এক সপ্তাহ পর আবারও মুখোমুখি হচ্ছে ভারত–পাকিস্তান
এক সপ্তাহ পর আবারও মুখোমুখি হচ্ছে ভারত–পাকিস্তান

পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার ম্যাচ: এবার কি হাত মেলাবে ভারত

‘মাঠে কিছুই খেলতে পারছে না, অথচ বাইরে ওদের নাটকের শেষ নেই।’

বিরক্তি নিয়েই কথাটা কাল বলছিলেন পাকিস্তানের এক সাংবাদিক। এমনিতেও কে, কোথায় কী বলে ফেললেন; ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে এখন এ নিয়েই থাকে সব উত্তেজনা। মাঠের লড়াইয়ের ঝাঁজ প্রায় শূন্য।

বাইরের এসব আলাপ-আলোচনাই বাঁচিয়ে রেখেছে ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট লড়াইয়ের আঁচ। নয়তো সব সংস্করণ মিলিয়ে (ভারত–পাকিস্তান এখন মূলত সাদা বলের ক্রিকেটেই খেলছে) সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচই যেখানে জিতেছে একটা দল, এমন একটা ম্যাচ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে এত আগ্রহ কেন!

একটু ভুল বলা হয়ে গেল কি না, কে জানে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিমই হয়তো আপত্তি জানাতে পারেন কথাটাতে। এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক দেশটার অধিনায়ক তো স্পষ্ট করেই বলেছেন, ভারত–পাকিস্তানের এসব ঘটনা নিয়ে তাঁদের কোনো আগ্রহই নেই! অথচ তিনি এমন একটা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে দলটার সবাই ভারত অথবা পাকিস্তানে জন্ম নিয়েছেন।

তাঁর আগ্রহ না থাকলেও ভারত আর পাকিস্তান মিলিয়ে ম্যাচটা কাভার করতে দুবাইয়ে এসেছেন ১২০ জন সাংবাদিক। কথার লড়াইয়েও উত্তেজনাটা বেঁচে থাকলে তাঁদের খুশিই হওয়ার কথা। কিন্তু এমনই নিয়তি, সেই সুযোগটাও তাঁরা ঠিকঠাক পাচ্ছেন না।

আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ হচ্ছে, সেটির আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেই রাজি হয়নি পাকিস্তান। কাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় ছিল তাঁদের সংবাদ সম্মেলন। এক ঘণ্টা আগে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন না। কোনো কারণ পিসিবি বা এসসি জানায়নি।

১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে টসের সময় হাত না মেলানো কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়াটা রীতি। কিন্তু এবারের এশিয়া কাপেই এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তা ভেঙেছে পাকিস্তান। ভারতের ক্রিকেটাররা পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সালমান আগাদের সঙ্গে হাত না মেলানো থেকে শুরু নাটকীয়তার।

সেই ম্যাচের রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে মেইল চালাচালি করতে করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠেই সময়মতো আসেনি পাকিস্তান। তাতে একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচই যেখানে শুরু হয়েছে এক ঘণ্টা পর, সেখানে সংবাদ সম্মেলনে না আসা আর এমন কী!

পাকিস্তানের কেউ না এলেও ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ঠিকই এসেছিলেন। এবারের এশিয়া কাপের রীতি হলো এক দিনের বিরতিতে কারও ম্যাচ থাকলে একসঙ্গে ম্যাচ–পরবর্তী ও ম্যাচ–পূর্ববর্তী দুটি সংবাদ সম্মেলনই করে ফেলা। আবুধাবিতে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচের পর তাই পরশুই কথা বলেছেন সূর্যকুমার।

যথারীতি সেখানেও বারবার ঘুরেফিরে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের কথাই বেশি এসেছে। শুরুতেই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, মাঠের বাইরের এত ঘটনাপ্রবাহ থেকে ক্রিকেটারদের দূরে থাকা সম্ভব হয় কি না। সূর্যকুমার যে উত্তর দিলেন, তা শুনে সংবাদ সম্মেলনকক্ষে একটা হাসির রোলই পড়ে গেল, ‘রুমের দরজা বন্ধ করে দাও, মুঠোফোন বন্ধ রাখো আর ঘুমাও।’

কিন্তু তা তো আর চাইলেই সব সময় সম্ভব হয় না। বন্ধুবান্ধব থাকে, বাইরেও বের হতে হয় ক্রিকেটারদের। সে বাস্তবতা যে সূর্যকুমার জানেন না, তা–ও নয়। এ জন্য সতীর্থদের জন্য একটা পরামর্শও আছে তাঁর, ‘বাইরে থেকে কিছু জিনিস নেওয়া যায়, যেটা ভালো। কেউ একটা ভালো পরামর্শও দিতে পারে, যেটা ম্যাচে ও মাঠে সাহায্য করতে পারে।’

মাঠে এমনিতে ভালো অবস্থানে আছে সূর্যকুমারের দলই। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে তারা। তাদের বিপক্ষে অবশ্য শেষ পাঁচটি ম্যাচেও জয়ী দলের নাম ভারত। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতের সামনে প্রতিরোধ গড়তে না পারা পাকিস্তান পরের দুই ম্যাচ জিতে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের লড়াইটা একপেশেই। এখন পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ে আগের মতো আনন্দ পাওয়া যায় কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ভারত অধিনায়কের কাছে। মজা করার সহজাত ক্ষমতা তাঁর আছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও একবার হাসির খোরাক দিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক উত্তর দিলেন, ‘আমি তো তখন খেলিনি, তাই বলতে পারব না…।’

এবারের এশিয়া কাপে প্রথম দেখায় জিতেছে ভারত, আজ কোন দল?

পরে তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সবগুলো ম্যাচই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান ম্যাচে যদিও একটা জিনিস আলাদা করেই দেখেন সূর্যকুমার—গ্যালারি ভরা দর্শক। তেমন হলে তাঁর সতীর্থদের প্রতি একটা বার্তাও থাকে, ‘তখন সবাইকে বলি—চলো ভাই, বিনোদনের সময় চলে এসেছে, এতগুলো মানুষ এসেছে, সবাইকে বিনোদন দিতে হবে।’

মাঠের বাইরের চেয়ে ভেতরে লড়াইয়ের আবহ থাকলেই যে দর্শক বিনোদনটা ভালো পান—তা হয়তো জানা সূর্যকুমারেরও। কিন্তু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে তা তো দিন দিন নাই–ই হয়ে যাচ্ছে, বড় হয়ে উঠছে রাজনৈতিক উত্তাপ। সেই উত্তাপ এরই মধ্যে এবারের এশিয়া কাপে পাওয়া হয়ে গেছে। আজ মাঠের খেলার উত্তাপটা কি ফিরবে!