খুব অল্প কথায় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা গল টেস্টের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দিলেন রাসেল আরনল্ড। তাঁর পক্ষে কাজটি কঠিনও নয় অবশ্য।
শ্রীলঙ্কা দলের সাবেক এই ক্রিকেটার নিজে গলে সাতটি টেস্ট খেলেছেন। চলতি গল টেস্টটাও দেখছেন ধারাভাষ্যকারের দৃষ্টিতে। আজ টেস্টের চতুর্থ দিনে ধারাভাষ্য বিরতিতে শ্রীলঙ্কার হয়ে ৪৪টি টেস্ট, ১৮০টি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলা সাবেক অলরাউন্ডারের সঙ্গে কথা হলো এই প্রতিবেদকের।
ধারাভাষ্য কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে আরনল্ড বলছিলেন এই টেস্ট নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণের কথা, ‘আমি বলব, ম্যাচটি খুবই আকর্ষণীয় এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে। যে দল একটু অসাবধান হবে, তারাই পিছিয়ে পড়বে। আমরা গলে বহুবার দেখেছি, ম্যাচ কিছুক্ষণ নিষ্প্রাণ থাকে আবার হঠাৎ করেই প্রাণ ফিরে পায়। এই ম্যাচটিও তেমনই মনে হচ্ছে।’
শ্রীলঙ্কার ঘরের মাঠে টেস্টটাকে পঞ্চম দিনের আগে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার কৃতিত্বটা বাংলাদেশকেই দিতে হবে। প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রান করার পর ১০ রানের লিড নেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে বোলারদেরও। দ্বিতীয় ইনিংসেও এরই মধ্যে বাংলাদেশ দেখিয়েছে টেস্টটা তারা জিততেই খেলেছে।
বাংলাদেশের প্রশংসা শোনা গেল আরনল্ডের মুখেও, ‘তারা খুবই ভালো খেলছে। দলটা শৃঙ্খলাবদ্ধ থেকেছে, নিজেদের সীমার মধ্যে ভালো খেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফর্ম ভালো না থাকা, আত্মবিশ্বাস কম থাকা—এসব মাথায় রাখলে শান্ত (নাজমুল) ও মুশফিকের ইনিংস সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। ভালো ব্যাটিং কন্ডিশনে তারাই বড় ইনিংসের ভিত গড়েছে।’
বোলারদের কথাও আরনল্ড বলেছেন আলাদা করে, ‘বোলিংয়ে পরিকল্পনায় অটল থেকেছে বোলাররা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখনো বেশ ভালোভাবেই ম্যাচে আছে।’
শ্রীলঙ্কা দলে পুরোনো মুখের বিদায় এবং নতুন মুখের আগমনের সময় এখন। গলে এই টেস্ট দিয়েই যেমন টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। আবার এই টেস্টেই অভিষেক হয়েছে ওপেনার লাহিরু উদারা ও স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকের।
আরনল্ডের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নতুনদের মধ্যে কাকে তাঁর কাছে বেশি সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে। উত্তর দিতে গিয়ে শুরুতেই বলে নিলেন, ‘যারা নতুন, তাঁরা কিন্তু বয়সে তরুণ নয়।’
আরনল্ড বলেছেন, ‘তারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেক বছর খেলছে। লাহিরু উদারা, ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান করে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে। দেখা যাক, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কতটা উজাড় করে দিতে পারে। আর বোলিংয়ে আসিতা ফার্নান্দো তো অনেক দিন ধরেই আছে। এখন সময় এসেছে, সে যেন ফাস্ট বোলিং ইউনিটের নেতৃত্ব নেয়।’
একটা সময় ছিল যখন টেস্ট ক্রিকেট ছিল বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটারদের খেলা। বোলার, ব্যাটসম্যান সবাই যাঁর যাঁর জায়গায় বিশেষজ্ঞ। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ধরন বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বদল আসছে এই জায়গাতেও। এখন অলাউন্ডারদেরও আলাদা কদর টেস্ট দলে। গল টেস্টের শ্রীলঙ্কা দলেই যেমন এ রকম চারজন ক্রিকেটার আছেন।
ব্যাটসম্যান কাম অফ স্পিনার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা নিজে তার মধ্যে একজন। এ ছাড়া কামিন্দু মেন্ডিস, মিলান রত্নায়েকে এবং অভিষেক টেস্ট খেলা থারিন্দু রত্নায়েকেও ব্যাটিং-বোলিং দুই জায়গাতেই নির্ভরতা দিতে পারেন।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে রাসেল আরনল্ডের দর্শন একটু ভিন্ন বলেই মনে হচ্ছে। এ ধরনের ক্রিকেটাররা দলের ভারসাম্যের জন্য ভালো বলে মন্তব্য করলেও তিনি বলেছেন, ‘দলের ভারসাম্যের জন্য এটা অবশ্যই উপকারী। তবে আমি মনে করি, একটি দল গড়া উচিত ছয়জন ভালো ব্যাটসম্যান ও কয়েকজন আক্রমণাত্মক স্পেশালিস্ট বোলারকে নিয়ে। যদি কোনো বোলার ব্যাটিংয়ে ভালো হয়, সেটা বাড়তি পাওয়া। কিন্তু শুধু এমন খেলোয়াড়দের দিয়ে দল গঠন করলে, যারা ‘এটা-সেটা সামান্য’ পারে—তাতে ম্যাচ জেতা কঠিন। স্পেশালিস্টদের গুরুত্ব এখনো অনেক।’
পরিবর্তনের এই সময়টাতে যে শ্রীলঙ্কা দলে অনেক আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান দেখা যাচ্ছে এবং সেটার প্রয়োজনও আছে, তা অবশ্য মানেন তিনি। তাঁদের নিয়ে আরনল্ড বেশ আশাবাদীও, ‘শ্রীলঙ্কা দলে আরও আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান দেখা যাচ্ছে এখন। বিশেষ করে মিডল অর্ডার অনেক শক্তিশালী। অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রতিভার ঘাটতি নেই। যারা জায়গা পাওয়ার জন্য লড়ছে, তারা যেন এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে—এটাই প্রত্যাশা।’
সঙ্গে অবশ্য এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, আধুনিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে ক্রিকেটারদের আধুনিক ধারার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, ‘খেলার ধরনটাই এখন বদলে গেছে। খেলোয়াড়েরা চাপ সামলানোর নতুন নতুন পদ্ধতি শিখছে, নিজেদের প্রকাশ করার ধরন বদলেছে। এই সময়ের ক্রিকেটে টিকে থাকতে খেলোয়াড়দের আধুনিক ধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়, স্কিলে উন্নতি আনতে হয়। টেস্টেও তাই এখন আমরা আরও ইতিবাচক ক্রিকেট দেখছি, শুধু রক্ষণাত্মক মানসিকতা নয় বরং ইনটেন্ট নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে সবাই।’