
প্রশ্নটা বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনলেন ড্যারেন স্যামি। তবু শুরুতে বললেন, ‘আপনার প্রশ্নটা বোঝার চেষ্টা করছি…।’
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে স্যামি যে প্রশ্নটা ‘বোঝার চেষ্টা’ করছিলেন, সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে। এটি আইসিসির একমাত্র পূর্ণ সদস্য, যা একক দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। ক্যারিবীয় অঞ্চলের বেশ কিছু দেশ নিয়ে গড়ে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঠে ও মাঠের বাইরের বিষয়ে যেভাবে পিছিয়ে পড়েছে, তাতে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণা’টা ব্যর্থ কি না—এমন প্রশ্নই ছিল স্যামির কাছে।
৪১ বছর বয়সী স্যামি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন এক দশক, অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। এখন একই দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে। এই সময়ে এসে ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের’ ধারণাটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আবেগাপ্লুত স্যামি উত্তর দিলেন এভাবে—‘আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধারণাটাই ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ব্র্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এটারই (সাফল্যের) প্রতিনিধিত্ব করে। আমি আগেও বলেছি, যখন আমরা আধিপত্য দেখিয়েছি, সবাই চেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলুক। সব দলই একটা (ভালো ও খারাপ) সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, আমরা এখন যাচ্ছি (খারাপটা)।’
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ১০টি দেশ ও ৫টি অঞ্চলের ক্রিকেটাররা একসঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নামে খেলেন। এখন দেশগুলোকে ভাগ করে দিয়ে আইসিসির সদস্য করার কথা উঠছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে যাওয়া ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা নাকি ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ নামের প্রতি ‘টান’ অনুভব করেন না।
এই ওয়েস্ট ইন্ডিজই ওয়ানডে সংস্করণের প্রথম দুটি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, দুবার জিতেছে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। ’৭০ থেকে ’৯০ এর দশকে এই দলটি ছিল টেস্ট ও ওয়ানডের প্রতাপশালী দল।
আগামীকাল ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ সামনে রেখে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্যামির কথায় উঠে এল ক্যারিবীয় দলের ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণাটা কখনো ব্যর্থ হবে না। আমি জানি, খেলাটাতে আমরা কত ইতিহাস গড়েছি। একটা সফল ব্র্যান্ড হতে গেলে কী লাগে তা আমি বুঝি। সেটাই এই প্রজন্ম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ফেরানোর চেষ্টা করছে।’
অনেক দিন ধরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কঠিন সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে। মাঠের ক্রিকেটে পারফরম্যান্স নেই। অর্থনৈতিকভাবেও স্বস্তি নেই। ক্রিকেটার যাঁরা উঠে আসছেন, তাঁরাও ছুটছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পথে।
এসব সংকট মাথায় রেখেই স্যামি বলেছেন, ‘আমাদের এটা করার পথে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। সেটা অর্থনৈতিকভাবে আছে, আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমরা বলেছি। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ধারণা কখনো ব্যর্থ হবে না। এটার একটা বড় ইতিহাস ও উত্তরাধিকার আছে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের অনেককেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রেরণা জুগিয়েছে। আমার মাথায় কখনোই এটা কাজ করবে না যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ব্র্যান্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে।’