আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ
আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ

র‌্যাঙ্কিং–লড়াইয়ের আগে একই বিন্দুতে বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজ

চেয়ারটা ভালো করেই চেনা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ ড্যারেন স্যামির। কখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের, কখনো বিপিএলের কোনো দলের অধিনায়ক হিসেবে এসে বসেছেন মিরপুরের সংবাদ সম্মেলনকক্ষের চেয়ারে। এক বছর ধরে সেই চেয়ারের উত্তাপটা টের পাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও। গতকাল আরেকবার আলাদা সময়ে সেই চেয়ারে বসেছেন দুজন।
সংবাদ সম্মেলনে নানা বাঁক পেরিয়ে দুজনের দিকে ছুটে যাওয়া প্রশ্নই একটা সময়ে মিলেছে গিয়ে একই গন্তব্যে। সেই গন্তব্য আজ শুরু হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। যেখানে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আইসিসির ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিং। র‌্যাঙ্কিংয়ের নবম স্থানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নিতে ধরে রাখতে হবে জায়গাটা। আর দশম স্থানে থাকা বাংলাদেশকে ২০২৭ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে উঠে আসতে হবে অন্তত ৯ নম্বরে। এই সিরিজের ফলও তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব ফেলবে এই লড়াইয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্স

সিরিজ শুরুর আগে দুই দলের কোচের সংবাদ সম্মেলন এক বিন্দুতে মেলার আগে ঘুরে এসেছে নানা বাঁক। স্যামিকে যেমন প্রশ্ন করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভেঙে যাওয়া নিয়ে। তাঁরই স্বদেশি বাংলাদেশ কোচ সিমন্সকে কথা বলতে হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার পর বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের উদ্দেশে সমর্থকদের বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভেঙে দেওয়ার প্রশ্নে আবেগ ছুঁয়ে গেছে স্যামিকে, ক্রিকেটারদের নিয়ে বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যে বিরক্তির কথা জানিয়েছেন সিমন্স।
র‌্যাঙ্কিং–লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজের আগে বাংলাদেশ দল তোপের মুখে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফল নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ঘিরেও আছে সমালোচনা। যদিও ওয়ানডে সংস্করণের সাম্প্রতিক অতীতটা স্যামির দলের জন্য একটু কম অস্বস্তির। নেপালের কাছে টি–টোয়েন্টি আর ভারতের কাছে টেস্ট সিরিজ হেরে এলেও গত আগস্টে ওয়ানডেতে সর্বশেষ সিরিজে ক্যারিবীয়রা হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। গত বছরের ডিসেম্বরে এই সংস্করণে বাংলাদেশকে ধবলধোলাইয়ের স্মৃতিটাও খুব বেশি পুরোনো নয়।  

উইকেট দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ (ডানে)

এর পরের সময়টাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এত আলোচনা এসেছে, সেই স্রোতে হারিয়েই গেছে সেটি। ওয়ানডে সংস্করণে দুঃসময়টা বাংলাদেশের জন্য লম্বা হতে শুরু করেছে তখন থেকেই। কয়েক দিন আগে আফগানিস্তানের কাছে ধবলধোলাই হওয়াটা যার সর্বশেষ ঘটনা। এই ধাক্কা এতটাই প্রবলভাবে লেগেছে যে আফগানিস্তান সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে দুয়োধ্বনি শুনতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। ক্রিকেটার মোহাম্মদ নাঈম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুয়োধ্বনি নিয়ে অনুযোগ জানাতে গিয়ে উল্টো তোপের মুখে পড়েছেন।
এসব নিয়ে কাল কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স ক্রিকেটারদের সামাজিক মাধ্যমে জবাব না দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি টেনে এনেছেন ভিন্ন আরেক প্রসঙ্গও, ‘জাকের আলীকে নিয়ে এমন (বর্ণবাদী) মন্তব্যে আমি খুবই বিরক্ত। এটা ভালো কিছু না।’ বাইরের এত আলোচনা দূরে রেখে বাংলাদেশের সামনে মূল চ্যালেঞ্জটা এখন ওয়ানডের ছন্দটা খুঁজে পাওয়া। টানা চার ওয়ানডে সিরিজ হারের পর এই সংস্করণে খেলাটাই বাংলাদেশ ভুলে গেছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটাও জরুরি হয়ে পড়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দলের জন্য।

মিরপুরের উইকেট কেমন হবে, তা নিয়ে কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামির

এর জন্য মিরপুরের চেয়ে ভালো মঞ্চ বাংলাদেশ হয়তো পেত না! খেলাটা মিরপুরে বলেই ভয় আছে প্রতিপক্ষ কোচ স্যামির মনেও, ‘তারা ঘরের মাঠে খেলবে। এই কন্ডিশনটা সম্পর্কে খুব ভালো জানে। তাদের হারাতে হলে আমাদের অনেক ভালো খেলতে হবে।’ তেমন কিছু করার পথে চিন্তাটা বেশি ব্যাটিং নিয়েই। এ বছরের আট ওয়ানডের মাত্র একটিতে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে তো ১০০ রানই পার করতে পারেনি।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সংকটটা কাল আরও নির্দিষ্ট হয়েছে সিমন্সের কথায়, ‘বাংলাদেশের জন্য মিডল অর্ডারটাই সবচেয়ে বেশি চিন্তার। আমরা ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কাজ করছি, এই সময়টায় কী করতে হবে, তা নিয়ে।’ সেই সংকট কাটাতে স্কোয়াডে ডাক পাওয়া মাহিদুল ইসলামের অভিষেক হতে পারে আজ। এতে মিডল অর্ডারের সংকট হয়তো কাটবে, কিন্তু ওয়ানডেতে কি বাংলাদেশ চেনা ছন্দটা খুঁজে পাবে!