২ সালে। সেবার চেন্নাইকে খরচ করে ৯ কোটি ২০ লাখ কোটি রুপি। ২০১৩ সালেও চেন্নাইয়ে জাদেজা পেয়েছেন একই মূল্য। তবে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাঁর দাম কমে হয় ৫ কোটি ৫০ লাখ রুপি।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে আইপিএলে নিষিদ্ধ ছিল চেন্নাই। ওই দুই মৌসুম জাদেজা খেলেছেন গুজরাট লায়নসে। সেখানে ২০১৬ সালের (৫ কোটি ৫০ লাখ) চেয়ে ২০১৭ সালে (৯ কোটি ৫০ লাখ) বেশি আয় করেছেন জাদেজা।
চেন্নাই আইপিএলে ফেরে ২০১৮ সালে। সেই মৌসুম থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৭ কোটিতে দলটির হয়ে খেলেছেন জাদেজা। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জাদেজা ফ্র্যাঞ্চাইজিটি থেকে পেয়েছেন ১৬ কোটি রুপি করে। আর সর্বশেষ ২০২৫ আইপিএলে তাঁকে ১৮ কোটি রুপিতে ধরে রাখে চেন্নাই। জাদেজার মোটা আয় দাঁড়ায় ১৭০ কোটি ৯১ লাখ রুপি, টাকার হিসাবে ২১৩ কোটির বেশি।

মহেন্দ্র সিং ধোনি

আইপিএল দল: চেন্নাই সুপার কিংস ও রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্ট
আয়: ১৯২ কোটি ৬০ লাখ রুপি

মহেন্দ্র সিং ধোনি

চেন্নাই সুপার কিংস ও মহেন্দ্র সিং ধোনি নাম দুটি একে অন্যের সমার্থক। ২০০৮ সালে ৬ কোটি রুপিতে ধোনিকে দলে নেয় চেন্নাই। ২০১০ সালে চেন্নাইকে প্রথমবারের মতো আইপিএল শিরোপা জেতানোর পর তাঁর বেতন বেড়ে হয় ৮ কোটি ২০ লাখ রুপি। টানা তিন মৌসুম এই দামে খেলার পর ২০১৪ সালে চেন্নাই তাঁকে ধরে রাখে ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে।
২০১৫ সালে যখন চেন্নাই সুপার কিংস নিষিদ্ধ হয়, তখন রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্ট তাঁকে ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে দলে নেয়। সেখানে পরবর্তী দুই বছর খেলেন ধোনি। ২০১৮ সালে চেন্নাই আইপিএলে ফিরে এলে ধোনিকে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১৫ কোটি রুপিতে আবার দলে নিয়েছিল চেন্নাই। ২০২২ সালে ধোনিকে ধরে রাখতে চেন্নাইকে খরচ করতে হয় ১২ কোটি রুপি। সর্বশেষ আইপিএলে তাঁর বেতন কমে হয় ৪ কোটি। সব মিলিয়ে ধোনি আয় করেছেন ১৯২ কোটি ৬০ লাখ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

বিরাট কোহলি

আইপিএল দল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
আয়: ২০২ কোটি ৯৬ লাখ রুপি

বিরাট কোহলি

বিরাট কোহলিই আইপিএল ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি প্রথম আসর থেকে এক দলের হয়ে খেলেছেন। তবে আইপিএলের শুরুতে বেশি দাম পাননি কোহলি। প্রথম আসরের আগে তাঁকে মাত্র ১২ লাখ রুপিতে দলে নিয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। তবে ২০১১ সালে সেই মূল্য দাঁড়ায় ৮ কোটি ২০ লাখ রুপি। তাঁর পারফরম্যান্স এবং ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে বেতনও বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালে কোহলিকে ধরে রাখতে বেঙ্গালুরুর খরচ হয় ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপি। ২০১৮ সালে অঙ্কটা ১৭ কোটিতে পৌঁছায়, যা ওই সময়ের রেকর্ড। ২০২২ সালে বেঙ্গালুরুতে কোহলির বেতন ২ কোটি কমে ১৫ কোটি রুপি হয়। ২০২৩ সাল থেকে তিনি একই বেতন পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে আইপিএল থেকে কোহলির আয় দাঁড়ায় ২০২ কোটি ৯৬ লাখ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৬৩ কোটি টাকা।

রোহিত শর্মা

আইপিএল দল: ডেকান চার্জার্স ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস
আয়: ২১৬ কোটি ৩০ লাখ রুপি

রোহিত শর্মা

রোহিত শর্মার আইপিএল–যাত্রা শুরু হয়েছিল ডেকান চার্জার্সের হয়ে। ২০০৮ সালে হায়দরাবাদভিত্তিক দলটি তাঁকে দলে নিয়েছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে। তিন মৌসুম পর, ২০১১ সালে আইপিএল মেগা নিলাম থেকে তাঁকে ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে দলে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। তখন থেকেই মুম্বাই রোহিতকে ধরে রেখেছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে তিন মৌসুম খেলার পর ২০১৪ সালে তাঁর পারিশ্রমিক বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫০ লাখ রুপি। এরপর ২০১৮ সালে তা হয় ১৫ কোটি। ২০২২ সালের মেগা নিলামের আগেও তাঁকে ১৬ কোটি রুপিতে ধরে রাখে মুম্বাই। সর্বশেষ মেগা নিলামেও তাঁকে ১৬ কোটি ৩০ লাখ রুপিতে রেখে দেয়। সব মিলিয়ে রোহিত আইপিএল থেকে আয় করেছেন ২১৬ কোটি ৩০ লাখ রুপি, টাকার হিসাবে ২৭৯ কোটি ৩ লাখ। রোহিতের নেতৃত্বেই মুম্বাই রেকর্ড পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।