ফাইনাল জেতানোর পর সিকান্দার রাজাকে কাঁধে তুলে দেন এক সতীর্থ।
ফাইনাল জেতানোর পর সিকান্দার রাজাকে কাঁধে তুলে দেন এক সতীর্থ।

বার্মিংহামে ডিনার, দুবাইয়ে সকালের নাশতা, রাতে লাহোরে চ্যাম্পিয়ন—রাজার রোমাঞ্চকর ২৪ ঘণ্টা

শনিবার সন্ধ্যায় ছিলেন নটিংহামে। ইংল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে এক টেস্ট সিরিজের তৃতীয় দিন সেটা। ম্যাচ চার দিনের হলেও তৃতীয় দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হেরে বসে জিম্বাবুয়ে। আর এখান থেকেই শুরু হয় সিকান্দার রাজার জীবনের উত্তেজনাপূর্ণ ২৪ ঘণ্টার, যেখানে আছে একের পর এক গাড়ি ও বিমানযাত্রা, ইংল্যান্ড থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি শহর ঘুরে পাকিস্তানে গমন আর টসের ১০ মিনিট আগে পিএসএল-ফাইনালে প্রবেশ।

যে ঘটনার বর্ণনায় রাজা বলেছেন, ‘ডিনার করেছি বার্মিংহামে, সকালের নাশতা দুবাইয়ে, আবুধাবিতে লাঞ্চ আর পাকিস্তানে রাতের খাবার।’

নটিংহামের ট্রেন্টব্রিজে জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট খেলা শেষে রাজার রোমাঞ্চকর যাত্রা শুরু। লাহোরে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য প্রথমে এক বন্ধুর গাড়িতে করে পৌঁছান কাছের বার্মিংহাম বিমানবন্দরে। বিজনেস শ্রেণির টিকিট ছিল না। ইকোনমি টিকিট নিয়েই রাজা দুবাইয়ের ফ্লাইটে চড়ে বসেন।

শনিবারও ট্রেন্টব্রিজে জিম্বাবুয়ের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং করেছেন সিকান্দার রাজা।

দুবাইয়ে নেমে গাড়িতে রওনা হন আবুধাবির দিকে। কারণ, সেখান থেকেই লাহোরের বিমান আগে পাওয়া যাবে। এরপর আবুধাবি থেকে রওনা দিয়ে লাহোর বিমানবন্দরে নামার পর আবার স্টেডিয়ামের উদ্দেশে গাড়িতে যাত্রা। রাজা যখন গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের পথে, তখন টস করতে নেমে লাহোর অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি জানান, একাদশে আছেন রাজা।

সময়মতো পৌঁছাতে পারবেন কি না, এই সংশয়ে লাহোর দুটি একাদশ প্রস্তুত করে রেখেছিল। একটি রাজার নামসহ, আরেকটি তাঁকে বাদ দিয়ে সাকিব আল হাসানের নাম দিয়ে। শেষ পর্যন্ত রাজার স্টেডিয়ামের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় তাঁকেই দলে রাখে লাহোর।

নটিংহাম থেকে লাহোর স্টেডিয়াম পর্যন্ত গাড়ি আর বিমানে দৌড়ঝাঁপের ঘটনা ম্যাচ শেষে রাজার মুখে উঠে এসেছে এভাবে—‘(টেস্টে) পরশু (শুক্রবার) ২৫ ওভার বোলিং করেছি। গতকাল (শনিবার) ২০ ওভার ব্যাটিং করেছি। এরপর ডিনার করেছি বার্মিংহামে, সকালের নাশতা দুবাইয়ে। গাড়ি ড্রাইভ করে আবুধাবি পৌঁছে করেছি লাঞ্চ। এরপরের ফ্লাইটে এসে পাকিস্তানে এসে ডিনার। আমার মনে হয় পেশাদার ক্রিকেটারদের জীবন এমনই। আর আমি এমন একটি জীবনের অংশ হতে পেরে সত্যিই নিজেকে ধন্য ও সৌভাগ্যবান মনে করি।’

ইংল্যান্ড থেকে আরব আমিরাত হয়ে লাহোরে নামার কিছুক্ষণ পরই ফিল্ডিংয়ে নেমে পড়েন সিকান্দার রাজা। করেন ৪ ওভার বোলিংও।

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত হলেও রাজার জন্ম পাকিস্তানেই। পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে বেড়ে ওঠা রাজা এবারের পিএসএলে শুরু থেকেই লাহোর দলে ছিলেন। তবে জিম্বাবুয়ে দলের ইংল্যান্ড সফর থাকায় চলে গিয়েছিলেন সেখানে। রাজা নেই বলে বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজকে বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে দলে নিয়েছিল লাহোর। যদিও গতকালের ফাইনালসহ কোনো ম্যাচেই মিরাজ একাদশে ছিলেন না।

তবে রাজাকে ফিরে পাওয়াটা যে লাহোরের জন্য কতটা কাজে লেগেছে, সেটা ফাইনালের শেষ দিকেই বোঝা গেছে। কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সের ২০১ রান তাড়ায় রাজা যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, দলের তখনো ২০ বলে ৫৭ রান দরকার। মোহাম্মদ আমিরকে প্রথম বলে চার আর পরের বলে ছক্কা মেরে ম্যাচের আবহই বদলে দেন রাজা। শেষ তিন বলে যখন আট রান দরকার, তখন ফাহিম আশরাফের চতুর্থ বলে ছক্কা আর পঞ্চম বলে চার মেরে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের শিখরে।

ম্যাচ জিতিয়ে সিকান্দার উল্লাস।

পুরো লাহোর দল ৭ বলে ২২ রান করা রাজাকে ঘিরে উল্লাস করতে করতে কাঁধেই তুলে ফেলে। ম্যাচের পর রাজা বলেন, ‘আমি এখানে একটা দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। খোদা না করুন, যদি আমরা ম্যাচটা হেরেও যাই, অন্তত আমার মন বুঝবে যে আমি আমার দলের সঙ্গে ছিলাম। আমি জানি, লাহোর খুব করে আমাকে এখানে চেয়েছে। শেষ ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় আমাকে এখানে আনতে মালিক এবং অধিনায়কেরা যেভাবে চেষ্টা করেছেন, সেটা বললে অবিশ্বাস্য শোনাবে।’