দরজায় কড়া নাড়ছে বিপিএল। নানা শঙ্কা, আলোচনা আর সমালোচনা পেছনে ফেলে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে মাঠের লড়াই। দলগুলোও কয়েক দিন ধরে অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে নিজেদের মতো করে। আজ–কালের মধ্যেই যোগ দিতে শুরু করবেন বিদেশি ক্রিকেটাররাও।
বিপিএল শুরুর আগে দলগুলোর শক্তি আর দুর্বলতা খোঁজার চেষ্টা এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনে।
সিলেটের টপ অর্ডার বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশ দলের নিয়মিত ওপেনার পারভেজ হোসেন আছেন। তাঁর সঙ্গে থাকছেন রনি তালুকদার ও জাকির হাসান। বিদেশিদের মধ্যে আছেন পাকিস্তানের সাইম আইয়ুব। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই খেলতে পারলে পারভেজ ও সাইমকে নিয়ে দারুণ এক ওপেনিং জুটি পাবে সিলেট।
এ ছাড়া আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুমিনুল হকের বিপিএলে ওপেন করার অভিজ্ঞতা আছে। তাঁরা খেলতে পারেন তিন বা চারে। সাইমও তিনে নামতে স্বচ্ছন্দ। সব মিলিয়ে টপ অর্ডারে বিকল্পের অভাব নেই। সিলেটের শক্তির বড় জায়গাটা এখানেই।
স্পিন বিভাগে খুব একটা রহস্য নেই, তবে আছে পরীক্ষিত নাম। টি–টোয়েন্টিতে নাসুম আহমেদ বাংলাদেশের অন্যতম কার্যকর স্পিনার, বিশেষ করে নতুন বলে। মিরাজ টি–টোয়েন্টি দলে নিয়মিত না হলেও নিজের কাজটা জানেন। আছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলী। এ ছাড়া আফিফ তো আছেনই, সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার রাহাতুল ফেরদৌস। গত মৌসুমে বিপিএলে চট্টগ্রামের হয়ে ৩ ম্যাচে ২ উইকেট নিয়েছিলেন রাহাত।
পেস বিভাগটাও মন্দ নয়। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির পুরো টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে আক্রমণটা আরও ধারালো হবে। তাঁর সঙ্গে থাকবেন খালেদ আহমেদ, যিনি গত বিপিএলে নিয়েছিলেন ২০ উইকেট। দীর্ঘদিন চোটে ভোগার পর ফেরা ইবাদত হোসেনের জন্যও এটা হতে পারে নিজেকে নতুন করে মেলে ধরার মঞ্চ। চোট কাটিয়ে ফিরলেও এখনো সেরা ছন্দে ফিরতে পারেননি তিনি। গত মৌসুমে বরিশালের হয়ে ৫ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। আছেন রুয়েল মিয়া ও শহীদুল ইসলাম। বিদেশি পেস বোলিং অলরাউন্ডারও আছেন তিনজন।
বিদেশি ক্রিকেটার বাছাইয়ে সিলেট বেশ গোছানো কাজ করেছে। ব্যাটিংয়ে সাইম, পেসে আমির—দুজনই বড় নাম। অলরাউন্ডার বিভাগে আছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মঈন আলী, ইথান ব্রুকস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। মঈন ছাড়া বাকি তিনজনই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ম্যাথিউস সেরা সময়টা পেছনে ফেলে এসেছেন ঠিকই, তবে বাকি তিনজন এখনো ম্যাচ ঘোরানোর ক্ষমতা রাখেন।
আফিফ ও মিরাজ মিডল অর্ডারে খেললে স্থিরতা আসবে, তবে দুজনই একই ধরনের ব্যাটসম্যান। উইকেটে এসে শুরুতে সময় নেন, তারপর হাত খোলেন। আফিফ বিপিএলে নিজের সর্বোচ্চ ৩৭০ রান করেছিলেন ২০১৯–২০ মৌসুমে, ওপেনার হিসেবে। মিরাজও ওপেনার হিসেবেই বেশি সফল। সর্বশেষ মৌসুমে খুলনার হয়ে ওপেনার হিসেবে করেছেন নিজের বিপিএল–সেরা ৩৫৫ রান।
সব মিলিয়ে টপ অর্ডারে একটা জটলা আছে। প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে কে খেলবেন মিডল অর্ডারে? এই সমস্যার সমাধান আসতে পারে বিদেশি অলরাউন্ডারদের হাত ধরে। আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মঈন আলী, ইথান ব্রুকস কিংবা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস থাকলে দ্রুত রান তোলার সুযোগ থাকবে। তখন আফিফ–মিরাজরা একটু সময় নিলেও বড় সমস্যা হবে না। তবে প্রশ্ন একটাই—বিদেশি ক্রিকেটাররা পুরো মৌসুম থাকবেন তো?
আরিফুল ইসলাম—এবারই সময়।
অনেক দিন ধরেই বিসিবি নির্বাচকদের নজরে আছেন ২১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ১৩টি টি–টোয়েন্টিতে করেছেন ৩৫১ রান। সর্বশেষ ন্যাশনাল টি–টোয়েন্টি লিগে ৬ ম্যাচে রান ১৩৮। সংখ্যাটা খুব আহামরি নয়। কিন্তু এটা যে তাঁর আসল রূপ নয়, সেটাই প্রমাণের মঞ্চ হতে পারে বিপিএল। এর আগে কখনো বিপিএলে ম্যাচ খেলেননি আরিফুল। নতুন গল্প লেখার সুযোগটা তাঁর সামনেই।
অধিনায়ক: মেহেদী হাসান মিরাজ
নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, পারভেজ হোসেন ইমন, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, আফিফ হোসেন, রনি তালুকদার, জাকির হাসান, রুয়েল মিয়া, আরিফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, শহিদুল ইসলাম, রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদ, তৌফিক খান তুষার, মুমিনুল হক, সাইম আইয়ুব (পাকিস্তান), মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান), আজমতউল্লাহ ওমরজাই (আফগানিস্তান), মঈন আলী (ইংল্যান্ড), ইথান ব্রুকস (ইংল্যান্ড), অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস (শ্রীলঙ্কা)।